মৃতদেহ খাচ্ছে বিড়াল! সাধারণ দুধভাতেই যারা সন্তুষ্ট থাকে বলে আমাদের ধারণা, তাদের এ কী মতিভ্রম! হ্যাঁ, এমন ঘটনাই সামনে এসেছে সম্প্রতি। যেখানে পোষ্যদের মালিক নিজেই পরিণত হয়েছেন পোষ্যদের শিকারে। এই ভয়াবহ ঘটনার কথা জেনে রীতিমতো আঁতকে উঠেছেন অনেকেই। ঠিক কী ঘটেছে আসলে? শুনে নেওয়া যাক।
বাড়িতে পোষ্য রাখতে ভালবাসেন অনেকেই। আর সেই পোষ্য প্রাণীদের তালিকায় প্রথমেই থাকবে বিড়াল। ছোট ছোট থাবা, লেজ আর লোমওলা শরীর নিয়ে যে প্রাণীটি মানুষের আদর কাড়তে ওস্তাদ। কিন্তু অবস্থাভেদে যে রীতিমতো ভোল বদলে ফেলতে পারে এই আদুরে প্রাণীটি, সে কথারই প্রমাণ মিলল সম্প্রতি। খোদ মালিকের মৃতদেহেই থাবা বসাল তাঁর পোষা ২০টি বিড়াল। দেহের অনেকখানি অংশ তারা উদরসাৎ করে ফেলেছে বলেও জানা গিয়েছে। আর এই খবর সামনে আসার পরই নড়েচড়ে বসেছেন পোষ্যপ্রেমী, থুড়ি পশুপ্রেমীরা।
আরও শুনুন: বিয়ের খরচের ২৩ লাখ টাকা উপহার দিন নিমন্ত্রিতরাই! অদ্ভুত আবদার নবদম্পতির
কী ঘটেছে আসলে? তবে খুলেই বলা যাক।
দু’সপ্তাহ ধরে নিখোঁজ মহিলা। কোনও খোঁজখবর না পেয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন তাঁর সহকর্মী। শেষমেশ সাতপাঁচ ভেবে পুলিশেই খবর দেন তিনি। মহিলার খোঁজে নেমে তাঁর বাড়িতে পৌঁছায় পুলিশ। কিন্তু দরজা খুলে ঘরে ঢুকতেই চোখে পড়ে এক ভয়ংকর দৃশ্য। পুলিশকর্মীরা দেখেন, ঘরে পড়ে রয়েছে মহিলার মৃতদেহ। মৃতদেহ বলা বোধহয় ভুল হল, কারণ পুলিশের চোখে যা পড়েছিল তা আসলে দেহাংশ। কিন্তু বন্ধ বাড়িতে মৃতদেহের এমন ক্ষতবিক্ষত অবস্থা কী করে হল? সে উত্তর অবশ্য মেলে সঙ্গে সঙ্গেই। কারণ বাড়িতে মৃতা মহিলা ছাড়া খোঁজ পাওয়া যায় একদল বিড়ালের। সংখ্যায় কুড়িটি। তারা যে মহিলার মৃত শরীর দিয়েই নিজেদের রসনাতৃপ্তি করছিল, তা দেখতেই পান পুলিশকর্মীরা।
আরও শুনুন: শুধু নাক-মুখ নয়, পায়ুপথেও সম্ভব শ্বাসক্রিয়া, চমকপ্রদ আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের
জানা গিয়েছে, মৃতা মহিলা রাশিয়ার রোস্তভ অঞ্চলের বাতায়স্কের অধিবাসী। ক্যাট ব্রিডিং, অর্থাৎ বিড়াল পালন-ই ছিল তাঁর পেশা। আর সেই কারণেই তাঁর বাড়িতে ছিল ২০টি বিড়াল, যাদের প্রত্যেকটিই মেইন কুন প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত। আমেরিকার মেইন রাজ্যে এই বিশেষ ধরনের বিড়াল পাওয়া যায় বলেই এদের নাম মেইন কুন। সাধারণ বিড়ালের থেকে আকারে বেশ কিছুটা বড় এবং শক্তিশালী হলেও আদতে এরা শান্ত স্বভাবের বলেই মত প্রাণীবিশেষজ্ঞদের। কোনোরকম হিংস্রতার বশে নয়, স্রেফ অনাহারের কারণেই নরমাংস ভক্ষণ করতে বাধ্য হয়েছে এই বিড়ালগুলি, এমনটাই জানিয়েছেন তাঁরা। প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে পুলিশের অনুমান, অসুস্থতার কারণে ঘরেই মৃত্যু হয় এই মহিলার। আপাতত যে অ্যানিম্যাল রেস্কিউ এক্সপার্ট বিড়ালগুলির দায়িত্ব নিয়েছেন, তাঁর মতে, মালিকের অনুপস্থিতিতে খাবার জোটেনি এই বিড়ালগুলির। বেশ কিছু দিন ধরে অভুক্ত থাকার পর, স্বাভাবিক প্রবৃত্তিবশে নিজের মালিকের মৃতদেহকেই খাদ্য হিসাবে বেছে নিয়েছিল তারা।
বস্তুত, বিড়ালের প্রাথমিক খাদ্য দুধ এমন একটা বিশ্বাস প্রচলিত থাকলেও আসল কথা হল, বিড়াল মাংসাশী প্রাণী। তাই মাছের মতোই, মাংস খেতেও তার কোনও আপত্তি নেই। বিড়ালের মৃতদেহ খাওয়ার প্রবণতার দিকেও আলো ফেলেছিল ২০২০ সালের এক গবেষণা। সুতরাং, এই সাম্প্রতিক ঘটনায় বিড়ালগুলির আচরণের মধ্যে আশ্চর্যের কিছু দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা।