পর্ন ভিডিওতে নগ্ন মহিলাকে দেখা কোনও নতুন ব্যাপার নয়। কিন্তু বাস্তবে এমনটা কল্পনা করাও কঠিন। কিন্তু এই বৃদ্ধের শখ হয়েছিল অন্যদের নগ্ন হিসেবে দেখার। সেই শখ মেটাতেই এক আশ্চর্য আয়না কিনতে উদ্যত হন তিনি। বিক্রেতারা একেবারে গ্যারান্টি দিয়ে বলেছিলেন, এই আয়নার সামনে যেই দাঁড়াবে তাঁকেই নগ্ন দেখাবে। কিন্তু সত্যিই কি এমনটা সম্ভব? আসুন শুনে নিই।
ধোপদুরস্ত পোশাক পরে আয়নার সামনে দাঁড়ালেন, কিন্তু কোনও লাভ হল না। কারণ আয়নায় যাকে দেখা যাচ্ছে তার গায়ে পোশাকের চিহ্নমাত্র নেই। স্বপ্নে নয়, বাস্তবেই এমনটা হবে। এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে এক বৃদ্ধকে আশ্চর্য আয়না বিক্রি করেছিলেন দুই যুবক। বিনিময় মূল্য ছিল ৯ লক্ষ টাকা। কিন্তু বাস্তবে কাউকে নগ্ন দেখা তো দূর, এত টাকার বিনিময় কোনও আয়নাই পেলেন না বৃদ্ধ।
আরও শুনুন: পুণ্য নয়, এই ‘অভিশপ্ত’ নদীতে স্নান করলে বাড়ে পাপ, নেপথ্যে পুরাণের কোন গল্প?
ঘটনাটি কানপুরের। সেখানকার বাসিন্দা অবিনাশ কুমার সম্প্রতি শিকার হয়েছেন অদ্ভুত এক প্রতারণার। বছর ৭২-র অবিনাশের সঙ্গে কিছুদিন আগেই আলাপ হয় দুই যুবকের। বিভিন্ন কথায় তাঁরা নিজেদের বহুজাতিক সংস্থার আধিকারিক হিসেবে পরিচয় দেন। একইসঙ্গে জানান, তাঁদের কাছে এক আশ্চর্য আয়না রয়েছে। কাজের সুবাদে সেই আয়নার খোঁজ তাঁরা পেয়েছেন। আশ্চর্য বলতে, এই আয়নায় সকলকে নগ্ন দেখায়। তাঁদের দাবি ছিল, এর সামনে কেউ যতই পোশাক পরে আসুন, কিচ্ছুটি দেখা যাবে না। স্রেফ নগ্ন অবয়ব টুকুই দাঁড়িয়ে থাকবে আয়নার ওপারে। একথা শুনে বৃদ্ধ বেশ চমকে ওঠেন। পর্ন ছবিতে নগ্ন মহিলা দেখলেও, বাস্তবে যে কাউকে নগ্ন হিসেবে দেখা মোটেও সম্ভব নয়। কিন্তু ওই দুই যুবক রীতিমতো জোর দিয়ে দাবি করেন, এই জাদু আয়নায় এমনটাই সম্ভব হবে। নিজেদের দাবির সপক্ষে বেশ কিছু ভিডিও দেখান তাঁরা। তাঁদের দাবি ছিল, এই আয়না কোনও মহাকাশ বিজ্ঞানীর তৈরি। মহাকাশ গবেষনার কাজে এই আয়না ব্যবহার করেন। তবে ওই বিজ্ঞানীর সঙ্গে তাঁদের বেশ ভালো পরিচয় রয়েছে বলে দাবি করেন ওই দুই যুবক। তাই সহজেই ওই আয়না তাঁরা এনে দিতে পারবেন। কিন্তু বিনিময় মূল্য হিসেবে দিতে হবে দু-কোটি টাকা। দাম শুনে প্রথমেই পিছয়ে আসেন অবিনাশ। তখন ওই দুই যুবকই তাঁকে আশ্বস্ত করে বলেন, আপাতত লাখ খানেক টাকা দিলেই হবে। সেইমতো বৃদ্ধ প্রায় ৯ লক্ষ টাকা ওই দুই যুবকের হাতে তুলে দেন। কথা ছিল, কিছুদনের মধ্যেই অবিনাশকে ওই আয়না পৌঁছে দেবেন তাঁরা।
আরও শুনুন: একই দেশের একদিকে দিন অন্যদিকে রাত, কোথায় জানেন?
কিন্তু এরই মাঝে তাঁর সন্দেহ হয়। খবর দেন পুলিশে। সব শুনে তদন্তে নামে পুলিশ। এরপরই সামনে আসে সত্যি। বৃদ্ধকে যে ঠকানো হয়েছে, তা পরিষ্কার বুঝতে পারেন পুলিশ আধিকারিকরা। খোঁজ শুরু হয় দুই যুবকের। ধরাও পড়েন তাঁরা। অবিনাশের কাছ থেকে চেহেরার বিবরণ শুনে ভুবনেশ্বরে ওই দুজনকে আটক করে পুলিশ। তাঁদের সঙ্গে ছিল আরও একজন। সামান্য জেরাতেই সব কিছু কবুল করে তিনজন। তাঁদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় বেশ কিছু নগদ টাকা ও ৫টি মোবাইল ফোন। সেগুলিতে অজস্র ভিডিও ছিল বলে দাবি পুলিশের। সব ভিডিওতেই ম্যাজিক আয়নার বিবরণ দেওয়া হয়েছে। পুলিশের দাবি, এভাবেই নাকি দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছেন ওই তিনজনের দল। ইতিমধ্যেই প্রায় ১২০০ জনকে ঠকিয়ে ১৪০০ কোটি টাকা হাতিয়েছে ওই তিনজন। ঘটনায় আরও কেউ যুক্ত কি না, তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। আপাতত ওই তিনজনের ঠাঁই হয়েছে শ্রীঘরে। তবে এভাবেও যে প্রতারণা করা সম্ভব, তা দেখা চক্ষু চড়কগাছ সকলেরই।