শেরপা মানেই অসম্ভব সাহস আর মনের জোর। পর্বত চড়তে যাওয়া মানুষদের কাছে নিদারুণ ভরসার জায়গাও ওই শেরপারাই। পর্বতের শিখর ছোঁয়া মানুষগুলোর সাফল্যের কথা সামনে আসে বারবার। কিন্তু সেই সাফল্যের নেপথ্যে থাকা এইসব শেরপাদের কথা থেকে যায় অন্তরালেই। প্রত্যেকটি অভিযাত্রী দলের সঙ্গে অভিযানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে থাকেন শেরপারাও। কতবার যে একই পাহাড় জয় করেন তাঁরা, তার ইয়ত্তা নেই। নেপালের এই শেরপার কথাই ধরুন না, অন্তত ২৬ বার এভারেস্ট জয় করেছেন তিনি। নিজের রেকর্ড ভেঙেছেন নিজেই। আসুন, শুনি তাঁর গল্প।
অসম দুঃসাহসীকতা তাঁদের রক্তে। শেরপারা যেন কিছুটা অন্য ধাতুতেই গড়া। তাঁদের অসম্ভব পরিশ্রমের ক্ষমতা, যে কোনও পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার যে গুণ, তাকে কুর্নিশ না করলেই নয়। না, শুধু পেশার তাগিদেই নয়, পাহাড়ের অদম্য নেশাও এই মানুষগুলোর পর্বাতারোহণের পিছনে অন্যতম কারণ। আর তার জন্যই বোধহয় সমস্ত বিপদকে তুচ্ছ করে পরিবার-স্বজন সবাইকে ফেলে বারবার পাহাড়ের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েন তাঁরা।
আরও শুনুন: এভারেস্ট-সহ ছুঁয়েছেন পাঁচ সর্বোচ্চ শৃঙ্গ, প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে রেকর্ড প্রিয়ঙ্কার
নেপালি শেরপা কামি রিটা। পরিবারের হাজার দুশ্চিন্তা, বাঁধা কোনও কিছুই আটাকাতে পারেনি কামির পাহাড় চড়ার অদম্য নেশাকে। আর এ ভাবেই ২৬ বার এভারেস্ট জয় করে ফেলেছেন তিনি। নিজের রেকর্ড ভেঙেছেন নিজেই। নাম তুলেছেন গিনেস বিশ্ব রেকর্ডে।
একবার নয়, দু-বার নয়, মোট ২৬ বার পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্গম, সবচেয়ে উচ্চতম শৃঙ্গ এভারেস্ট জয় করেছে কামি। তা-ও আবার ৫২ বছর বয়সে। শনিবার সন্ধ্যে নাগাদ এভারেস্টের শৃঙ্গে পৌঁছন কামি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আর ১০ জন নেপালি পর্বতারোহী। দলের নেতৃত্বে ছিলেন কামি স্বয়ং।
কামি রিটার বাবাও ছিলেন পেশায় একজন শেরপা। বাবার দেখানো পথ ধরেই শেরপার পেশা বেছে নিয়েছিলেন নেপালের বাসিন্দা কামিও। প্রথম বার এভারেস্টের শিখর ছুঁয়েছিলেন ১৯৯৪ সালে। তার পর থেকে অসংখ্যবার বিভিন্ন চূড়া জয় করেছেন কামি। তার মধ্যে রয়েছে কে-টু থেকে শুরু করে লোৎসে, মানাসলু-র মতো আরও বেশ কয়েকটি শৃঙ্গ।
পাহাড় চড়ার কাজ সহজ নয় মোটেই। প্রত্যেকটি বাঁকে বাঁকে সেখানে অপেক্ষা করে থাকে বিপদ। আবহাওয়ার পরখ এবং উপস্থিত বুদ্ধি সবটাই সেখানে খুব জরুরি। এত বছরের অভিজ্ঞতায় সেই দক্ষতাটাই অর্জন করেছেন তিনি। গত বছরই হয়তো এই রেকর্ডই গড়ে ফেলতে পারতেন কামি। তবে আবহাওয়ার গন্ডগোল টের পেয়ে সেই অভিযান বাতিল করে দেন। ফের সমস্ত মনের জোর একত্রিত করে ফের এ বছর বেরিয়ে পড়েন এভারেস্টের উদ্দেশে।
আরও শুনুন: ইচ্ছাশক্তিতেই আসে সাফল্য, দেশবাসীকে প্রেরণা জোগায় এভারেস্ট জয়ী শিবাঙ্গীর গল্প
নেপালের পর্যটন দপ্তরের ডিরেক্টর জেনারেল তারানাথ অধিকারী জানান, নিজের রেকর্ড ভেঙে ফের নয়া রেকর্ড গড়েছেন কামি রিটা। নাম তুলেছেন গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে। তাঁর এই সাফল্যে খুশি কামির পরিবার। জানিয়েছেন তাঁর স্ত্রী জাঙ্গমু নিজেই। বহু পর্বতারোহীই একবার এভারেস্ট জয় করার পরেও পাহাড়ের টানে ফের ছুটে গিয়েছেন সেখানে। তবে কামির মতো এতবার এভারেস্ট শৃঙ্গ ছুঁয়ে আসার সাফল্য ঝুলিতে পুরতে পারেননি আর কেউই।