তেমন মনের জোর যদি থাকে তবে পঙ্গুও লঙ্ঘন করতে পারেন গিরি। না, এ কেবল কথার কথা নয়। মাসদুর রহমান বৈদ্য-কে মনে আছে? অল্প বয়সেই দুর্ঘটনায় দুটি পা হারিয়েছিলেন মাসদুর। তবু শারীরিক অক্ষমতাকে তুচ্ছ প্রমাণ করে সাঁতারে পার হয়েছিলেন ইংলিশ চ্যানেল। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা যে প্রতিকূলতা নয়, সে-কথাই যেন আবার প্রমাণ করলেন চেন্নাই নিবাসী গণেশ মুরুগন। কী অসাধ্য সাধন করলেন তিনি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
অনলাইনে খাবার অর্ডার করলেই কিছুক্ষণের মধ্যে দরজায় এসে দাঁড়ান ডেলিভারি বয়। আজ এ-দৃশ্য নতুন কিছু নয়। কিন্তু যদি দেখা যায়, সেই মানুষটি অর্থাৎ ডেলিভারি বয় বসে আছেন হুইলচেয়ারে, তবে অবাক হবেন নিশ্চয়ই। যে-কোনও মানুষই এমন ডেলিভারি বয়ের মুখোমুখি হলে হয়তো ভাববেন, কী করে সম্ভব এই ঘটনা! আর ঠিক সেই অসম্ভব কাজটাকেই সম্ভব করে তুলেছেন গণেশ মুরুগন।
আরও শুনুন: মৃত্যু হয়েছে মালকিনের, ২০টি পোষা বিড়াল খুবলে খেল মৃতদেহ
গণেশের বয়স ৩৭ বছর। মেরুদণ্ডের জটিল সমস্যার কারণে উঠে দাঁড়াতেই পারেন না। কোমরের নীচ থেকে গোটা শরীরটাই প্রায় অকেজো। ২০০৬ সালে সেই যে দুর্ঘটনায় চলার ক্ষমতা হারিয়েছিলেন, তারপর থেকে জীবনটাই যেন বদলে গিয়েছিল গণেশের। অনেকেই হয়তো এই প্রতিকূলতার মুখে পড়ে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারতেন না। কিন্তু ব্যতিক্রম গণেশ। মনের জোর, ইচ্ছাশক্তি থাকলে যে সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ওঠা যায়, তা তিনি বাস্তবে প্রমাণ করেছেন। বেশ কয়েক বছর ঘরে বসেই বিভিন্ন কাজ করতেন গণেশ। তাতে রোজগার হত সামান্যই। কায়ক্লেশে দিন কাটাতেন আর স্বপ্ন দেখতেন দিনবদলের। তারপর একদিন হাতে এল মোটরচালিত একটি হুইলচেয়ার। অত্যাশ্চর্য এই আধুনিক যন্ত্রটি নির্মাণ করেছেন মাদ্রাজ আইআইটির গবেষকরা। সাধারণ হুইলচেয়ারের থেকে এর কর্মক্ষমতা স্বাভাবিক ভাবেই বেশি। আর এই হুইলচেয়ারকে অবলম্বন করেই জীবনের নতুন স্বপ্ন দেখা শুরু গণেশের। ঠিক করেন, খাবার ডেলিভারির কাজ করবেন তিনি। সেইমতো নিযুক্ত হন একটি ফুড ডেলিভারি সংস্থার ডেলিভ্যারি ম্যান হিসাবে। বলা যায়, এই দেশে গণেশই প্রথম ব্যক্তি, যিনি হুইলচেয়ারে বসে খাবার ডেলিভারি করে থাকেন।
আরও শুনুন: বিয়ের খরচের ২৩ লাখ টাকা উপহার দিন নিমন্ত্রিতরাই! অদ্ভুত আবদার নবদম্পতির
এর আগে তিনি যাতায়াত করতেন তাঁর বিশেষ স্কুটারে চড়ে। তখন আলাদা ভাবে সঙ্গে রাখতে হত একটি হুইলচেয়ার। এবং অবশ্যই সাহায্যের জন্য লাগত আরও একজন মানুষকে। তবে সেসব এখন অতীত। মোটরচালিত হুইলচেয়ারটি তিনি নিজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। এমনকী লিফটে চেপে ডেলিভারির জন্য দশ তলাতেও উঠতে পারেন গণেশ। এর ফলে বেড়েছে রোজগার-ও। আগের তুলনায় এখন প্রায় ৬ হাজার টাকা বেশি রোজগার করেন গণেশ। আর গ্রাহকরাও শুধু খুশি নন, গণেশের এই অদম্য মনের ইচ্ছা দেখে বিস্মিতও।
হুইলচেয়ারে বসেই এক চিকিৎসকের জীবনজয়ের গল্প শুনিয়েছিলেন পরিচালক তপন সিংহ। আর গণেশের জীবনের গল্প যেন বলছে, সিনেমার পর্দা শুধু নয়, ‘এই জীবনেও হয় ভাই সত্যি, সব সত্যি’।