কোটা আন্দোলনের শহিদ ছাত্র। পরীক্ষা হলে তার জন্য জায়গা ফাঁকা রাখলেন সহপাঠীরা। ফুলের তোড়া দিয়ে সাজিয়ে, লিখে রাখা হল মৃত ছাত্রের নামও। বাংলাদেশের এই ঘটনার ছবি মুগ্ধ করেছে নেটদুনিয়াকে। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
পরীক্ষা চলছে। প্রশ্নোত্তরের গোলকধাঁধায় সবাই মগ্ন। একটা জায়গায় শুধু প্রশ্ন আর খাতা। উত্তর লেখার জন্য সেখানে কেউ বসেনি। স্রেফ রাখা আছে এক গোছা ফুল আর একটা কাগজ। উপরে লেখা শফিক উদ্দিন আহম্মেদ আহনাফ।
এ ঘটনা বাংলাদেশের। সদ্য সে দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার নির্দেশ দিয়েছে। সেইমতো খুলেছে ঢাকার শাহীন কলেজ। অশান্ত পরিস্থিতিতে আটকে ছিল পরীক্ষা। কলেজ খুলতেই তা শুরু হয়েছে। সেই পরীক্ষার হলেই দেখা গেল এমন ছবি। আসলে ওই ফুল আর জায়গা যার জন্য রাখা হয়েছে,সেই আহনাফ ছিলেন এই কলেজেরই একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া। অন্য সকলের এই পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল তাঁরও। কিন্তু একটা বুলেট পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে। কোটা আন্দোলনে শহিদ হয়েছেন আহনাফ। ৪ আগস্ট মীরপুরের রাস্তায় প্রাণ দিয়েছেন এই ছাত্র। তবে বন্ধুরা তাঁকে ভোলেনি। ঠিক যেখানে বসে পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল আহনাফের, সেখানে ফুলের তোড়া রেখে দিয়েছিলেন সহপাঠীরা। যেন তাঁদের সঙ্গেই রয়েছে আহনাফ। জীবন থেমে থাকবে না। পরীক্ষা, পড়াশোনা সবই চলবে। সেসব মেনে নিয়েই এদিন পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন আহনাফের সহপাঠীরা। কিন্তু বন্ধুকে এত সহজে ভুলবেন কীভাবে! তাই এমন ব্যবস্থা করেন ওই পড়ুয়ারা।
বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রথম শহিদ হন আবু সাঈদ। তাঁর মৃত্যুতেই আন্দোলনের আগুন জ্বলেছিল হু হু করে। আহনাফও এই আবু সাঈদকে নিজের অনুপ্রেরণা মনে করতেন। গোটা দেশ যখন জ্বলছে, তখন ঘরে আটকে থাকেননি ১৭ বছরের বয়সের আহনাফও। বিপদ হতে পারে জেনেও পিছিয়ে আসেননি। এমনকি যে কোনও মূহুর্তে মৃত্যু হতে পারে, এমনটাও ভালোমতোই জানতেই আহনাফ। তাও ছাত্রদের লড়াইয়ে বুক চিতিয়ে শামিল হন। প্রথমে রবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাসে আক্রান্ত হন। তাতে অসুস্থও হন। কিন্তু লড়াইয়ের মানসিকতা মন থেকে মোছেনি এতটুকু। তাই একটু সুস্থ হতেই ফের পথে নামেন। এবার আর শেষরক্ষা হয়নি। মীরপুরের এক আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন। সেখানে শরীর বিদ্ধ হয় বুলেটে। কিছুক্ষণে মধ্যেই সব শেষ। আহনাফের মতো আরও কতশত প্রাণ অকাল থেমেছে তার হিসাব করা কঠিন। তবে তা বিফলে যায়নি। আন্দোলনের জোরে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে সরকার। এমনকি পদত্যাগ করে ভারতে চলে আসেন শেখ হাসিনা। নতুন করে স্বাধীনতার স্বাদ পায় ওপার বাংলা। আর সেই নতুন বাংলাদেশেই চির অমর হয়ে থেকে গেলেন আবু সাঈদ, শফিক আহনাফরা।