চলতে চলতে স্রেফ নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল একটি আস্ত বিমান। তারই সঙ্গে হারিয়ে গিয়েছিলেন প্রায় আড়াইশো যাত্রীও। বছরের পর বছর ঘুরে গিয়েছে, কিন্তু সেই বিমানের কোনও হদিশই মেলেনি এখনও পর্যন্ত। ভৌতিক কাহিনিকেও বুঝি হার মানায় এই রহস্য। আসুন, শুনে নেওয়া যাক এই আশ্চর্য ঘটনার কথা।
২০১৪ সালের ৮ মার্চ। রাত ১২টা বেজে ৪১ মিনিটে কুয়ালালামপুর বিমানবন্দর থেকে রওনা দিল মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের বিমান এমএইচ ৩৭০। ভোর সাড়ে ছ’টায় বেজিং পৌঁছনোর কথা তার। রাত ১টা ১৯ মিনিটে ক্যাপ্টেনের তরফ থেকে ভেসে এল বার্তা, ‘শুভরাত্রি’। সবকিছু ঠিকঠাক। কোথাও কোনোরকম বিপদের আভাস মাত্র নেই। কিন্তু সেই শান্তি যে আসলে এক বড় ঝড়ের পূর্বাভাস, সে কথা কে জানত!
আরও শুনুন: ৪০০ বছর ধরে সমুদ্রে ঘুরে চলেছে ভূতুড়ে জাহাজ! কী এই রহস্য?
প্রথম আঁচ পেল কন্ট্রোল রুম। এমএইচ ৩৭০-এর সঙ্গে কোনোরকম যোগাযোগ করা যাচ্ছে না কেন? শেষ পাওয়া বার্তা অনুযায়ী, ভিয়েতনামের আকাশসীমায় প্রবেশ করে গিয়েছে বিমান। কোনও যান্ত্রিক ত্রুটি বা অন্য কোনও গোলযোগের সংকেত মেলেনি। আসেনি সাহায্য চাওয়ার কোনও বার্তাও। অথচ বিমানের সঙ্গে কোনোভাবেই যোগাযোগ করে উঠতে পারছে না এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল। এদিকে বিমানের গতিপথ না জানা গেলে দুর্ঘটনার মুখ পড়তে পারে অন্য বিমানও। তাই বারেবারে রিসিভার তুলে নিচ্ছিলেন কন্ট্রোল রুমের আধিকারিকেরা, “হ্যালো, এমএইচ ৩৭০…?”
আরও শুনুন: মানুষ বড় হতাশ! ক্লান্ত জীবন থেকে মুক্তি দিতে ৯৩ জনকে খুন সিরিয়াল কিলারের
কোনও উত্তর মেলেনি। পরদিন নির্ধারিত সময়ে বেজিং এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করেনি এমএইচ ৩৭০। সংশ্লিষ্ট সকলের মাথায় হাত। দুই বিমানবন্দরেই পাগলের মতো ছুটে বেড়াচ্ছেন যাত্রীদের আত্মীয়রা। ২২৭ জন যাত্রী ছিলেন ওই বিমানে। তা ছাড়া ছিলেন আরও ১২ জন ক্রু। বিমানের চালক ছিলেন দক্ষ পাইলট জাহারে আহমদ শাহ, যাঁর ১৮ হাজার ঘণ্টা সফল উড়ানের অভিজ্ঞতা ছিল। এমন পাইলটের হাতে বিমানের কোনও দুর্ঘটনা ঘটবে, এমনটা ভাবাই যায় না। এদিকে কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটেনি। কোনোরকম সন্ত্রাসবাদী হামলা বা প্লেন হাইজ্যাকিং-এরও খবর নেই। ১২টিরও বেশি দেশ ২৭ হাজার বর্গ নটিক্যাল মাইল এলাকা জুড়ে চিরুনি তল্লাশি চালাতে শুরু করল। এমনকি ভারত মহাসাগর সহ একাধিক সমুদ্রে ডুবুরি নামিয়েও দেখা হল, বিমানটি সমুদ্রে ভেঙে পড়েছে কি না। কিন্তু রহস্য রয়ে গেল যে তিমিরে সেই তিমিরেই। বিমান কিংবা যাত্রীদের কোনোরকম খোঁজ পাওয়া দূরে থাক, মিলল না কোনও ধ্বংসাবশেষ, এমনকি ব্ল্যাকবক্সটিও। খোদ এফবিআই-এর তদন্তেও কোনও সুরাহা হল না। যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেল একটা গোটা বিমান।
আরও শুনুন: কিশোরীদের রক্তে স্নান, ৬০০ জনকে খুন, কুখ্যাত মহিলা সিরিয়াল কিলারের রুদ্ধশ্বাস গল্প
জাদুকর পি সি সরকার আস্ত ট্রেন ভ্যানিশ করে দিতে পারতেন বলে শোনা যায়। কিন্তু এ তো ম্যাজিক নয়, ঘোর বাস্তব। আর সেই বাস্তবেই কিনা আস্ত একখানা প্লেন সম্পূর্ণ উধাও হয়ে গেল আকাশের বুক থেকে। আর গেল তো গেলই, তার একটা টুকরোর পর্যন্ত খোঁজ মিলল না আর কোনও দিন। খোঁজ মিলল না বিমানের পেটের মধ্যে থাকা এতজন যাত্রীরও। উড়োজাহাজের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় রহস্য বলে তকমা পেয়েছে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের এমএইচ ৩৭০ বিমানটির এইভাবে উধাও হয়ে যাওয়া। কোনও সূত্র না রেখে এতগুলো মানুষ সহ একটা গোটা বিমান হারিয়ে যাওয়া কি কোনও ষড়যন্ত্র, নাকি ভূতুড়ে ঘটনা, জবাব মেলেনি সে প্রশ্নের।