নগ্ন হয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলেছেন বলিউড তারকা রণবীর সিং। আর তা নিয়ে বিতর্কে উত্তাল নেটদুনিয়া। কেউ প্রশংসায় পঞ্চমুখ তো কেউ নিন্দায় সরগরম। মেয়েদের নগ্নতা নিয়েও কি আদৌ এতটাই দিলখোলা সমাজ? নাকি এত সব প্রশংসা কেবল পুরুষদেরই জন্য? সেই প্রশ্নও ছুঁড়ে দিয়েছেন কেউ কেউ। কিন্তু এত যে বিতর্ক, তার শেষ কি বিতর্কেই, না আদৌ বদলাচ্ছে সমাজ? কোথায় দাঁড়িয়ে আমরা? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
শরীরে সুতোমাত্র নেই। ক্যামেরার সামনে নগ্ন হয়ে ফটোশুট করেছেন বলিউড তারকা রণবীর সিং। সেই দেখে ঘুম উড়েছে নেটদুনিয়ার। শুরু হয়েছে বিতর্ক। বরাবরই নিজের পোশাক-আশাক, সাজগোজ নিয়ে ছক ভাঙা পথে হাঁটতে পছন্দ করেছেন রণবীর। কখনও গায়ে চড়িয়েছেন মেয়েদের পোশাক, তো কখনও অদ্ভুত সাজে নজর কেড়েছেন দর্শকের। আরও এক ধাপ এগিয়ে এবার ‘পেপার ম্যাগাজিন’-এর জন্য নগ্ন ফটোশুট করলেন রণবীর। শোনা যাচ্ছে, হলিউড তারকা বার্ট রেনল্ডসের থেকেই অনুপ্রাণিত হয়েছেন রণবীর। সোশ্যাল মিডিয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া কুড়িয়েছে সেই ছবি। কেউ সাহসের জন্য রণবীরের পিঠ চাপড়ে দিয়েছেন। কেউ করেছেন নিন্দা। সব মিলিয়ে জমে উঠেছে বিতর্ক। এদিকে, রণবীরের সেই নগ্ন ছবি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাংসদ-অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী। তাঁর সওয়াল, নারী নগ্ন হলেই পৃথিবী রসাতলে। আর পুরুষের নগ্নতা শুধুই প্রশংসার? একে লিঙ্গবৈষম্য বলেই দাবি অভিনেত্রীর। এ ভাবে নারীর ক্ষমতায়ণ কোনও দিন সম্ভব নয় বলেও জানিয়ে দেন তিনি।
আরও শুনুন: অনস্ক্রিন প্রেমিকাকে চুমু খাওয়ার জন্য আত্মত্যাগ! মাংস খাওয়াই ছাড়লেন ‘থর’ সিনেমার নায়ক
এর আগে নগ্ন পুরুষ দেখেনি ভারতীয় বিনোদন জগৎ, এমনটা কিন্তু নয়। মিলিন্দ সোমন থেকে শুরু করে বহু পুরুষই এমন কাজ আগেও করেছেন। বিস্তর হইচইও হয়েছে সেসব নিয়ে। নগ্নতা নিয়ে তো এই সমাজে ট্যাবুর অভাব নেই এমনিতেই। মাঝেমধ্যেই সেসব ট্যাবু ভেঙে পর্দায় নগ্ন হয়েছেন অভিনেত্রীরা। কখনও তা স্বেচ্ছায়, কখনও বা পর্দার প্রয়োজনে। এর সঙ্গে যতটা না শিল্পের প্রয়োজন জড়িয়ে রয়েছে, তার চেয়েও বেশি পরিমাণে রয়ে গিয়েছে নারী শরীরের পণ্যায়নের মতো বিষয়। যৌনতা নিয়ে সমাজে আজও যেভাবে কাজ করে চলে নানা রকমের ট্যাবু বা রক্ষণশীলতা, তার সঙ্গে কিন্তু পরতে পরতে মিশে রয়েছে ক্ষমতার বিন্যাস। পুরুষশাসিত সমাজের রাঙা চোখ বরাবরই মেয়েদের বেঁধে রাখতে চেয়েছে নানা ধরনের বিধিনিষেধে। নারীশরীরের প্রতি বিধিনিষেধ তার চেয়ে আলাদা নয় কোনও অংশেই। সেই শৃঙ্খল ভেঙে নগ্নতাকে বহুবার বেছে নিয়েছেন অভিনেত্রীরা। এমনকি প্রতিবাদের অস্ত্র হিসেবেও ব্যবহৃত হয়েছে নগ্ন শরীর।
কিন্তু বিনোদনের মলাটে যে নগ্নতা ব্যবহার হয়ে চলেছে, তার মধ্যে বিশুদ্ধ নগ্নতা কতটা, আর পণ্যায়ন কতটা, তা মাপতে বসলে হিসেবে গরমিল হবেই হবে। প্রতিবাদের অস্ত্র হতে হতে সেই নগ্ন শরীর যে কবে বাজারের পণ্য হয়ে গিয়েছে, তার খেয়াল করেনি কেউ। আর এই নগ্নতার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে মেল-গেজ বা পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি। অর্থাৎ নারীর খোলামেলা পোশাক থেকে ছবিতে ব্যবহার হওয়া যৌনদৃশ্য, তার উপর ছাপ থেকেই যায় পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গির। পুরুষের চোখে যা সুন্দর, যা আদর্শ বা যা উত্তেজক, তা-ই আসলে বাজার। নীলছবির দুনিয়াতেও কিন্তু পুরুষের নগ্নতাকে ছাপিয়ে বাজার ধরে ফেলে নারীশরীরে নগ্নরূপ। আর তার নেপথ্যেও কিন্তু রয়েছে সেই মেল-গেজের ধারণাই। আর তা নিয়েই চলে দিনভর বিতর্ক, আলোচনা, গসিপ। সেই মুদ্রার উল্টো দিক হিসেবে নগ্নতাকে হাতিয়ার করেছেন পুরুষেরাও। মিলিন্দ সোমন থেকে রণবীর সিং- পর্দার সামনে নগ্ন হতে দ্বিধা করেননি তাঁরা।
এ বিষয়ে কথা বলতে ভয় পাননি রণবীর। বিরোধিতার মুখে তাঁর সপাট জবাব, নগ্নতা নিয়ে ছুঁতমার্গ নেই অভিনেতার। তাই নগ্ন হতেও দ্বিধা নেই তাঁর। রণবীরের মতে, আত্মার গায়ে তো কোনও পোশাক থাকে না। সে নিয়ে মাথা ঘামান না মানুষ। তবে শরীরী নগ্নতায় সমস্যা কোথায়!
আরও শুনুন: স্তন ছোট বলেই বাদ পড়েছেন সিনেমা থেকে, বলিপাড়ার গুপ্তকথা ফাঁস করলেন রাধিকা
কিন্তু আদৌ কি রণবীরদের এই পদক্ষেপ সমাজের মেল-গেজের কাউন্টার হয়ে উঠতে পেরেছে? হয়ে উঠেছে নারী শরীর পণ্যায়নের পাল্টা জবাব? নাকি বিতর্কেরই জন্ম দিয়েছে শুধু? যা থিতিয়েও গিয়েছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। নারী শরীরের পণ্যায়নের প্রবণতা কিন্তু কমেনি একচুলও। যতই লিঙ্গবৈষম্যের অভিযোগ উঠুক না কেন, এ অসুখের শিকড় আরও গভীরে। নারীশরীর প্রদর্শনের পালটা হিসেবে যতই উঠে আসুক পুরষের নগ্নতা, তবে তাতে আখেরে কিছুই বদলায় না। বিতর্কই শেষমেশ ইতি টেনে দেয় বিতর্কে।