আইনের চোখ যে সর্বত্র, সে কথা জানা ছিল। কিন্তু মানুষের পোষা পশুপাখির নামধাম নিয়েও যে আইনের দেবী মাথা ঘামাবেন, সে কথা বোধহয় আগে কেউ ভেবে দেখেনি। তবে সাম্প্রতিক ঘটনা তো ইঙ্গিত করছে সেদিকেই। পোষ্যের নামকরণে গোলমাল করে ফেললে এবার আইনি গেরোয় পড়তে পারেন অনায়াসেই। শুনে নেওয়া যাক।
আপনার পোষ্য, তার ভরণপোষণের যাবতীয় দায়িত্ব আপনার, তার ভালোমন্দের খেয়ালও রাখবেন আপনিই, এদিকে তার নাম নিয়ে কিনা মাথা ঘামাবে অন্য কেউ? ইচ্ছেমতো একটা নাম রাখার অধিকারও নেই, এ আবার কেমন একুশে আইন! উঁহু, একুশে নয়, চব্বিশে আইন বলতে পারেন একে। কারণ এই চব্বিশ সালে এসেই তো জানা গেল, পোষ্যের নামও মোটেই হেলাফেলার জিনিস নয়। সে নামের একচুল এদিক ওদিক হলে নামের ফেরেই মানহানির মামলা বেধে যেতে পারে। তাও আবার মানুষের নয়, সে মানের টিকি বাঁধা আছে ধর্মের কাছে। ঠিক যেমন, নামের সুতোটিও ধর্মের হাতেই ধরা। অন্তত তেমনটাই ছিল সাম্প্রতিক কালের এক নামকরণ মামলায়।
-: আরও শুনুন :-
মনমরা সিংহ-সিংহী ভাবে, শুধু নামের ফেরে মানুষ ফেরে!
আসলে দিনকয়েক আগেই, দুই সিংহের নামকরণ নিয়ে বড় গোল বেধেছিল। বনের সিংহ নয়, চিড়িয়াখানার সিংহ। ফলে পোষ্য প্রাণীর মতোই নামকরণ হয়েছিল তার। সিংহের নাম আকবর আর সিংহীর নাম সীতা। কিন্তু সেই নামকরণের জল গড়িয়ে যায় হাই কোর্ট পর্যন্ত। খোদ রামচন্দ্রের ধর্মপত্নী সীতার নামে নাম রাখা হবে কোনও পশুর, এ বিষয়টিতেই জোর আপত্তি তোলে বাদী পক্ষ। শেষ পর্যন্ত আদালতের রায় গিয়েছে নামবদলের পক্ষেই। তার সঙ্গে সঙ্গেই, এহেন নামকরণের বিষয়টিতেও রীতিমতো সতর্ক করে দিয়েছে হাই কোর্ট। আদালতের সাফ বক্তব্য, অনেক মানুষ যাঁকে সম্মান করেন তেমন কোনও ধর্মীয় চরিত্র কিংবা মনীষীর নামে নামকরণ করা যাবে না। কলকাতা হাই কোর্ট এমনকি এ কথাও বলে, কেউ কি পোষ্যের নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাখবেন? কবি কিংবা স্বাধীনতা সংগ্রামীর নামের অনুসরণে পোষ্যের নাম রাখাও নৈব নৈব চ। হ্যাঁ, মরুভূমির নামে নাম রাখলে অবশ্য কেউ কিছু বলবে না। আদালতের মতে, ধর্মনিরপেক্ষ দেশে যেমন তেমন করে নামকরণ করা যাবে না কোনও প্রাণীরই।
যদিও বাঘ সিংহের নামে পৌরাণিক ছোঁয়া থাকা আদৌ নতুন কিছু নয়। ১৯৯৬ সালে আলিপুর চিড়িয়াখানায় যে বাঘটিকে মালা পরাতে গিয়ে এক ব্যক্তি প্রাণটিই খুইয়েছিলেন, তার নাম ছিল শিবা। ২০১২ সালেও এহেন দুর্ঘটনার কারণে কর্নাটকে ভীম ও জামশেদপুরে রাঘব নামে দুটি বাঘের খবর সামনে আসে। এখনও দিল্লির চিড়িয়াখানায় সীতা নামের একটি সাদা বাঘিনি রয়েছে। মধ্যপ্রদেশের কুনো জাতীয় উদ্যানে দুই চিতার নাম অগ্নি ও বায়ু। তবে ইদানীং কালে যে এইসব নামকরণ দেবতা কিংবা আদালত কাউকেই সন্তুষ্ট করতে পারছে না, সে তো দেখাই যাচ্ছে। আইনের দেখাদেখির হাত থেকে যদি রেহাই পেতে হয়, তাহলে বোধহয় এখন থেকে সতর্ক থাকতে হবে বাড়ির পোষ্যটির নামকরণের ব্যাপারেও।