এক টাকা, দু’টাকা বা পাঁচ টাকার নোট তো দেখেছেন। বেশ কিছুদিন আগেও দেখা মিলত সবচেয়ে ছোট অঙ্কের এই সব নোটের। বাড়ির আলমারি ঘাঁটলে দু-একটা পেয়েও যেতে পারেন খুঁজে। ছোট অঙ্কের নোট যেমন ছিল, তেমন সব চেয়ে বড় অঙ্কের নোটের কথা বললেই মনে পড়ে দু’হাজারি নোটের কথা। নোটবাতিল পর্বের পর থেকে আমাদের পকেট আলো করে থাকা এই দু-হাজার নোট ভাঙাতে নিয়ে অনেক সময়ই নানাবিধ সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় দেশবাসীকে। কী ভাবছেন, এটাই আরবিআইয়ের ছাপা সব চেয়ে বড় অঙ্কের নোট? মোটেও না। এর চেয়েও বড় অঙ্কের নোট আগেই ছেপেছে আরবিআই? কত টাকার নোট ছিল সেটি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
মাসটা নভেম্বর। বাতাসে হালকা হিমের ছোঁয়া লাগতে শুরু করেছে সবে। ঘড়ির কাঁটা তখন রাত নটা ছুঁইছুঁই। টিভির পর্দায় এসে হঠাৎই প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করে দিলেন নোটবাতিলের কথা। পাঁচশো ও এক হাজারের নোট পকেটে নিয়ে তখন দিশাহারা মানুষ। এটিএমের সামনে অজস্র নিদ্রাহীন লাইন, অদ্ভুত অনিশ্চয়তায় ভরা সেই দিনগুলোর কথা চেষ্টা করলেও ভুলতে পারেননা অনেকেই। সাধারণ মানুষ তো বটেই বিশেষত অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকেরা সেই ক্ষতি সামলে উঠতে পারেননি আজও।
কালো টাকার রমরমা রুখতে বাতিল করে দেওয়া হল পাঁচশো ও এক হাজার টাকার নোট। তার বদলে বাজারে এল নতুন পাঁচশো ও দু’হাজার টাকার নোট। এর আগে এত বড় অঙ্কের নোট নিজের পকেটে, মানিব্যাগে কখনও দেখেইনি দেশবাসী। এত বড় অঙ্কের টাকা, কে ভাঙিয়ে দেবে সেই নিয়েও শুরু হল নয়া অনিশ্চয়তা।
কী ভাবছেন, এটিই দেশের এখনও পর্যন্ত ছাপা সবচেয়ে বড় নোট? উহু, তাহলে ভুল ভাবছেন। এর থেকেও বড় অঙ্কের নোট এর আগে ছেপেছে আরবিআই।
আরও শুনুন: আজব কাণ্ড! আদালত চত্বরে আরশোলা ছেড়ে দিলেন মহিলা, কেন জানেন?
একটা সময় এক টাকা, দু’টাকার নোটও দেদার চলত বাজারে। পাঁচ টাকা তো বলাই বাহুল্য। সে সময় টাকার দাম এত পড়েনি। ফলে এক টাকা- দু’টাকার দামও ছিল বেশ বেশি। সেসব দিন কবেই গিয়েছে। এক পয়সা, দু পয়সা বা পাঁচ পয়সা তো বটেই, কালের অতলে তলিয়ে গিয়েছে পঁচিশ এবং পঞ্চাশ পয়সারাও। এখন বাজারে এক টাকাই সব চেয়ে কম অঙ্কের কয়েন। আর টাকার দামও যে তলানিতে ঠেকেছে, তা সেই একটাকার কয়েনের আকার দেখেই বেশ ঠাহর করা যায়। সবচেয়ে ছোট অঙ্কের মুদ্রা যেমন এক টাকা, আমাদের নাগালে থাকা সবচেয়ে বড় অঙ্কের নোট তেমনি দু-হাজার টাকারই। তবে ওই যে বললাম এর চেয়েও বড় অঙ্কের নোটও ছেপেছে আরবিআই।
আরও শুনুন: মাছির থেকেও ছোট! পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম রোবট বানিয়ে তাক লাগালেন বিজ্ঞানীরা
এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বড় অঙ্কের নোট হল দশ হাজার। আরবিআইয়ের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, ১৯৩৮ সালে ১০ হাজার টাকার নোট ছাপা শুরু করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া। ১৯৪৬ সালের জানুয়ারি মাসে সেই টাকাকে বাতিল ঘোষণা করে দেওয়া হয়। ১৯৫৪ সালে ফের ফিরিয়ে আনা হয় সেই দশ হাজার টাকার নোটটিকে। তবে বেশিদিন নয়। ১৯৭৮ সাল থেকে ফের বন্ধ হয়ে যায় সেই নোটের ব্যবহার। এক টাকা, দু-টাকার নোট ছাপাও তো কবেই বন্ধ করেছে আরবিআই। তার বদলে ইদানীং বেড়েছে কয়েনের রমরমা।
তবে ১৯৩৪ সালের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ইন্ডিয়া আইনের ধারা ২৪ অনুযায়ী, দশ হাজারের উপরের কোনও অঙ্কের নোট ছাপতে পারে না আরবিআই। তাছাড়া কোন কোন অঙ্কের নোট ছাপা যাবে, তা নিয়েও যথাযথ নির্দেশিকা দেওয়া রয়েছে ওই আইনে।
ভাবুন তো, সত্যিই যদি আজও চালু থাকত দশ হাজার টাকার ওই নোট। পকেটে অতবড় নোট নিয়ে কী নাজেহালই না হতে হত দেশবাসীকে। দু-হাজার টাকার খুচরো করতেই যেখানে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়, সেখানে দশ হাজার টাকার খুচরো! ভেবেই আঁতকে উঠবেন আপামর দেশবাসী।