গত কয়েক মাসে আচমকাই বদলে গিয়েছে জীবনটা। যুদ্ধ এসে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছে যা কিছু প্রিয়। এমনকি নিজের পা দুটোও। তার পরেও মনের জোরে ভর করেই ভিতরে ভিতরে চলেছে অন্য যুদ্ধ। দেশে যুদ্ধ থামেনি বটে, তবে মনে মনে একটা যুদ্ধ জিতে ফেলেছেন ইউক্রেনের এই নার্স। কী করেছেন তিনি? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
সবই চলছিল নিজের ছন্দেই। হঠাৎ করেই ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধঘোষণা করে দিল রাশিয়া।এক লহমায় যুদ্ধক্ষেত্রে বদলে গেল শান্তশিষ্ট দেশটা। চারদিকে বারুদের গন্ধ, গোলা-গুলি-বোমায় ছারখার একের পর এক শহর।
ইউক্রেনের একটি হাসপাতালে নার্সের কাজ করতেন বছর তেইশের ওকসানা। সেটা মার্চ মাসের ঘটনা।দেশজুড়ে যুদ্ধ তখন তুঙ্গে। শহর জুড়ে ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে রুশবাহিনী। একদিন হবু বর ভিক্টরের সঙ্গে বাড়ির দিকে ফিরছিলেন ওকসানা। হঠাৎই রুশে সেনার পাতা মাইনে পা পড়ে যায় তাঁর। সঙ্গে সঙ্গে ভয়াবহ বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে চারপাশ।
প্রাণে বেঁচে গেলেন ওকসানা। তবে সারা জীবনের জন্য খোয়ালেন নিজের পা দুটো। বাঁ হাতের চারটে আঙুলও তাঁর খোয়া গিয়েছে ওই বিস্ফোরণে। একদিকে যুদ্ধের স্মৃতি, অন্যদিকে অঙ্গহানির যন্ত্রণা, সব মিলিয়ে জীবনটা শেষ বলে মনে হয়েছিল তাঁর। চার-চারটি কঠিন অস্ত্রোপচারের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে তাঁকে। সেই অবস্থাতেই নিপ্রো শহরে স্থানান্তরিত করা হয় তাঁকে।
তবে যুদ্ধ ছাড়েননি ওকসানা। প্রবল মনের জোরের সঙ্গে লড়ে গিয়েছেন তিনি। পাশে সব সময় ছিলেন ভিক্টর। টানা ছ-বছর ধরে সম্পর্কে ছিলেন তাঁরা। তবে বিয়ে করব করব করেও এতদিন সময় করে উঠতে পারেননি তাঁরা। গত সপ্তাহেই ইউক্রেনেরই লিভিউ শহরের একটি হাসপাতালে ফের স্থানান্তরিত করা হয় তাঁকে। আর দেরি না করে সেখানেই বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন ওকসানা। হাসপাতালেই ভিক্টরের সঙ্গে চার হাত এক হয়েছে তাঁর।
আর সেই বিয়ের অনুষ্ঠান উপলক্ষে ছোটখাটো একটা উৎসবের পরিমণ্ডল তৈরি হয়েছিল হাসপাতালের ভিতরেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই ওকসানার জন্য ব্যবস্থা করেছিলেন বিয়ের পোশাকের। আনা হয়েছিল বিশেষ কেকও। সব মিলিয়ে হইহই ব্যাপার বললে ভুল হবে না। সেখানে ভিক্টরের হাত ধরে কোমরও দুলিয়েছেন ওকসানা। হাততালিতে ফেটে পড়েছে হাসপাতালের ঘর। পা হারানোর স্মৃতিকে রীতিমতো গো-হারা হারিয়ে দিয়েছে ওকসানা আর ভিক্টরের মনের জোর। তাঁদের সেই আনন্দ-মুহূর্তই ভাইরাল হয়ে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ইউক্রেনের পার্লামেন্টেও দেখানো হয় সেই ভিডিওটি।
আরও শুনুন: রুশ হানায় যদি মৃত্যু হয়! ভয়ে সন্তানের পিঠে নাম-ঠিকানা লিখে রাখছেন ইউক্রেনবাসী
ওই যে রবি ঠাকুর গানে লিখে গিয়েছিলেন, “দু’বেলা মরার আগে মরব না, ভাই, মরব না”- সেই কথারই পুনরুক্তি শোনা গেল যেন ওকসানার গলাতেও। একেবারে মৃত্যু এসে দরজার দাঁড়ানো না পর্যন্ত বাঁচা ছাড়তে নারাজ যুদ্ধবিধ্বস্ত শহরের এই কন্যাও। আর সেই বিশ্বাসে ভর করেই নতুন জীবনে পা রেখেছেন এই দম্পতি। যেই সাহস আর মনোবলকে কুর্নিশ জানাতে ভোলেনি নেটদুনিয়া।