প্রবল বৃষ্টি মানেই বন্যার আশঙ্কা, আর তার চেয়েও বড় আশঙ্কা খাবার না জোটার। তাই পরিবারের ভার কমানোর জন্য মেয়েদের বিদায় করার পথ খুঁজছে পাকিস্তান। নাবালিকাদের বিয়ের হিড়িক পড়েছে দেশ জুড়ে। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
মেয়ে মানেই পরিবারের বোঝা, এ তো এই সময়ে দাঁড়িয়েও অনেকের চেনা বুলি। সেই ভাবনারই ছবি সম্প্রতি অন্যভাবে ধরা পড়ল পাকিস্তানে। যেখানে বন্যা হলে খাবার জুটবে না, এই ভয়ে খাবার খাওয়ার মুখ কমাতে তৎপর পরিবারগুলি। কিন্তু কমবে কীভাবে? যেনতেন প্রকারেণ মেয়েদের বিয়ে দিয়ে বিদায় করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে তারা। উপরন্তু তাতে কন্যাপণ পাওয়ার আশাও আছে, যা বিপদের সময়ে পুঁজি। মেয়ের বিয়ের বয়স হয়েছে কি হয়নি, তাও ভাবার প্রয়োজন নেই। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে বাল্যবিবাহের হিড়িক। কেবল বৃষ্টির ভয়েই তড়িঘড়ি বিয়ে হওয়া এই ‘মনসুন ব্রাইড’-দের সংখ্যাটা নিয়ে উদ্বিগ্ন নারী অধিকার কর্মীরা।
আরও শুনুন:
ঘরের বউকে ধর্ষণ মোহন্তের, প্রতিবাদে উত্তাল হয়েছিল বাংলা
এ কথা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই যে, যতরকম কারণে বাল্যবিবাহ চলে, দারিদ্র্য তার অন্যতম কারণ। পরিবারে একটি অন্তত পেট কমে যাবে, এই কথা ভেবে অনেক পরিবারই মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার কথা ভাবে। যদিও এখান থেকে এ কথাও স্পষ্ট হয় যে, মেয়েকে পরিবারের বাড়তি অংশ বলে না ভাবলে প্রথমেই মেয়ের দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলার কথা মনে আসে না। পাকিস্তানের একটা বড় অংশের মানুষও এই পথেই হাঁটছেন বলে জানা গিয়েছে। তার চেয়েও বড় কথা, এই মেয়েদের বেশিরভাগই নাবালিকা। যাদের এই বয়সে বিয়ে হওয়ার কথাই ছিল না। এমনিতেই নারীর উপর চাপিয়ে দেওয়া নানাবিধ অনুশাসনের সঙ্গে নিয়ত যুঝতে হয় সে দেশের মেয়েদের। তার উপরে প্রকৃতিও যেন তাদের বিপক্ষে। প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার জন্যেই এভাবে বাল্যবিবাহের শিকার হচ্ছে পাক কিশোরীরা।
জানা যাচ্ছে, পাকিস্তানে বাল্যবিবাহের হার কিছুটা কমেছিল বিগত কয়েক বছরে। কিন্তু ২০২২ সালের অভূতপূর্ব বন্যা পরিস্থিতি ফের সব হিসেব বদলে দিয়েছে। এমনিতেই সে দেশে রাজনৈতিক টানাপোড়েনের দরুন অর্থনীতি টলোমলো। তার উপরে লাগাতার বৃষ্টি যদি বন্যা ডেকে আনে, সেখানে রোজের খাবারটুকু জোটানোই প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। অথচ জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে বৃষ্টি না হলে মুখ থুবড়ে পড়বে দেশের খাদ্যের জোগান। লক্ষ লক্ষ কৃষকেরা চাষের জন্য সেদিকেই তাকিয়ে থাকেন। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের দরুন এখন লাগাতার ভারী বৃষ্টি হওয়ারই সম্ভাবনা। তার জেরে একদিকে শস্য নষ্টের আশঙ্কা, অন্যদিকে বন্যা, ভূমিধসেরও আশঙ্কা। গত বন্যার ক্ষয়ক্ষতিই এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি সিন্ধ প্রদেশের বহু এলাকা। সেখানে নতুন করে বৃষ্টির আশঙ্কায় আগে থেকেই কাঁটা পাকিস্তান। আর এই পরিস্থিতিতেই বাড়ছে বাল্যবিবাহের হিড়িক। বিশেষ করে গতবারের বন্যাকবলিত এলাকাগুলিতে। এক বছরের মধ্যে একটি গ্রামেই অন্তত ৪৫ জন নাবালিকার বিয়ে হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
আরও শুনুন:
বিয়ে ভাঙলেও নেই রেহাই! অন্য পুরুষের কাছে চড়া দামে বিক্রি স্ত্রী, অদ্ভুত প্রথা রাজস্থানে
বিয়ে হওয়া নাবালিকারা অনেকেই জানাচ্ছে, তারা মনে করেছিল বিয়ের দরুন তাদের অবস্থা খানিক বদলাবে। বাড়ির তুলনায় একটু বেশি সচ্ছলতার মুখ দেখা যাবে। অথচ বিয়ের পর দেখা যাচ্ছে, তাদের বাপের বাড়ি যেমন কন্যাপণ পাওয়ার আশায় বিয়ে দিয়েছে, তেমনই ওই পণ জোগাড় করতে গিয়ে ধার করে শ্বশুরবাড়ির অবস্থা নাকাল। সব মিলিয়ে মেয়েদের জীবন তলিয়ে যাচ্ছে আরও একটু অন্ধকারেই।