আজকালকার ফোন নাকি এত স্মার্ট যে সে মানুষকে ক্রমশ বোকা করে তুলছে। এমন অভিযোগ প্রায়শোই শোনা যায়। স্মার্টফোনের দৌলতে স্মৃতিশক্তি কমছে- এমনটা ভাবা হলেও, সাম্প্রতিক এক গবেষণা জানাচ্ছে উলটো কথা। গবেষকদের মতে, স্মার্টফোনের ব্যবহারে স্মৃতিশক্তি কমছে না, বরং বাড়ছেই। কীভাবে? আসুন শুনে নিই।
কেউ বলেন অতিরিক্ত স্মার্টফোনের ব্যবহার অলস করে দিচ্ছে মানুষকে। আবার কারও দাবি স্মার্টফোনের প্রভাবে নাকি স্মৃতিশক্তি কমে যেতে পারে। স্মার্ট ফোন ভালো না খারাপ- সেই বিতর্কের জল গড়িয়ে যেতে পারে বহুদূর। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দাবি উঠেছে, স্মার্টফোন ব্যবহার করলে বাড়তে পারে স্মৃতিশক্তি। এমনকী বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার বিকাশ ঘটাচ্ছে মানব মস্তিষ্কের। গবেষকদের দাবি, এই আধুনিক যন্ত্র ব্যবহারের ফলে মানুষ কেবলমাত্র প্রয়োজনীয় তথ্যগুলিকেই মনে রাখছে না, তুলনামুলক ভাবে অপ্রয়োজনীয় বা অতিরিক্ত তথ্যগুলিও স্মৃতিতে রাখতে পারছে।
আরও শুনুন: তেরঙার বদলে ভারত মাতার হাতে গৈরিক পতাকা কেন? ফের বিতর্ক কর্ণাটকের বিশ্ববিদ্যালয়ে
এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগে অবশ্য বিস্তর সমীক্ষা ও পরীক্ষা করেছেন গবেষকরা। প্রায় ১৫৮ জনের উপর এই পরীক্ষা করা হয়েছিল। যেখানে অংশগ্রহণকারীদের বয়স ছিল ১৮ থেকে ৭০-এর মধ্যে। প্রত্যেককেই এক বিশেষ পদ্ধতিতে স্মৃতিশক্তির পরীক্ষা দিতে বলা হয় অর্থাৎ দেওয়া হয় মেমোরি টাস্ক। এই টাস্ক অনুযায়ী, এলোমেলো করে দেওয়া কিছু সংখ্যা নির্দিষ্ট ক্রমানুসারে তাঁদের সাজাতে বলা হয়। প্রথমে ১২টি সংখ্যার বিন্যাসে তৈরি কয়েকটি বৃত্ত দেখানো হয়। তারপর তাঁদের নির্দেশ দেওয়া হয়, সেই বৃত্তগুলিকে নির্দিষ্ট শর্ত মেনে সাজাতে। পরীক্ষাটির শেষে, কে কতগুলো বৃত্ত সঠিক ঘরে সাজাতে পারল, তার উপর নির্ভর করবে তাঁদের নম্বর। পরীক্ষায় অনেকগুলি শর্তের মধ্যে একটি ছিল এরকম যে- বৃত্তের অর্ধেক সংখ্যা সাজাতে হবে নিজের স্মৃতির উপর ভরসা করে। অর্থাৎ নিজেদের স্মৃতিতে যেটুকু থাকবে তা দিয়েই সাজাতে হবে ক্রম। আর বাকি অর্ধেক সাজানোর ক্ষেত্রে তাঁরা ডিজিটাল ডিভাইস-এর বা স্মার্টফোনের সাহায্য নিতে পারবেন। এই পরীক্ষা বা মেমোরি টাস্কের ফলাফল একেবারে আশ্চর্য করে দেয় গবেষকদের। দেখা যায়, ডিজিটাল ডিভাইসের সাহায্য নিলে মানুষের মনে রাখার ক্ষমতা বাড়ছে বই কমছে না।
আরও শুনুন: ভারতের স্বাধীনতা দিবস হিসেবে বেছে নেওয়া হল ১৫ আগস্টকে, নেপথ্যের কারণ কী?
গবেষকদের মতে, অন্য ডিভাইসের সাহায্য নেওয়ার ক্ষেত্রে মানুষ আরও বেশি সংখ্যক তথ্য মনে রাখতে পারছে। অর্থাৎ, ডিজিটাল ডিভাইসে তথ্য রেখে দিলে, মানুষ আর তা আলাদা করে মনে রাখে না, ব্যাপারটা এরকম নয়। বরং এক্সটারনাল মেমোরির সাহায্য নিয়ে মানুষের মনে রাখার ক্ষমতা বাড়ে, কেননা এই প্রক্রিয়ায় বহু জিনিস মানুষ মনে রাখে, যা সচরাচর সে রাখে না বা রাখতে পারে না। অর্থাৎ কোন তথ্য গুরুত্বপূর্ণ- এই ভিত্তিতে মানুষ যা যা মনে রাখে, তাঁর থেকেও বেশি জিনিস সে মনে রাখে যখন ডিজিটাল ডিভাইসের সহায়তা নেয়। যা প্রচলিত ধারণার থেকে বেশ আলাদা। এই সমীক্ষা তাই সাধারণ মতের থেকে খানিক ভিন্নমতই পোষণ করছে। স্মার্টফোনের ব্যবহারে যেখানে মানুষের মনে রাখার ক্ষমতা কমছে বলে দাবি করা হয়, সেখানে এই সমীক্ষা অনুযায়ী, স্মার্টফোনের ব্যবহারের দরুন মানুষ বরং আরও বেশী জিনিসই মনে রাখতে পারে।