ছেলের চিকিৎসার ভার বইতে অক্ষম মা-বাবা। তাই সন্তানের ইচ্ছামৃত্যুর আর্জি জানিয়ে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু বিদায়ের দিনেও অসহায় মা-বাবার দিকে সাহায্যের হাত বাড়ালেন ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। কীভাবে? শুনে নিন।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি থাকাকালীন অনেক সংবেদনশীল মামলাই ধৈর্য ধরে শুনেছেন ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। মানবিক দৃষ্টিতে বিচার করেছেন বাদী বিবাদী পক্ষের বক্তব্য। শীর্ষ আদালতে কাজের শেষ দিনটিতেও সেই মানবিকতার পরিচয় দিয়ে গেলেন তিনি। ছেলের চিকিৎসার বিপুল ভার বইতে অক্ষম যে মা-বাবা, তাঁদের দিকে বাড়িয়ে দিলেন সাহায্যের হাত।
কী ঘটেছে ঠিক? তাহলে খুলেই বলা যাক।
৩০ বছরের হরিশ রানা দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ। সে অসুখ সারার আশাও নেই হয়তো। মোহালিতে পড়াশোনা করার সময় একদিন পাঁচতলার জানলা থেকে পড়ে যান তিনি। সেই মারাত্মক দুর্ঘটনায় মাথায় ভয়ানক আঘাত লাগে তাঁর। সেই সময় থেকেই কোয়াড্রিপ্লেজিয়াতে আক্রান্ত এই যুবক। বলার অপেক্ষা রাখে না, এহেন অসুখের চিকিৎসা অসম্ভব ব্যয়সাপেক্ষ। সত্যি বলতে, লাইফ সাপোর্টে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে হরিশকে। হরিশের মা-বাবা, নির্মলা এবং অশোক আর সেই ব্যয় বহন করতে পারছেন না। সেই অপারগতার জেরে ছেলের জন্য ইউথানেশিয়া বা ইচ্ছামৃত্যুর আর্জি জানিয়েছিলেন অসহায় মা-বাবা। স্বাভাবিকভাবেই সেই আর্জি গিয়ে পৌঁছয় সুপ্রিম কোর্টে, প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে।
শীর্ষ আদালতে শেষ কর্মদিবসে এই মামলায় গুরুত্বপূর্ণ রায় দেন চন্দ্রচূড়। রোগীর বিস্তারিত দেখভাল সংক্রান্ত কেন্দ্রের একটি স্ট্যাটাস রিপোর্ট পর্যালোচনা করেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি। দেখা যায়, সেই রিপোর্ট বলছে, উত্তরপ্রদেশ সরকার দুরারোগ্য অসুখের রোগীদের গৃহচিকিৎসার বন্দোবস্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সেই ব্যবস্থার আওতায় সবসময়ের জন্য একজন মেডিক্যাল অফিসার ও নার্স পাবেন রোগী, পাশাপাশি একজন ফিজিওথেরাপিস্ট ও একজন পুষ্টিবিদও নিয়মিত তাঁর যত্ন নেবেন। আর সেই রিপোর্টের উপর ভিত্তি করেই চন্দ্রচূড় যোগী সরকারকে নির্দেশ দেন, হরিশের যাবতীয় চিকিৎসার দায়িত্ব নিতে। বাধ্য হয়েই সন্তানের ইচ্ছামৃত্যু চেয়েছিলেন যে অসহায় মা-বাবা, শীর্ষ আদালতের এই নির্দেশে স্বস্তি মিলেছে তাঁদের। আর শেষ কর্মদিবসেও তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে মানবিকতার বার্তা দিয়ে গেলেন ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়।