২০২০ সাল থেকে আমাদের জীবনে জাঁকিয়ে বসেছে করোনা। মাস্ক-স্যানিটাইজার-টিকা, কিছুতেই পুরোপুরি থামছে না তার বিজয়রথ। অবশেষে কি সাপের বিষে ভবলীলা সাঙ্গ হবে তার?
বাঁদরের দেহে করোনা ভাইরাসের জনন রুখে দিল এক বিশেষ প্রজাতির সাপের বিষে থাকা একটি উপাদান। আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল ‘মলিকিউলস’-এ প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে সম্প্রতি এই দাবিই করলেন ব্রাজিলের কয়েকজন গবেষক। আর সেই তথ্যই উসকে দিল জল্পনা। তবে কি এবার পাকাপাকিভাবে রেহাই মিলতে চলেছে এই নাছোড়বান্দা ভাইরাসের হাত থেকে?
আরও শুনুন: ভ্যাকসিন নিয়েও ফিরতে পারছেন না স্বাভাবিক জীবনে, Cave Syndrome নয় তো!
দীর্ঘদিন ধরেই সাপের বিষ নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে পৃথিবী জুড়ে। একদিকে তা যেমন প্রাণঘাতী, আবার জানা গেছে জটিল রোগের নিরাময়ও সম্ভব হতে পারে এই বিষ থেকেই। এই ভাবনা থেকেই গবেষণা শুরু করেছিলেন ব্রাজিলের সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক জন গবেষক। তাঁদের গবেষণার উপাদান ছিল ব্রাজিলেরই একটি বিশেষ প্রজাতির সাপ। ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আমেরিকার অরণ্যে দেখা মেলে তার। দৈর্ঘ্যে অন্তত ৬ ফুট। মারাত্মক বিষধর এই সাপের নাম জারারাকুস্সু পিট ভাইপার। করোনার বিরুদ্ধে এই সাপের বিষকে কাজে লাগানো যায় কি না, তা পরীক্ষা করার জন্য বেছে নেওয়া হয় বাঁদরের কোশ। প্রাণীকোশে প্রবেশের পর নিজের সংখ্যাবৃদ্ধি করেই সংক্রমণ ছড়ায় করোনা ভাইরাস। গবেষকরা পরীক্ষা করে দেখেন, করোনা ভাইরাসের জননকে অন্তত ৭৫ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে সাপের বিষে থাকা ওই উপাদানটি। তাঁরা জানিয়েছেন, প্রাণীকোশের ভিতর করোনা ভাইরাসের সংখ্যাবৃদ্ধিতে সাহায্য পিএল প্রো নামে একটি উৎসেচক। সেই উৎসেচকের সঙ্গেই নিজেকে জুড়ে দিতে পারে ওই সাপের বিষে থাকা অ্যামাইনো অ্যাসিডের একটি শৃঙ্খল। আর তাতেই বাজিমাত। বলতে পারেন, এক বিষের প্রভাবেই বিষ হারিয়ে ঢোঁড়া হয়ে পড়ছে ভাইরাসটি। অর্থাৎ বিষে বিষে বিষক্ষয়!
আরও শুনুন: একেই বলে স্বাস্থ্যসচেতন! মাস্ক কুড়িয়ে পেয়ে পরেও ফেলল বাঁদর, তাজ্জব নেটদুনিয়া
তবে হ্যাঁ, সাপের বিষে করোনা থেকে মুক্তির আশা দেখা মাত্রই সাপের পিছনে ছোটার কিন্তু কোনও কারণ নেই। একে তো ব্রাজিল অব্দি না পৌঁছলে সাপ বাবাজির দর্শন মিলবে না। আর যদি বা দেখা মেলেও, তার বিষ পেলেই তো হবে না। নিবন্ধটির লেখক গবেষক রাফাল গুইডো এবং জুসেপি পুওর্তো আগেভাগেই সাবধান করে রাখছেন যে, বিষয়টি অত সহজ নয়। সাপের বিষ বলে কথা! মানুষের শরীর তার কতখানি সহ্য করতে পারবে, বা আদৌ পারবে কি না, সেটাই প্রাথমিক প্রশ্ন। কীভাবে তা প্রয়োগ করা সম্ভব, ভাবতে হবে সে কথাও। আর বিজ্ঞানীরা ভাবছেন আরও এক ধাপ এগিয়ে। কথায় বলে, প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিওর। করোনা ভাইরাস শরীরে ঢুকে পড়ার পর তাকে আটকানোর বদলে তাঁরা দেখতে চাইছেন যদি ঢোকার দরজাটাই বন্ধ করে দেওয়া যায়। সুতরাং গবেষণার জল এখনও গড়াবে অনেক দূর। কিন্তু সাফল্যের আশা করতে তো বাধা নেই, তাই না?