নিজেকে নিজেই বিয়ে করতে চেয়ে খবরের শিরোনামে এসেছিলেন গুজরাতের তরুণী ক্ষমা বিন্দু। এহেন বেনজির কাণ্ড দেখে হইচই পড়ে গিয়েছিল সকলের মধ্যে। এমন কাজ সংস্কৃতিবিরোধী, এই মর্মে ধেয়ে এসেছিল ফতোয়াও। কিন্তু আদতে কি ‘সোলোগ্যামি’ তথা নিজেকে বিয়ে করার মতো ঘটনা এই প্রথম ঘটল? নাকি এর কোনও ধারাবাহিক ইতিহাস রয়েছে? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
অবশেষে বিয়েটা সেরেই ফেললেন তরুণী। বাধা এসেছিল বিভিন্ন দিক থেকেই। পরিবার পরিজনদের তো খানিক আপত্তি ছিলই। তা ছাড়া সমস্ত আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা করতেও রীতিমতো বেগ পেতে হয়েছিল। এমনকি এই খবর জানাজানি হওয়ার পরে এমন বিয়েকে হিন্দু ধর্মের বিরোধী বলে তোপ দেগেছিলেন এক বিজেপি নেত্রী। কিন্তু এই সবকিছু পেরিয়ে ভালবাসাই জিতে গেল অবশেষে। অন্য কাউকে নয়, নিজেকে ভালবেসে নিজেকেই বিয়ে করলেন গুজরাটের ২৪ বছরের তরুণী ক্ষমা বিন্দু।
আরও শুনুন: স্রেফ ঘরকন্না করা মহিলার ধারণাকে বাউন্ডারির ওপারে পাঠিয়েছিলেন মিতালি
পুরোহিতের উপস্থিতিতে প্রথামাফিক অনুষ্ঠান মেনেই বিয়ে সেরেছেন ওই তরুণী। গায়ে হলুদ এবং মেহেন্দি অনুষ্ঠান থেকে সিঁদুরদান, বাদ যায়নি কোনও কিছুই। ভারতে এরকমভাবে বিয়ের ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি বলেই জানা গিয়েছে। আর সেই কারণেই এই অভিনব বিয়ে নিয়ে রীতিমতো সাড়া পড়েছিল দেশে। কিন্তু নিজেকে বিয়ে করার রীতি বা সোলোগ্যামির ঘটনা কি প্রথম ঘটালেন এই তরুণীই?
না। দেখা যাচ্ছে, ক্ষমা একা নন। সারা বিশ্ব জুড়েই একাধিক মহিলা বিশ্বাস রাখেন এই ধরনের বিয়েতে। সত্যি বলতে বিয়ে করাটা ‘সোলোগ্যামি’-র মূল কথা নয়। আসল কথা হল নিজেকে ভালবাসার মানুষের মতো করেই ভালবাসতে পারা। নিজে ঠিক যেমনটা, নিজেকে সেইভাবেই গ্রহণ করতে শেখায় এই চর্চা- এমনটাই মত তাঁদের। স্ববিবাহ আসলে তাঁদের কাছে নিজেকে ভালবাসার এক বড় উদযাপন। ভালবাসার একটি সম্পর্কে যা যা প্রত্যাশা থাকে, যে যত্ন এবং পরিচর্যা থাকে, তার সবটাই তাঁরা নিজেকেই দিতে চান। আবার নিজের প্রত্যাশা পূরণ করার জন্যেও অন্য কারও উপর নয়, নিজের উপরেই নির্ভর করতে চান তাঁরা। গুজরাটের ওই তরুণী যেমন জানিয়েছেন, তিনি প্রমাণ করতে চান, মেয়েরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। পুরুষের উপর নির্ভরশীল না হয়েও দিব্যি বাঁচতে পারেন তাঁরা। তাঁর ‘সোলোগ্যামি’ বা ‘স্ববিবাহের’ পিছনে এই উদ্দেশ্যটি রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। কানাডায় ‘ম্যারি ইওরসেলফ’ নামে সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা আলেজান্দ্রা গিল-এর মতও অনেকটা এমনই। তিনি বলেন, যে কোনও পণ্যের যেমন এক্সপায়ারি ডেট থাকে, তেমনই সমাজে মেয়েদের জন্য একটা বিয়ের বয়স ঠিক করে দেওয়া হয়। আর সেই বয়স পেরিয়ে গেলেই ওই অবিবাহিতা মহিলার দিকে অন্যদের বাঁকা চোখ কিংবা হতাশার চাহনি ভেসে আসে। বুঝিয়ে দেওয়া হয়, তিনি আদতে ব্যর্থ। এই গতে বাধা ধারণাটাকেই ভেঙে দিতে চান ‘সোলোগ্যামি’-র কথা বলা মেয়েরা।
আরও শুনুন: নিয়মনীতি বোঝাতে নয়, ‘thumb rule’ শব্দের সঙ্গে জড়িয়ে আছে কুৎসিত অত্যাচারের অনুষঙ্গ
বোঝাই যাচ্ছে, এ দেশের চোখে যতই নতুন ঠেকুক, আদতে সোলোগ্যামি বিষয়টি হঠাৎ গজিয়ে ওঠা কোনও ঘটনা নয়। ১৯৯৩ সালেই আমেরিকার এক তরুণী, লিন্ডা বেকার বিয়ে করেছিলেন নিজেকে। কেবল পাশ্চাত্যেই নয়, জাপানের মতো এশীয় দেশেও অনেকেই এই প্রথাটিকে সাদরে গ্রহণ করেছেন। এমনকি ২০২১ সালেই সোলোগ্যামি ডিভোর্সের খবরও মিলেছে। নিজেকে বিয়ে করার দেড় মাসের মাথায় অন্যের প্রেমে পড়ে বিচ্ছেদ নিয়েছিলেন ক্রিস গ্যালেরা নামে ব্রাজিলের এক মডেল। অনেকের মতেই, নিজেকে বিয়ে করার এই চর্চা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ২০০৩ সালে ‘সেক্স অ্যান্ড দ্য সিটি’ নামের মার্কিনি ধারাবাহিকটির দৌলতে। শুধু এখানেই নয়, একাধিকবার রুপোলি পর্দায় জায়গা করে নিয়েছে ‘সোলোগ্যামি’। ‘গ্লি’, ‘ডক্টর হু’-এর মতো জনপ্রিয় টেলিভিশন শোতেও দেখা মিলেছে এই প্রথাটির।