ফেরত দেওয়ার কথা ৩ টাকা। জোর দেখিয়ে সেই টাকা ফেরত দিতে চাননি দোকানদার। এদিকে ক্রেতাও ছাড়বার পাত্র নন। পালটা জবাবে দোকানদারের বিরুদ্ধেই মামলা ঠুকে দেন তিনি। আর সেখানেই গো হা হেরে, ২৫ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হল দোকানদারকে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কেন মাত্র ৩ টাকা ফেরত দিতে চাননি ওই দোকানদার? আসুন শুনে নিই।
অন্যায়ের সঙ্গে কোনওভাবেই আপস করবেন না। সিনেমার গল্পে এমনটা হামেশাই দেখা যায়। তার জন্য যতই লড়াই করতে হোক, নায়কের তাতে বিন্দু মাত্র আপত্তি নেই। কিন্তু এতো একেবারে খাঁটি বাস্তব। এখানে চলতে গেলে একটু আধটু আপস করতেই হয়। চলতি ধারণা যতই একথা বলুক, এই ব্যক্তি তা মানতে নারাজ। তাই, মাত্র ৩ টাকার জন্যও মামলা করতে দুবার ভাবেননি তিনি। যদিও শেষ পর্যন্ত ন্যায়ের পথে জয় হয়েছে তাঁরই।
আরও শুনুন: ভালো আছে কাশ্মীর, খতিয়ান তুলে ধরে পাকিস্তানকে বিশ্বমঞ্চে তুলোধোনা উপত্যকার সমাজকর্মীর
ঘটনাটি ওড়িষার সম্বলপুরে। মূল চরিত্রে এক সাংবাদিক, আর এক জেরক্স দোকানি। কিছুদিন আগে সম্বলপুরের বুধরাজা এলাকার বাসিন্দা, প্রফুল্ল কুমার দাশ স্থানীয় এক জেরক্স দোকানে যান। পেশায় তিনি একজন সাংবাদিক। তাই ন্যায়ের পথে থাকা বা সত্যের জন্য লড়াই করাই তাঁর কাছে স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সাধারণ এক জেরক্স দোকানে তাঁর সঙ্গে কী এমন অন্যায় হতে পারে? তাহলে খুলেই বলা যাক।
ঘটনার দিন কিছু জরুরী কাগজের ফটোকপি করাতে ওই জেরক্স দোকানে হাজির হন প্রফুল্ল। তবে সেখানে মাত্র একটা কাগজেরই ফটোকপি করান তিনি। হিসাবমতো একটা কাগজের জেরক্সের জন্য তাঁর ২ টাকা দেওয়ার কথা। কিন্তু খুচরো না থাকায় পাঁচ টাকার একটা কয়েন দোকানির দিকে বাড়িয়ে দেন প্রফুল্ল। হিসাবমতো দোকানির ফেরত দেওয়ার কথা ৩ টাকা। কিন্তু সেইসময় তিনি তা করেননি। উলটে কিছু ফেরত না দেওয়ার দাবি তোলেন। এই ঘটনা হয়তো অনেকের কাছে নতুন নয়। খুচরো না থাকার অজুহাতে, অনেক সময়ই দোকানিরা ২-৩ টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করেন। বেশিরভাগই তা সহজভাবে মেনে নিয়ে ফিরে আসেন। কিন্তু প্রফুল্ল এমনটা করেননি। ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে দোকানির সঙ্গে তর্ক করতে থাকেন। ইতিমধ্যে দোকানিও প্রফুল্লকে বেশ ভালমতো অপমান করেছেন। এইভাবে কিছুক্ষণ বচসা চলার পর, বিরক্তি নিয়ে প্রফুল্লকে গোটা পাঁচ টাকার কয়েনটাই ফিরিয়ে দেন দোকানি। সেইসঙ্গে ‘ভিখারিকে দান দিলেন’, এমন কটাক্ষও করেন। সব কিছু কার্যত মুখ বুজে সহ্য করেন প্রফুল্ল। কিন্তু তিনিও এই ঘটনার শেষ দেখে ছাড়বেন বলেই পণ করেন। এছাড়া দোকানির কাছে, বিল চাইলে আরও অপমানিত হন প্রফুল্ল। এক্ষেত্রেও অনেকের অবাক লাগতে পারে, মাত্র ২ টাকার বিল! কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী যে কোনও কেনাকাটার ক্ষেত্রেই বিল দেওয়া দোকানির অবশ্য কর্তব্য। বলা ভালো, বিল নেওয়া একজন ক্রেতারও দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। সেই হিসেবেই বিল চেয়েছিলেন প্রফুল্ল। বদলে এমন অপমান জুটবে তা ভাবতেও পারেননি।
আরও শুনুন: তেরঙ্গার মধ্যে আরবি হরফে লেখা পতাকা নিয়ে মিছিল, হুলুস্থুল যোগীরাজ্যে
কিন্তু ওই যে কথায় আছে, এক মাঘে শীত যায় না। তাই এই ঘটনা নিয়ে সরাসরি ক্রেতা সুরক্ষা দপ্ততে গিয়ে হাজির হন। সেখানে গিয়ে ওই জেরক্স দোকানির নামে অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনার জল গরায় আদালত অবধি। সেখানে গিয়েই রীতিমতো অপদস্থ হতে হয় ওই জেরক্স দোকানিকে। প্রফুল্ল-র আনা অভিযোগ কোনওভাবেই ভুল প্রমাণ করতে পারেননি তিনি। উলটে তিনি যে বিল দেন না সেটাও আদালতে প্রমাণ করে দেন প্রফুল্ল। সব শুনে জেরক দোকানিকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দেন বিচারপতি। মাত্র ৩০ দিনের মধ্যে সেই টাকা জেরক্স দোকানিকে দিতে বলা হয়। আর এই নির্দেশ অমান্য করলে আরও কড়া শাস্তি হতে পারে বলেও সাফ জানিয়ে দেন আদালতের বিচারপতি। সঠিক বিচার পেয়ে বেজায় খুশি প্রফুল্ল। তাঁর কথায়, যে কোনও অন্যায়ের বিরুদ্ধে এই ভাবেই পদক্ষেপ করা উচিত। তাঁর কথায়, এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নেবেন আরও অনেকেই। ভবিষ্যতে কোনও দোকানদার যেন ক্রেতাকে ঠকাতে না পারেন, সেই আশাই করেন ওই সাংবাদিক।