হৃৎপিণ্ড নেই। শোনা যায় না হৃৎস্পন্দনও। তবু ১ মাস বেঁচে ছিলেন এক ব্যক্তি। গোটা বিশ্বেই যা নজির। কীভাবে সম্ভব হয়েছিল এ ঘটনা? আসুন শুনে নিই।
অলৌকিক নয়, লৌকিক। হৃৎপিণ্ড ছাড়াই এক মাস এই পৃথিবীতে বেঁচে ছিলেন এক ব্যক্তি। এ অবশ্য কোনও কারসাজি বা অতিপ্রাকৃতিক ঘটনা নয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর অভিনব উদ্ভাবনের কারণেই সম্ভব হয়ে উঠেছিল এ ঘটনা।
আরও শুনুন: বিয়ের দিন চুল কেটে ফেললেন কনে, দান করলেন ক্যানসার রোগীদের
অবিশ্বাস্য এই নজির যিনি গড়েছিলেন, তিনি ক্রেগ লুইস। বছর ৫৫ যখন তাঁর বয়স, সেই সময় এক বিরল রোগে আক্রান্ত হন তিনি। যার দরুন হার্ট, লিভার এবং কিডনি ক্রমশ বিকল হয়ে যেতে থাকে। এই রোগে একটা সময় ক্রেগের অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে, চিকিৎসকরা বলে দেন যে, মাত্র ১২ ঘণ্টা আছে তাঁর আয়ু। আর বাঁচানো সম্ভব নয়।
আরও শুনুন: ‘আমার ক্যানসারের কথা মা-বাবাকে বলবেন না’, চিকিৎসককে অনুরোধ ৬ বছরের খুদের
ঠিক সেই সময় একটা গবেষণা চালাচ্ছিলেন দুই চিকিৎসাবিজ্ঞানী- ডাঃ বিলি কন ও ডাঃ বাজ ফ্রেজার। তাঁরা একটি যন্ত্র তৈরি করেছিলেন যা কিনা হৃৎপিণ্ডের মতোই কাজ করতে পারে। তাঁদের কাজ শেষ হয়েছিল। পশুদের শরীরে পরীক্ষামূলক ভাবে যন্ত্রটি বসিয়ে তার ফলাফল পর্যবেক্ষণ করছিলেন তাঁরা। এমন সময় আসে ক্রেগের খবর। আয়ু প্রায় নেই জেনে, ক্রেগের স্ত্রী লিন্ডা একটি সিদ্ধান্ত নেন। নতুন এই যন্ত্র তাঁর স্বামীর শরীরে বসানো হোক, এই মর্মে দুই বিজ্ঞানীকে অনুমতি দেন তিনি। এই প্রথম মানুষের শরীরে নতুন উদ্ভাবিত যন্ত্রটি প্রতিস্থাপন করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। যা হৃৎপিণ্ড না থাকলেও, শরীরে রক্তের বহমানতা বজায় রাখতে পারে। ফলে হৃদযন্ত্র বিকল হলেও, মানুষের মৃত্যু হয় না, বেঁচে থাকতে পারেন ব্যক্তি। ক্রেগও আশ্চর্য ভাবে বেঁচে যান। হৃৎস্পন্দন ছিল না তাঁর। বলা যায় হৃদযন্ত্র না থাকা অবস্থাতেও যে মানুষ বেঁচে থাকতে পারে, সে নমুনা গড়েছিলেন তিনিই। সফল হয়েছিল বিজ্ঞানীদের পরীক্ষা। এইভাবে বেশিদিন অবশ্য বেঁচে থাকেননি ক্রেগ। অন্য অঙ্গগুলি একে একে বিকল হওয়ার দরুন মাসখানেক পরেই তাঁর মৃত্যু হয়। তবে ২০১১ সালের এই ঘটনা চিকিৎসাবিজ্ঞানে আজও নজির হয়েই রয়ে গিয়েছে।