দ্রুত কমে যাচ্ছে পৃথিবীর জলস্তর। মেরুর বরফও গলে যাচ্ছে উষ্ণায়নের কারণেই। এ জন্য ব্যহত হচ্ছে কার্বন সাইকেল, যা পরোক্ষে গাছেদের বৃদ্ধিও ব্যহত করছে। গাছের সংখ্যা প্রাকৃতিক ভাবেই কমতে থাকে যদি, তবে এমনিতেই পৃথিবীর বায়ুস্তর থেকে দ্রুত বেগে নিচের দিকে নেমে যাবে অক্সিজেনের পরিমাণ। আর অক্সিজেন কমে গেলে কেবল মানুষ নয়, সবরকম জীবিত প্রাণীর মৃত্যুই ত্বরান্বিত হবে।
২০১২ সালে আচমকাই রটে গিয়েছিল, ডিসেম্বর মাসের এক দিন নাকি হঠাৎ করেই ধ্বংস হয়ে যাবে পৃথিবী। কারণ মায়ান ক্যালেন্ডারে ওই তারিখের পর আর কিছুই লেখা ছিল না। মুখে মুখে রটে গিয়েছিল, মহাশূন্যে ভেসে বেড়ান কোনও ধূমকেতু নাকি সজোরে এসে আঘাত করবে পৃথিবীর গায়ে। যদিও শেষ পর্যন্ত তেমন কিছুই ঘটেনি, নেহাত রটনা হয়েই থেকে গিয়েছে এসব কল্পকাহিনি। এরপরেও বেশ কয়েকবার পৃথিবী ধংসের খবর কানাঘুষো শোনা গিয়েছে বটে। তারপর আবারও থিতিয়ে গিয়েছে সব। তবে এইবার বিজ্ঞানীরা সত্যিই জানালেন সংবাদমাধ্যমে, পৃথিবীর শেষ দিনটি নাকি এখন থেকেই নির্ধারণ করা সম্ভব!
আজ্ঞে হ্যাঁ, জাপানের টোহো ইউনিভার্সিটির গবেষকরা নাসার ‘প্ল্যানেটরি মডেল’ অনুসরণ করে যে দীর্ঘ গবেষণা চালিয়েছেন, তা থেকেই এমন সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব হয়েছে। এই সময় থেকে ১ বিলিয়ন বছর পরেই নাকি শেষ হয়ে যাবে আজকের পৃথিবী। সেই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে প্রাণের রেশমাত্র থাকবে না। আজকের দিনে বসে এমন খবর শুনলে হয়তো হেসেই উঠবেন নেটিজেনরা। কারণ ১ বিলিয়ন বছর বলতে যে সুদূর অতীতকে বোঝায়, সে সময়ে তো এখনকার মানুষেরা কেউই আর বেঁচে থাকবে না। ফলে এমন ধ্বংস নিয়ে চিন্তা করেই বা কী লাভ? আর ঠিক এই কারণেই বিষয়টি নিয়ে আরও বেশি চর্চার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। গবেষকরা বলছেন, মহাশূন্য থেকে উড়ে আসা কোনও উল্কাখণ্ড নয়, বরং পৃথিবীর বর্তমান বাসিন্দারাই হবে এই ধবংসের আসল কারণ। কিন্তু কীভাবে?
বর্তমানে যেদিকেই চোখ যায়, চোখে পড়ে আকাশছোঁয়া হাইরাইজ। ছোট পরিসরের মধ্যে যেন মৌমাছির চাকের মতো জমাট বেঁধে রয়েছে অসংখ্য ফ্ল্যাট। তাতে ঠাঁসাঠাসি করে বসবাস করছে একগাদা মানুষ। আর এর জন্যই নির্বিচারে কেটে ফেলা হচ্ছে সমস্ত গাছপালা। রাতারাতি উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সবুজ অরণ্য কিংবা জলাভূমি। আবার গাছ কাটা হচ্ছে বলেই উত্তরোত্তর গরম বাড়ছে। সেই গরম থেকে মুক্তি পেতে মানুষ বাড়ির প্রতিটি ঘরেই বসিয়ে ফেলছে এয়ার কন্ডিশনার মেশিন। শুধু বাড়িতে নয়, গাড়িতে, দোকানে সর্বত্রই এখন এসি বসানো হয় এখন। এমনটা না হলে গরমের সঙ্গে লড়াই করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যায় মানুষের পক্ষে। এসির অতিরিক্ত ব্যবহারই আবার পরিবেশের উষ্ণতা আরও অনেকখানি বাড়িয়ে তোলে। অর্থাৎ মানুষের হস্তক্ষেপেই গরম বাড়ছে, যার প্রকোপে ভুগছেও মানুষই!
গবেষণা বলছে, দ্রুত কমে যাচ্ছে পৃথিবীর জলস্তর। মেরুর বরফও গলে যাচ্ছে উষ্ণায়নের কারণেই। এ জন্য ব্যহত হচ্ছে কার্বন সাইকেল, যা পরোক্ষে গাছের বৃদ্ধিও ব্যহত করছে। গাছের সংখ্যা প্রাকৃতিক ভাবেই কমতে থাকে যদি, তবে এমনিতেই পৃথিবীর বায়ুস্তর থেকে দ্রুত বেগে নিচের দিকে নেমে যাবে অক্সিজেনের পরিমাণ। আর অক্সিজেন কমে গেলে কেবল মানুষ নয়, সবরকম জীবিত প্রাণীর মৃত্যুই ত্বরান্বিত হবে। ফলত, ধংসের দোরগোড়ায় এসে দাঁড়াবে পৃথিবী।
অর্থাৎ, শুনতে বহুদূরের বলে মনে হলেও পৃথিবীর ধংসের দিন কিন্তু শুরু হয়ে গিয়েছে এখনই। যেন এক অমোঘ কাউন্টডাউন চলছে আমাদের অগোচরে। আর দৈনন্দিন জীবনে আমাদের করা ছোট ছোট পদক্ষেপই নির্ধারণ করছে সে ভবিষ্যৎ! আচ্ছা, সত্যিই যদি একটা গাছের প্রাণ বাঁচালে সুদূর ভবিষ্যতে সমগ্র পৃথিবীকে রক্ষা করা সম্ভব হয়, তবুও সে চেষ্টা করবে না মানব সমাজ?