জন্মিলে মরিতে হবে। এ হল চিরন্তন সত্যি। কিন্তু বিশ্বের এমন কিছু দেশ রয়েছে, যেখানে মৃত্যু মানেই চিরন্তন সত্য নয়। অর্থাৎ চাইলেই এইসব দেশে কেউ মারা যেতে পারেন না। তেমনটা হলে তাঁর পরিবারকে দিতে হয় মোটা টাকা জরিমানা। কোথায় রয়েছে এমন অদ্ভুত নিয়ম? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
মারা গেলে দিতে হবে জরিমানা। এমনটা কখনও শুনেছেন? বিশ্বের এমন কিছু জায়গা রয়েছে যেখানে চালু রয়েছে এমনই অদ্ভুত নিয়ম। তাই বিগত ১০০ বছরে সেখানে কেউ মারাই যাননি। হয় পাশের এলাকায় কিংবা আরও দূরে, কিন্তু এইসব জায়গায় মৃতদেহের কোনও ঠাঁই হয় না। যার নেপথ্যে রয়েছে অদ্ভুত কিছু কারণ।
আরও শুনুন: পড়শিকে ভালবাসা অন্যায় নাকি! পাক তরুণীর কোহলি-প্রেম মন জিতল নেটদুনিয়ারও
বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে নানান বৈচিত্র। কোথাও বিয়ে করতে গেলে মানতে হয় অদ্ভুত নিয়ম। কোথাও আবার পোশাক পরিচ্ছেদের ক্ষেত্রে রয়েছে নানান বিধিনিষেধ। তবে মৃত্যুর ক্ষেত্রেও যে নিয়মের বেড়াজাল থাকতে পারে তা এইসব জায়গায় না গেলে বোঝা মুশকিল। নরওয়ে, ইটালি, জাপান কিংবা ফ্রান্সের কিছু এমন শহর ও গ্রাম আছে, যেখানে মৃত্যুই নিষিদ্ধ।
তালিকার শুরুতেই রয়েছে মিয়াজিমা। জাপানের এই গ্রাম বিভিন্ন কারণে গোটা দেশের মধ্যে বিখ্যাত। স্থানীয় বিশ্বাস, এই গ্রামই হল জাপানের সবথেকে পবিত্র স্থান। তাই এখানে মৃত্যু নিষিদ্ধ। শুধু তাই নয় এই গ্রামে কারও জন্মানোও পাপ বলে মনে করা হয়। তাই গর্ভবতী মহিলা কিংবা অসুস্থ মানুষকে এই গ্রামে রাখাই হয় না। নিতান্তই সমস্যা হলে তাঁদের পাশের গ্রামে কিংবা অন্য কোথাও রেখে আসা হয়। তবু এই গ্রামে মরতে পারেন না কেউই। যদিও এখানে মৃত্যুর জন্য কোনও জরিমানা বা শাস্তির নিয়ম নেই। তবে ফ্রান্সের সার্পোরেক্সে গেলে এমনটা সহজেই দেখতে পাবেন যে কেউ। অনেক আগে থেকেই এখানে মৃত্যুর উপর জারি রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। আসলে আকারে ছোট হলেও এখানে জনসংখ্যা যথেষ্টই বেশি। তাই নতুন করে কাউকে কবর দেওয়ার জায়গা নেই। একমাত্র কেউ যদি নিজস্ব এলাকায় মৃতদেহ সৎকারের ব্যবস্থা করতে পারে তাহলেই কারও মৃত্যু সম্ভব। অন্যথায় এখানেও মৃতপ্রায় ব্যক্তিদের থাকার অধিকার নেই। আর কেউ যদি এখানে মারাও যান তবে তাঁর কবরের ব্যবস্থা করতে হয় অন্য কোথাও। নাহলে দিতে হয় মোটা টাকার জরিমানা। একই ছবি দেখা যায় স্পেনের লানজারনে। এখানেও মানুষের তুলনায় কবর দেওয়ার জায়গা কম। যেটুকু খালি ছিল বিগত কয়েক বছরে তা ভরে গিয়েছে। তাই এখানকার পুরসভার তরফে একপ্রকার নোটিশ জারি করে বলা হয়, যতদিন না নতুন কবর স্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে, ততদিন এখানে কেউ মারা যেতে পারবেন না। প্রায় একইরকম নিয়ম ইটালির সেলিয়াতে। স্রেফ মৃত্যু নয়, কারও শরীর খারাপ হওয়াও এই শহরে নিষিদ্ধ। আসলে এখানকার বাসিন্দার সংখ্যাই মাত্র ২০৬ জন। তাই এর থেকে জনসংখ্যা কম করতে একেবারেই নারাজ শহরের প্রশাসন। তাই আগে থেকেই এমন নিয়ম জারি করা হয়েছে সেখানে। কেউ সামান্য অসুস্থ হ্লেই সরিয়ে দেওয়া হয় অন্যত্র। তাই এখানে কারও মৃত্যুর কোনও সম্ভাবনা নেই।
আরও শুনুন: ১৫ বছর ধরে সারাদিন চক খেয়েই কাটিয়েছেন মহিলা, নেপথ্যে কী কারণ জানেন?
এখানেই শেষ নয়। তালিকায় রয়েছে ব্রাজিলের মিরিম কিংবা ফ্রান্সের কাগনুয়াক্স-এর মতো জায়গাও। এখানেও কেউ চাইলেই মারা যেতে পারেন না। বেশিরভাগ জায়গাতেই সমস্যা জনসংখ্যা নিয়ে। তবে এ প্রসঙ্গে নরওয়ের লংইয়ারবাইনের কথা না বললেই নয়। একেবারে উত্তর মেরুর কাছাকাছি এই শহরের তাপমাত্রা এতই কম যে এখানে মৃতদেহ কবর দিলেও তা দীর্ঘদিন একইরকম থাকে। তাই নতুন করে কেউ মারা গেলে তাঁকে কবর দেওয়ার জায়গা নেই। তাই এখানেও কারও মারা যাওয়া সম্ভব নয়। এভাবেই গোটা বিশ্বের এইসব দেশে মৃত্যু ঘিরেও নিষেধের নিয়ম পালিত হয়ে আসছে।