‘গোঁফের আমি, গোঁফের তুমি/ তাই দিয়ে যায় চেনা’- এ তো বলে গিয়েছেন স্বয়ং সুকুমার রায়। কিন্তু সে-কথা মানতে নারাজ একটি সংস্থার কর্তৃপক্ষ। কর্মীদের দাড়িগোঁফে কর্তাদের বেজায় আপত্তি। কেননা দাড়িগোঁফের আড়াল থেকে নয়, ঝকঝকে-তকতকে ‘ক্লিন-শেভ’ মুখই দেখতে চান তাঁরা। সে নয় ভালো কথা, এদিকে এই গেরোয় পড়েই চাকরি হারালেন শতাধিক শিখ কর্মী। কিন্তু দাড়িগোঁফ নিয়ে সংস্থাটির এত আপত্তি-ই বা কেন? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ফের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাতের অভিযোগ উঠল এক সংস্থার বিরুদ্ধে। কর্মীদের দাড়ি রাখার ক্ষেত্রে কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ওই সংস্থা। আর এর জেরেই কাজ হারিয়েছেন শতাধিক শিখ কর্মী। এই ঘটনাটিকে ধর্মীয় প্রথাতে হস্তক্ষেপ হিসেবেই দেখছেন তাঁরা। এহেন ফরমান জারির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ব শিখ সংস্থাও।
আরও শুনুন: পঁচিশ বছরের আত্মীয়তা, হিন্দু কর্মচারীর শেষকৃত্য সম্পন্ন করল মুসলিম পরিবারই
ঘটনাটির সূত্রপাত কানাডার টরন্টো শহরে। সেখানেই নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কর্মরত ছিলেন ওই শিখ ব্যক্তিরা। এ কথা সকলেরই জানা, যে, ধর্মীয় প্রতীক হিসেবেই শরীরের সঙ্গে পঞ্চ ‘ক’ বহন করেন শিখ সম্প্রদায়ের মানুষেরা। আর এই পঞ্চ ‘ক’-এর মধ্যে প্রথমটিই হল কেশ। একদিকে তাঁরা মাথার চুল লম্বা করে বেণী পাকিয়ে রাখেন, আরেকদিকে মুখভরা দাড়ি রাখাই তাঁদের রীতি। কিন্তু সংস্থার জারি করা নয়া নির্দেশিকার দরুন কোপ পড়েছে সেই দাড়িতেই।
কিন্তু কেন আকস্মিকভাবে এহেন নির্দেশিকা জারি করেছে ওই সংস্থাটি?
আরও শুনুন: প্রিয়জনের মৃত্যুতে যেন জীবন না থমকায়, বার্তা দিয়ে ৯ হাজার কিমি বাইক র্যালি শহিদের স্ত্রীর
আসলে এর জন্য দায়ী সেই মারণ ভাইরাসটিই। করোনা ভাইরাসের থাবা থেকে বাঁচতে N-95 মাস্ক পরার বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছিল টরন্টো শহর। বিশেষ করে শহরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা নিরাপত্তারক্ষীদের ক্ষেত্রে আরও বেশি করে সতর্ক হয়েছিল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, যাতে তাঁদের মাধ্যমে কোনোভাবেই রোগ ছড়িয়ে না পড়ে। সেই কারণেই তাঁদের মুখের সঙ্গে মাপসই N-95 মাস্ক পরতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এদিকে মুখে গোঁফ দাড়ি থাকলে মাস্ক এবং মুখের মধ্যে সামান্য ফাঁক থেকে যেতেই পারে। তাতে করোনার পোয়াবারো, তবে ওই সামান্য ফাঁক একজন ব্যক্তির জন্য হয়ে উঠতে পারে প্রাণঘাতী। সাতপাঁচ বিবেচনা করে তাই সকলকেই ক্লিনশেভ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয় শহরের তরফ থেকে। সেই নির্দেশ যথাযথভাবে পালিত হল কি না, বিভিন্ন কর্মস্থলে গিয়ে তা সরেজমিনে খতিয়ে দেখছিলেন পুরসভার কর্মীরা। নির্দেশের অন্যথা হলে বিপাকে পড়ছিল সংস্থাগুলি। উল্লিখিত সংস্থাটি সেই কারণেই এহেন নির্দেশ দিয়েছিল সেখানে কর্মরত শিখ কর্মীদের। কিন্তু ধর্মপ্রাণ শিখদের কাছে দাড়ি কামিয়ে ফেলা প্রায় ধর্মত্যাগ করার মতোই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ফলে সংস্থার নির্দেশ মানতে নারাজ ছিলেন তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে সংস্থাটি ওই শিখ কর্মীদের বরখাস্ত করে। আর সেই পদক্ষেপের বিরুদ্ধেই এবার প্রতিবাদে সোচ্চার হল সে-দেশের শিখ সম্প্রদায়। মানবসভ্যতায় বহু বিচিত্র বদল আনছে করোনার ছোবল। তারই একটি দৃষ্টান্ত যেন হয়ে থাকল এই ঘটনা।