রিল বানাচ্ছেন পড়ুয়ারা। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু সেই রিল যদি সংস্কৃতে হয়? কেউ বুঝুক না বুঝুক, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা এমনটাই করছেন। নেপথ্যে কী কারণ জানেন? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ঘোরা, খাওয়া এমনকি ভোট দেওয়া, সবকিছুর রিল বানানো চাই। সোশাল দুনিয়ায় এমনটাই ট্রেন্ড। এক্ষেত্রে কোনও ব্যাকরণ না নিয়ম মানারও বালাই নেই। যার যেভাবে ইচ্ছা, ক্যামেরা তাক করে বলতে থাকো। সঙ্গে জুড়ে দাও মানানসই গান। কোন ভাষায় কথা বলা হবে, তারও নির্দিষ্ট কোনও নিয়ম নেই। তাই বলে সংস্কৃতে রিল?
:আরও শুনুন:
১৭ ছুঁলেন ইয়ামাল, তবুও কি খেলতে পারবেন ইউরো ফাইনালের এক্সট্রা টাইমে?
শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি! লখনউ-এর কেন্দ্রীয় সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা এমনটাই করছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষই সেই কাজে উৎসাহ যোগাচ্ছে। এমনকি রিল, ভ্লগ কীভাবে তৈরি করতে হবে সেই প্রশিক্ষনও দেওয়া হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়য়ের তরফেই। তবে এইসব রিল যেন কোনওভাবেই কারও ভাবাবেগে আঘাত না করে সেদিকে কড়া নজর রাখছে কর্তৃপক্ষ। সাধারণত নিজের পছন্দের রিল বানাতে গিয়ে অনেকেই বিতর্কিত মন্তব্য করে বসেন। কিংবা এমন কিছুর ভিডিও দেখানো হয় যা অনেকেরই কাছেই অপসংস্কৃতি হিসেবে মান্যতা পায়। মোটের উপর কেউ কেউ ধরেই নেন, রিল দেখা মানেই সময় নষ্ট। এর থেকে শেখার কিছু নেই। আর এই ধারণা বদলাতেই সংস্কৃতে রিল তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে লখনউ-এর বিশ্ববিদ্যালয়।
:আরও শুনুন:
গোটা বিশ্বে প্রথমবার! ভারতের এই শহরে আইনত নিষিদ্ধ হচ্ছে আমিষ
আসলে, পৃথিবীর প্রাচীনতম ভাষাগুলির মধ্যে একটি সংস্কৃত। আদি ভাষা হলেও সে আসলে লেখ্য ভাষা। কথ্য ভাষা হয়ে ওঠার প্রয়াস বা দায় কোনওদিনই ছিল না তার। আর মুখের ভাষা হিসেবে যে তার চলন খুব একটা সহজ নয়, তা-ও এক কথায় মানবেন সকলেই। স্বাভাবিক ভাবেই মন্ত্রপাঠ বা এই ধরনের কাজ ছাড়া সংস্কৃত নিয়ে আগ্রহও দেখান না অনেকেই। তাতে ভাষার গুরুত্ব কোথায় গিয়ে কমতে থাকে। এই সমস্যা মেটাতেই আধুনিক পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়। পড়ুয়ারা সংস্কৃতেই এমন স্বচ্ছন্দ্য নিয়ে কথা বলছেন, দেখে বোঝার উপায় নেই এই ভাষা এতটা কঠিন। শুধু রিল নয়, সংস্কৃতেই তৈরি হচ্ছে ভ্লগ। যেখানে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে নিজেদের মত প্রকাশ করছে পড়ুয়ারা। তবে স্রেফ সংস্কৃত বলতে জানলেই হবে না, রিল তৈরির খুঁটিনাটিও জানতে হবে ভালমতো। আর সেই প্রশিক্ষণ পড়ুয়াদের দিচ্ছেন, বলিউডের কলাকুশলীরা। পরিচালক, চিত্রনাট্যকার কিংবা অভিনেতারাও বিশেষ প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন এই পড়ুয়াদের। পাশাপাশি শেখানো হচ্ছে ভিডিও এডিটিং, ফটোগ্রাফি, আরও অনেক কিছুই। সোশাল মিডিয়া সম্পর্কেও বিস্তারিত ভাবে জানছেন পড়ুয়ারা। কীভাবে কোন ট্যাগ বা কোড ব্যবহার করলে রিল বেশি মানুষের কাছে পৌঁছবে সেইসবও শেখানো হচ্ছে তাঁদের। নতুন এই উদ্যোগে শামিল হয়ে বেজায় খুশি সংস্কৃত পড়ুয়ারাও। তাঁদের মতে, অনেকেই এই বিষয়টি নিয়ে বেজায় আতঙ্কে ভোগে। বেশিরভাগি আগ্রহ দেখায় না, কঠিন ব্যাকরণের ভয়ে। আধুনিক রিল বা ভ্লগে সংস্কৃতের ব্যবহার সেই আতঙ্ক কিছুটা হলেও কমাবে বলেই মনে করছেন তাঁরা। যদিও সবাই বিশেষ প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পাননি। প্রায় ৪০০-রও বেশি পড়ুয়াদের মধ্যে থেকে বেছে নেওয়া হয়েছে ৩৭ জনকে। এঁরাই আপাতত নিয়মিত সংস্কৃতে রিল বানাচ্ছেন। আগামীদিনে এই ধরনের রিলের সংখ্যা আরও বাড়বে। সুতরাং যে কোনও দিন সোশাল মিডিয়া স্ক্রল করতে করতে চোখে পড়তেই পারে এমন রিল যেখানে সবটাই হচ্ছে শুদ্ধ সংস্কৃত উচ্চারণে।