দাবানল নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব যাঁদের কাঁধে, তাঁরাই ব্য়স্ত ভোট সামলাতে। কেন? উত্তরাখণ্ড সরকারকে কড়া প্রশ্ন সুপ্রিম কোর্টের। ভোটের হাওয়ায় পরিবেশের প্রতি উদাসীনতাই কি আর আর একবার খোলসা হয়ে পড়ল এই ঘটনায়? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
গাছ কাটা হলে শোকসভা হয় না বিধানসভায়। সংসদেও হয় না। গাছ পুড়লেও হয় না। আর তাই বনরক্ষা করা যাঁদের কর্তব্য, তাঁদের কাঁধেও তুলে দেওয়া হয় ভোটের দায়িত্ব। সম্প্রতি এই নিয়েই সুপ্রিম কোর্টের কড়া প্রশ্নের মুখে পড়েছে উত্তরাখণ্ড সরকার।
আরও শুনুন:
একদিনে দুবার ভোট দিলেও অপরাধ নয়! কোথায় মেলে এমন সুযোগ?
দাবানল সে রাজ্যে কোনও নতুন ঘটনা নয়। পরিসংখ্য়ান বলছে, গত নভেম্বর মাস থেকে ১৪৩৭ হেক্টর বনভূমি আগুনের কবলে। তা নিযন্ত্রণে আনার জন্য বনকর্মীরা চেষ্টা করছেন। তবে কর্মী যত থাকার কথা, তত সংখ্যায় নেই। তার উপর উড়ে এসে জুড়ে বসেছে ভোটের কাজ। এই সংক্রান্ত একটি মামলা শুনতে বসে রীতিমতো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে সুপ্রিম কোর্ট। আবেদনকারীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, অন্তত ৪০ শতাংশ বনভূমি দাবানলের কবলে। পরিবেশের জন্য এ যে অশনিসংকেত, তা বুঝতে কারও বাকি নেই। তা সত্ত্বেও সরকারি কর্মচারিদের ভোটের কাজ করতে হচ্ছে। সরকার পক্ষের উকিলের কাছে তাই শীর্ষ আদালতের প্রশ্ন, এই যদি অবস্থা তাহলে, বনকর্মীদের দিয়ে ভোটের কাজ করানো হচ্ছেই বা কেন? জবাবে জানানো হয় যে, ভোটের কাজে যাঁরা গিয়েছিলেন তাঁদের কাজ শেষ হয়েছে। আর যাতে তাঁদের পরবর্তী পর্বের ভোটে যেতে না হয়, সরকার সে ব্যাপারে খেয়াল রাখছে। ক্ষুব্ধ আদালত জানায়, এ কেবলই অজুহাত মাত্র! শুনানিতে একে একে উঠে আসে পরিবেশ, বিশেষত বনরক্ষা সংক্রান্ত একাধিক প্রসঙ্গ। দেখা যায়, এই ধরনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে যত কর্মী থাকার কথা, রাজ্যের হাতে তা নেই। পাশাপাশি, সে রাজ্যের অভিযোগ, বনরক্ষা প্রকল্পের জন্য প্রযোজনীয় অর্থও কেন্দ্রের থেকে পাওয়া যায় না। তা সত্ত্বেও রাজ্যের তরফে, বনভূমি রক্ষার জন্য সর্বতোভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে।
আরও শুনুন:
হিন্দু-মুসলিম প্রসঙ্গ টানেনইনি! মোদির কথা কি তবে ভুল বুঝেছে মানুষ?
উত্তরাখণ্ড সরকার শীর্ষ আদালতের তোপের মুখে পড়েছে বটে, তবে এই ঘটনা যেন সামগ্রিক একটা ছবিই তুলে ধরে। সম্প্রতি পরিবেশের বদল নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলছে। এ পরিবর্তন শুধু যে ভারতে হচ্ছে তা নয়। সারা বিশ্বই পরিবেশ নিয়ে চিন্তিত, এবং রাষ্ট্রনেতারা সময়-সময় তা নিয়ে বৈঠক বসেন। তবে যা আলোচনায় উঠে আসে, তার কতখানি বস্তব হয়ে ওঠে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। দেশে যে লোকসভা নির্বাচন চলছে, সেখানেও পরিবেশরক্ষা যে ভোটের ইস্যু, এমনটা বিন্দুমাত্র বলা যায় না। ভাতা থেকে নাগরিকত্ব কিংবা সম্প্রদায়ের সুরক্ষা- কত বিষয় নিয়ে নেতারা প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু যে পরিবেশ না বাঁচলে, মানুষের অস্তিত্বই সংকটের মুখে পড়বে, তা কখনই নির্বাচনী ইস্যু হয়ে ওঠে না। অথচ সেই নির্বাচনের কাজেই যেতে হয় সরকারি বনকর্মীদের, যেখানে দাবানলের গ্রাসে পড়ে আছে দেশের অরণ্য়সম্পদ। ভোটের ট্রাজেডি বোধহয় এটাই। সম্প্রতি বৃষ্টি নামার দরুণ সে রাজ্যের দাবানল অনেকটাই নিভেছে। তবে মানুষের খাতিরে যে নির্বাচন, তা যে মানুষের সবথেকে জ্বলন্ত সমস্যার দিকেই নজর দেয় না সেভাবে, সে কথাটাই বড় হয়ে উঠছে এই ঘটনায়।