হনুমান মন্দির। কিন্তু সেখানে পুজোর দায়িত্ব সামলান মুসলিমরা। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। দেশে রয়েছে এমনই এক হনুমান মন্দির। হিন্দুরাও সেখানে ভক্তিভরে পুজো দিতে আসেন। তবে পুজোর দায়িত্ব মুসলিম হাতে থাকার নেপথ্যে রয়েছে এক কাহিনি। কোথায় রয়েছে এমন মন্দির? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ধর্মবিশ্বাস ভেদে আলাদা হয় প্রার্থনার স্থান। হিন্দুরা যেমন ভক্তিভরে মন্দিরে পুজো দেন, মুসলিমরাও তেমনই নামাজ পড়তে যান মসজিদে। কিন্তু দেশে এমনও কিছু মন্দির রয়েছে, যেখানে একইসঙ্গে প্রার্থনা করেন হিন্দু-মুসলিম সকলেই। দক্ষিণের এই হনুমান মন্দিরেও ধরা পড়ে সেই ছবি। বলা ভালো, এই মন্দিরে পুজোর অধিকাংশ দায়িত্বই সামলান মুসলিমরা।
আরও শুনুন: বছরে একদিনই খোলা থাকে মন্দির, নাগচন্দ্রেশ্বরের দর্শনে কাটে কালসর্পদোষ
শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। কর্ণাটকের গাদাগ জেলার লক্ষ্মেশ্বর (Lakshmeshwar) হনুমান মন্দিরে ধরা পড়ে এমনই সম্প্রীতির ছবি। মন্দিরের প্রধান আরাধ্য হনুমান। বিগ্রহের আরতি করা থেকে আরম্ভ করে যাবতীয় কাজ সবই মুসলিমরা করেন। হিন্দুরাও এতে কোনও আপত্তি তোলেন না। বরং খুশিমনে তাঁরাও হনুমান পুজোয় সামিল হন। আর এমনটা হয়ে আসছে প্রায় ১৫০ বছর ধরে। জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যমের দাবি অনুয়ায্যী, ওই অঞ্চলে বহু হিন্দু-মুসলিমের বাস। তাঁরা সকলেই মিলেমিশে থাকেন। তাই এলাকার এই প্রসিদ্ধ মন্দিরেও দুই সম্প্রদায়ের মানুষের অবাধ বিচরণ চোখে পড়ে। তবে পুজোর দায়িত্ব মুসলিমদের হাতেই কেন, তার নেপথ্যে রয়েছে এক কাহিনি।
আরও শুনুন: নাড়ির স্পন্দন পেলে তবেই চলে, বিগ্রহের হাতেও দিব্যি সক্রিয় ‘অলৌকিক’ ঘড়ি
শোনা যায়, একসময় এই অঞ্চলে এতবড় হনুমান মন্দির ছিল না। গ্রামের প্রান্তে ছোট একটি মন্দিরে পূজিত হতেন পবননন্দন। সেইসময়ও হিন্দু মুসলিম সকলেই যাতে মন্দিরে পুজো দিতে পারেন সেই ব্যবস্থা ছিল। মূলত দুই সম্প্রদায়ের সম্প্রীতির কথা মাথায় রেখেই তৈরি হয়েছিল এই মন্দির। কিন্তু হঠাৎ করেই মড়ক লাগে ওই গ্রামে। প্রায় সকলেই গ্রাম ছেড়ে পালাতে শুরু করেন। একসময় কার্যত জনমানবহীন হয়ে পড়ে ওই গ্রাম। তখন পাশের গ্রাম থেকে কিছু মুসলিম পরিবার এসে ওই হনুমান মন্দিরে পুজো শুরু করেন। নিজেদের ধর্মীয় বিশ্বাস সরিয়ে রেখে, নিষ্ঠাভরে হনুমানের পুজো করতে থাকেন তাঁরা। ধীরে ধীরে পরস্থিতি স্বাভাবিক হয়। গ্রামে ফিরে আসেন পুরনো বাসিন্দারা। তখন আবারও মন্দিরের দায়িত্ব হিন্দুদের হাতেই তুলে দিতে চান ওই মুসলিম পরিবারগুলি। কিন্তু তেমনটা আদতে হয়নি। গ্রামের সকলে মিলে ঠিক করেন, মন্দিরে পুজোর দায়িত্ব ওই মুসলিম পরিবারের হাতেই থাকুক। তাঁরা যেভাবে নিষ্ঠা সহকারে দেবতার আরাধনা করে এসেছেন, তা তুলনাতীত বলেই মনে করেন সকলে। সেই থেকেই এই মন্দিরে পুজোর দায়িত্ব সামলে আসছেন মুসলিমরা। এখনও যে ব্যবস্থায় কোনও বদল হয়নি। হিন্দুরিতি মেনেই পূজিত হন হনুমান। স্রেফ সেই কাজগুলো করেন মুসলিমরা। প্রতিদিন মন্দিরে দূরদূরান্ত থেকে ভক্তরা এসে ভিড় জমান। সেক্ষেত্রেও কোনও ধর্মীয় বেড়াজাল নেই। যে কোনও সম্প্রদায়ের মানুষ এই মন্দিরে এসে পুজো দিতে পারেন। দেশের সাম্প্রতিক অবস্থার দিক থেকে বিচার করলে, এই মন্দিরের কাহিনি হয়তো অবাক করবে সকলকেই, কিন্তু এমনটা বাস্তবেই সম্ভব করে দেখিয়েছে কর্ণাটকের এই মন্দির।