খেলা দেখা নেশা। দেশের হয়ে গলা ফাটাতে ভীষণ ভালোবাসেন। তার জন্য নিজের সাধের বাড়ি বিক্রি করার আগেও দুবার ভাবেননি। ক্রিকেট দুনিয়ায় এমন হাজারও ফ্যান রয়েছেন। তবে এঁর মতো ক্রিকেট পাগল বোধহয় আর কেউ নেই। কার কথা বলছি? আসুন শুনে নিই।
শুরু হয়েছে ক্রিকেটের বিশ্বযুদ্ধ। আর সেই উন্মাদনায় ফুটছে গোটা বিশ্বের ক্রিকেটমহল। চলতই বছরে খেলার আসর বসেছে ভারতে। সেই উপলক্ষে গোটা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দেশে হাজির হয়েছেন ক্রিকেট ফ্যানরা। এই আবহে চর্চায় উঠে এসেছে পাকিস্তানের এক ‘জাবরা ফ্যান’।
আরও শুনুন: পেশায় চিকিৎসক, এশিয়ান গেমসে পদক জয় টিম ইন্ডিয়ার ক্রিকেটারের স্ত্রীর… কে তিনি, জানেন?
বয়স ৭৩। কিন্তু তাতে কী! এখনও তাঁকে দেখলে বোঝার উপায় নেই বয়সের এই হিসাব। নেশা বলতে ক্রিকেট দেখা। তবে তা গ্যালারিতে বসে। দেশের জার্সি গায়ে চাপিয়ে গ্যালারি মাতিয়ে আসছেন বিগত কয়েক দশক ধরে। টিভির স্ক্রিনে অনেকেই হয়তো তাঁকে দেখেওছেন। বিশেষ করে কেউ যদি ১৯৮৬-র ভারত-পাকিস্তানের বিখ্যাত ম্যাচটি দেখে থাকেন। সেখানে পাকিস্তানি খেলোয়াড় মিয়াঁদাদ-এর উইনিং সিক্স গ্যালারিতে এসে পড়েছিল এই ফ্যানের কোলেই। তারপর থেকেই রীতিমতো বিখ্যাত হয়ে যান চৌধুরি আব্দুল জালিল। খেলা দেখা শুরু করেছিলেন, ১৯৬৯ সালে। মাত্র ১৯ বছর বয়স থেকেই গ্যালারিতে গিয়ে দেশের হয়ে গলা ফাটাচ্ছেন। প্রায় ৫০০-রও বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ গ্যালারিতে বসে দেখেছেন তিনি। আর সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট একটা পোশাকেই দেখা গিয়েছে তাঁকে। দেশের পতাকার সঙ্গে মিল রেখে সবুজ রঙের কুর্তা, সেইসঙ্গে পাকিস্তানের পতাকা আঁকা টুপি। একসময় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের কাছেও পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন আব্দুল। যদিও তাঁকে সকলেই ‘চাচা’ হিসেবে চেনেন। এইসময় তিনি আন্তর্জাতিক ম্যাচ দেখতে গেলে, কোনও না কোনও সংস্থা খরচের ভার নিত। বদলে সেই সংস্থার লোগো থাকত তাঁর জামায়। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের তরফেও বেশ কিছু সুবিধা পেতেন তিনি। আর সে দেশের খেলোয়াড়দের কাছে তো তিনি রীতিমতো জনপ্রিয় ছিলেন।
আরও শুনুন: ‘২০২৩’ নয়, চলতি এশিয়ান গেমসেও লেখা ‘২০২২’ কেন জানেন?
কিন্তু ১৯৯৯ সালে ইংল্যান্ড বনাম পাকিস্তানের এক ম্যাচের জন্য তিনি কোনও স্পনসর পাননি। কোনও এক রাজনৈতিক চক্রান্তের শিকার হয়ে প্রায় একঘরে হয়ে পড়েন আব্দুল। পাক ক্রিকেট বোর্ডের তরফেও তাঁর জন্য বিশেষ কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এদিকে তিনিও ম্যাচ না দেখার পাত্র নন। তাই নিজের সাধের বাড়িটাই বিক্রি করে দেন। দীর্ঘদিনের ম্যাচ দেখার ছবি দেখিয়ে জোগাড় করে ফেলেন ভিসাও। তারপর স্বপ্নপূরণ করতে রওনা দেন ইংল্যান্ডের উদ্দেশে। এই ঘটনা আজীবন মনে রাখতে চান আব্দুল। বিশেষত যে বাড়ি তিনি তখন জলের দরে বেচে দিয়েছিলেন, তার বর্তমান দাম নাকি কয়েক কোটি টাকা। তবে এ নিয়ে কোনও আফসোস তাঁর নেই। ক্রিকেতের প্রতি তাঁর যে ভালোবাসা, তার সামনে এইসবই ফিকে হয়ে যায়। সেইসঙ্গে এখন দেশ বিদেশের প্রায় সব ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছেই তিনি পরিচিত মুখ। এই ভালবাসা আগলেই বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে চান পাকিস্তানের এই ‘জাবরা ফ্যান’।