ভূপর্যটক বা গ্লোবট্রটার বললেই বাঙালির মনে পরে সোনার কেল্লা-র মন্দার বোসের কথা। তিনি অবশ্য ভুয়ো ভূপর্যটক। বরং একজন সত্যি ভূপর্যটকের গল্প শুনে নেওয়া যাক। মনের আনন্দে যিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন ১৯৩টি দেশ। কে তিনি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
বোতলের ভাঙা কাচে গাড়ির টায়ার পাংচার। জটায়ু অবাক হয়ে বললেন, পৃথিবীর কাচ কে এনে এখানে জড়ো করেছে। বলামাত্র ফেলুদার সেই ইঙ্গিতপূর্ণ উত্তর- তাহলেই বুঝুন কাজটা কার! অর্থাৎ কিনা ভূপর্যটকের ক্ষেত্রেই এ কাজ করা সম্ভব! সে আবার এমন ভূপর্যটক, যার জ্যাকেটখানা ধর্মতলা থেকে কেনা হলেও অবাক হন না ফেলুদা। মন্দার বোসের মতো ভূপর্যটককে দেখে এমন সন্দেহ হওয়া অবশ্য স্বাভাবিক। তবে, সত্যিই এমন ভূপর্যটক আছেন, যাঁরা মনের আনন্দেই প্রায় গোটা পৃথিবী ঘুরেছেন। তেমনই একজন আমেরিকার বাসিন্দা লুইসা ইউ।
আরও শুনুন: শুধু আবুধাবি নয়, ভারতের বাইরে রয়েছে আরও কিছু বিখ্যাত হিন্দু মন্দির
এখন তাঁর বয়স ৭৯ বছর। এর মধ্যেই তিনি ঘুরেছেন বিশ্বের ১৯৩টি দেশে। হিসাব বলছে, এই মুহূর্তে বিশ্বে এই ক’টি দেশই রয়েছে। কেউ কেউ দাবি করেন, দেশের সংখ্যা ১৯৫, তবে প্রচলিত হিসাবে বিশ্বে মোট ১৯৩টি দেশ রয়েছে এমনটাই ধরা হয়। আর সেই হিসাবে লুইসা বিশ্বের সমস্ত দেশেই অন্তত একবার পা রেখেছেন অর্থাৎ ঘুরে ফেলেছেন গোটা পৃথিবী। মাত্র ২৩ বছর বয়সে শুরু করেছিলেন ঘোরা। তারপর কেটেছে ৫০ বছরেরও বেশি। এরই মধ্যে গোটা পৃথিবী ঘুরে ফেলেছেন তিনি। প্রথমে ঝোঁকের বশে শুরু করলেও, দেশে দেশে ঘুরে বেড়ানো কয়েক বছরের মধ্যেই তাঁর নেশায় পরিণত হয়। তাঁর কথায়, ছোটবেলায় সিনেমার দৃশ্যে বিদেষের ছবি দেখে এই ঘুরে বেড়ানোর ভুত মাথায় চাপে। সুন্দর সুন্দর পাহাড়, নদী, ঝরনা এইসব দেখবেন সামনে থেকে এমনই পণ করে বসেন। শুরটা করেছিলেন নিজের দেশ আমেরিকা দিয়েই। সেও তো কম সুন্দর জায়গা নয়। যদিও এর জন্য নিজের ক্যারিয়ারের দিক সম্পূর্ণ বদলে ফেলেন লুইসা। মেডিক্যাল টেকনোলজি নিয়ে যাবতীয় পড়াশোনা করলেও, জীবিকা হিসেবে বেছে নেন ট্যুরিজম। নিজেই চালু করেন ট্রাভেল এজেন্সি। তারপর শুরু হয় দেশের বাইরে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরার অভিযান।
আরও শুনুন: সুদূর আবুধাবিতেও এবার বইবে পতিতপাবনী গঙ্গা, কীভাবে?
আমেরিকা শেষ করে ইউরোপ ভ্রমণ শুরু করেন। ইটালি দেখে যারপরনায় মুগ্ধও হন। চলে আসেন এশিয়া মহাদেশের দেশগুলো ঘুরে দেখতে। স্বাভাবিক ভাবেই, ভারতেও এসেছেন লুইসা। গিয়েছেন থাইল্যান্ডের মতো পর্যটক আকর্ষক দেশেও। বাদ দেননি আফ্রিকার ছোট ছোট দেশের একটাও। লিবিয়া, নাইজেরিয়া, কেনিয়া সব দেশেই ঢুঁ মেরে এসেছেন। শেষের দিকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশেও ঘুরেছেন লুইসা আরব, ইরান সব জায়গায় গিয়েছেন। তবে সব দেশে পৌঁছে যাওয়াই যে সহজ ছিল তা নয়। বেশ কিছু দেশে ঢোকার অনুমতি পাওয়াই কঠিন। বিশেষ ক্রে, লুইসা ঠিক করেছিলেন রাষ্ট্রসংঘের সমস্ত দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করবেন। এই কাজও খুব একটা সহজ ছিল না। তবে তিনি পেরেছেন। ২৩ বছর বয়সে যেমনটা ভেবেছিলেন গোটা বিশ্ব ঘুরে দেখবেন, তেমনটাই করে দেখিয়েছেন। ২০২৩ সালে সার্বিয়ায় গিয়ে নিজের বিদেশ ভ্রমণ সম্পূর্ণ করেন লুইসা। তাঁর এই কাজকর্মের সমর্থকও রয়েছে যথেষ্টই। যারা লুইসাকে বিদেশের অচেনা জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর জন্য সবসময় সাহস জুগিয়েছেন। যদিও যথেষ্ট মনের জোর না থাকলে এই কাজ করা হয়তো সম্ভব হত না। তাই নেটদুনিয়াতেও লুইসা রীতিমতো প্রশংসা কুড়িয়ে থাকেন।