স্বামী হারানোর শাস্তি ভুগতে হয় নাবালিকা বধূকেই। এখনও অদ্ভুত এক প্রথা মেনে চলে দেশের এই রাজ্যটি। সেখানে বাল্যবিবাহ যেমন চলে এখনও, তেমনই স্বামীর মৃত্যুর পরেও মানতে হয় এক অদ্ভুত প্রথা। কী সেই প্রথা? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
মৃত্যু হয়েছে স্বামীর। সে স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক যাই হোক না কেন, এমনকি যত বয়সই হোক না কেন তাঁর, সেই দোষ এসে বর্তায় বিধবা মেয়েটির উপরেই। আর সেই পাপে তাকে শাস্তিও পেতে হবে, এমনটাই প্রথা দেশের এই রাজ্যে। এমনকি অনেকসময়ই দেখা যায় বিধবা মেয়েটি বয়সে কিশোরী কিংবা তরুণী। কারণ নিতান্ত ছোটবয়সেই যে বিয়ে হয়ে যায় অনেকের। সময় যতই বদলাক, এই আধুনিক যুগেও আইনকানুনের তোয়াক্কা না করে রমরমিয়ে চলছে এই প্রথা।
আরও শুনুন: স্বামীর মৃত্যু হতেই দেওর হল ‘স্বামী’! ‘চূড়া প্রথা’র গেরোয় বিপাকে শহিদের স্ত্রী
হ্যাঁ, এখনও এমন ঘটনার সাক্ষী রাজস্থান। পালি, ভিলওয়াড়া, রাজসমন্দ— রাজস্থানের একাধিক জেলায় প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জে এখনও প্রচলিত রয়েছে বাল্যবিবাহ। সমাজের প্রচলিত রীতি মেনে ছোট ছোট মেয়েদেরও বিয়ে দিতে বাধ্য হয় পরিবার। এমনকি কোথাও কোথাও এমনও রীতি রয়েছে যে, পরিবারের কোনও সদস্যের মৃত্যু হলে, এবং ওই পরিবারে কোনও মেয়ে থাকলে সেই দিনই তার বিয়ে দিতে হবে। মেয়েটি নাবালিকা হলেও এই প্রথা মানতে বাধ্য পরিবার। পরিবার রাজি থাক বা না থাক, গ্রামবাসীদের তরফেই যে কারও সঙ্গে মেয়েটিকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। বয়স কিংবা যোগ্যতা কোনও কিছুই এখানে বিচার করা হয় না। ফলে নিতান্ত কম বয়সেই স্বামীকে হারানোও এখানে নতুন নয়। আর তারপরেই মেয়েদের জীবনে নেমে আসে আরেক নতুন অভিশাপ।
এমনিতেই বৈধব্যের যন্ত্রণা, তার উপরে সামাজিক ভাবে একঘরে হয়ে যাওয়া, কোনও শুভকাজে যোগ দিতে না পারা, রঙিন শাড়ি গয়না না পরতে পারা- এসব তো আছেই। তারও উপরে কোনা প্রথার অনুশাসন মানতে হয় এই মেয়েদের। এই প্রথা অনুযায়ী, স্বামী মারা গেলে সদ্যবিধবাকে টানা ৬ মাসের জন্য একটি বদ্ধ ঘরে নির্বাসন দেওয়া হয়। সন্তানকে পর্যন্ত মায়ের কাছে থাকতে দেওয়া হয় না। সূর্য ওঠার আগে কেবল স্নান সারার জন্য একবার মাত্র ঘর থেকে বেরোনোর অনুমতি পায় তারা। কেউ যাতে ওই মহিলার মুখ না দেখতে পায়, সেই কারণেই এমন নিদান দেওয়া হয়। আসলে গ্রামবাসীদের বিশ্বাস, স্বামীর মৃত্যুর জন্য দায়ী তার স্ত্রীই। তাই তার মুখ দেখাও অমঙ্গলের বলেই মনে করে তারা।
আরও শুনুন: কনের বয়স্ক দাদাকে বিয়েতে বাধ্য বরের বোন! রাজস্থানের অদ্ভুত প্রথার বলি বহু তরুণী
কোথাও কোথাও আবার এই বিধবাদের রীতিমতো দর কষাকষি করে বিক্রি করে দিয়ে দায় সারে বাড়ির লোক। ওই সমাজেরই কোনও পুরুষ তাকে কিনে নেয়। নতুন বাড়িতে গিয়ে গৃহকর্ম সারা থেকে ওই ব্যক্তির শয্যাসঙ্গিনী হওয়া, সবকিছুই করতে বাধ্য থাকে মেয়েটি। তবে সম্মান মেলে না কোথাওই। বাল্যবিবাহ রদ করা কিংবা বিধবাবিবাহ প্রচলনের জন্য যতই আইন করা হোক না কেন, রাজস্থানের অনেক মেয়েরই জীবন এখনও তলিয়ে রয়েছে এইসব প্রথার অন্ধকারেই।