কোনও উচ্চপদস্থ পুরুষ অফিসে আসছেন রংবেরঙের স্কার্ট আর হাই হিল পরে। এমনটা দেখতে আমাদের চোখ যে অভ্যস্ত নয়, তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু সেই অভ্যাসকেই তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন ৬৩ বছরের এই ব্যক্তি। বেশ কয়েক বছর ধরে তথাকথিত মেয়েলি পোশাকে সেজেই অফিসে আসেন তিনি। আর এই পোশাকই নাকি তাঁকে আত্মবিশ্বাস জোগায় বলে দাবি ওই ব্যক্তির। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
‘মাই বডি মাই চয়েস’। সমস্ত আকারের, সব ধরনের শরীরই যে সুন্দর, সেই বার্তাই পৌঁছে দিতে চায় আজকের বিশ্ব। আর সেই পছন্দের হাত ধরেই বাজারে খাতা খুলেছে ‘ইউনিসেক্স’ বা ‘জেন্ডারলেস ফ্যাশন’-এর মতো ভাবনা। শুধুমাত্র লিঙ্গনাম দিয়ে আর পোশাক বা রুচিকে বাঁধতে রাজি নন অনেকেই। ব্যক্তিমানুষের আলাদা আলাদা পছন্দের অধিকারকেই স্বীকৃতি দিতে চান তাঁরা। আর সেই ভাবনাতেই বিশ্বাস করেন ৬৩ বছরের মার্ক ব্রায়ান। তাই শর্ট স্কার্ট আর হাই হিল, এই তাঁর অফিসের ইউনিফর্ম। পেশায় রোবোটিক্স ইঞ্জিনিয়ার তিনি। কেবলমাত্র খেলার মাঠ ছাড়া সব জায়গাতেই হিলওয়ালা জুতো তাঁর নিত্যসঙ্গী। এহেন পোশাক নিয়ে কোনও আপত্তি নেই তাঁর স্ত্রীয়েরও, জানিয়েছেন ওই ব্যক্তি। বরং তাঁকে পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে সাহায্যই করেন তাঁর স্ত্রী। শুধু স্ত্রী নয়, তিন সন্তানও রয়েছে তাঁর। কিন্তু কে কী ভাববে, তা নিয়ে আদৌ ভাবতে চাননি এই ব্যক্তি। টেক্সাসের বাসিন্দা এই প্রৌঢ় জানিয়েছেন, একটানা পুরুষদের পোশাক পরতে পরতে একঘেয়েমি এসে গিয়েছিল তাঁর। ২০১৫ সাল নাগাদ তাই তিনি ঠিক করেন, এবার ছকভাঙা পথেই হাঁটবেন। প্রথমে স্যুটের সঙ্গেই হাই হিল পরতে শুরু করেছিলেন মার্ক। তারপর যা তথাকথিত মেয়েলি রং, সেই রঙের পোশাক বাছেন তিনি। লাল টাই আর লাল জুতো পরেই চলে যান অফিসে। এরপর তাঁর স্ত্রীই তাঁকে উৎসাহ দেন স্কার্ট কিংবা ড্রেসের মতো পোশাক পরার জন্যে।
আরও শুনুন: বিমানবন্দরে জোর করে খোলানো হয়েছিল পোশাক, ভয়াবহ অভিজ্ঞতা রূপান্তরকামী মডেলের
লিঙ্গপরিচয় অনুযায়ী কে কী পোশাক পরবে, তা বেঁধে দিয়েছে সমাজ। আর সেই ছক ভাঙলেই ছুটে আসে বাঁকা চোখের চাহনি। তাও কোনও মেয়ে যদি তথাকথিত পুরুষের পোশাক পরেন, তা নিয়ে অতটাও সমালোচনা হয় না। কিন্তু কোনও পুরুষ মেয়েদের পোশাক পরবেন, এমনটাও কি হতে পারে? আসলে পিতৃতান্ত্রিক সমাজ পুরুষকে সমাজের শীর্ষ স্থানে বসিয়েই রেখেছে। তাই তাকে সকলে অনুকরণ করবে, এর মধ্যে সে সমস্যার কিছু দেখে না। হ্যাঁ, কোনও মেয়ে যদি কেবল পুরুষের পোশাকই পরে চলেন সবসময়, সেক্ষেত্রে তাঁকে পুরুষালি বলা হবে, মনে করা হবে তিনি যেন ঠিক মেয়েলি নন। কিন্তু এই সমাজে নারীকে যেহেতু পুরুষের তুলনায় দুর্বল এবং পিছিয়ে থাকা বলেই মনে করা হয়, ফলে কোনও পুরুষ নারীর পোশাক পরলে তা নিয়ে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ কটাক্ষের ঝড় বয়ে যায়। অথবা মনে করা হয়, তিনি সমকামী বা ট্রান্সজেন্ডার বলেই নারীর পোশাক পরেছেন। কিন্তু নিজের অভিনব ফ্যাশন স্টেটমেন্ট দিয়ে এই ভাবনার মূলেই আঘাত করতে চান মার্ক ব্রায়ান। তাঁর মতে, যে কোনও মানুষের যৌন পরিচয় যাই হোক না কেন, তা তাঁর পোশাক বা রুচিতে গণ্ডি টানতে পারে না। ইচ্ছেমতো পোশাক পরতে পারাকে একরকম স্বাধীনতা বলেই দেখতে চান এই ব্যক্তি।