দেড় বছর ধরে জ্বলছে ৭ হাজার আলো। শত চেষ্টা করেও নেভানো সম্ভব হচ্ছে না আলোগুলি। আজব ঘটনাটি ঘটছে একটি স্কুলে। স্বাভাবিক ভাবেই ইলেক্ট্রিকের বিল মেটাতে কালঘাম ছুটে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষের। কিন্তু কী এমন বিভ্রাট ঘটল যার জেরে আলো নেভানোই যাচ্ছে না? আসুন শুনে নিই।
সারাদিন ধরেই জ্বলছে আলো। তাও বিগত দেড় বছর ধরে। শুনতে অবাক লাগলেও এক স্কুলে ২৪ ঘণ্টাই আলো জ্বালিয়ে রাখতে বাধ্য হচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এক সঙ্গে সাত হাজার বৈদ্যুতিন আলো একইভাবে জ্বলচ্ছে সবসময়। প্রথমে এমন অদ্ভুত কথা শুনলে যে কেউ একে ভূতের কাণ্ড হিসেবেই ভাববেন। অথচ এখানে ভূতের নামগন্ধ নেই। বরং এই সমস্যার নেপথ্যে রয়েছে বিজ্ঞানের অত্যাধুনিক আবিষ্কার।
আরও শুনুন: বাবা পাকিস্তানি আর মা বাংলাদেশি, সন্তানের নাম তবু রাখতেই হল ‘ইন্ডিয়া’, নেপথ্যে কী কারণ?
আর্টিফিসিয়াল ইন্টালিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বর্তমানে বিজ্ঞানের এই আধুনিকতম আবিষ্কার রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছে সারা বিশ্বে। এর মাধ্যমে, স্রেফ মুখের কথাতেই কাজ করে দেয় যে কোনও বৈদ্যুতিক যন্ত্র। ঘরের আলো জ্বলা থেকে আরম্ভ করে দরজা বন্ধ করা, এই বিশেষ ব্যবস্থা প্রয়োগ করলে এক জায়গায় বসেই এইসব কাজ করে ফেলতে পারেন যে কেউ। বিজ্ঞানের ভাষায় এইসব বৈদ্যুতিন যন্ত্র কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জেরে ‘স্মার্ট’ হয়ে উঠেছে। প্রাথমিক ভাবে দেখতে গেলে এর মাধ্যমে কিছুটা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ও সম্ভব। নির্দিষ্ট সময়ের পর আলো নিজে থেকেই নিভে যাওয়ার দরুন অযথা অপচয় হয় না বললেই চলে। সেই আশাতেই আমেরিকার এক স্কুলে এই ‘স্মার্ট’ ব্যবস্থার প্রয়োগ করা হয়েছিল। বিদ্যুৎ বাঁচানোর উদ্দেশ্যে স্কুলের সমস্ত আলোই স্মার্ট আলোতে রুপান্তর করে দেয় কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘদিন এই ব্যবস্থার সুবিধাও ভোগ করেন তাঁরা। মূলত একটি কম্পিউটার সফটওয়্যারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হতো এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবস্থা। যার জেরে স্বয়ংক্রিয় ভাবেই স্কুলের সমস্ত আলো জ্বলে উঠত আবার প্রয়োজন মিটে গেলে নিজে থেকেই নিভে যেত। কিন্তু ২০২১ সালের মাঝামাঝি সেই ব্যবস্থাতেই দেখ দেয় সমস্যা। হঠাৎ করেই লাইটের জ্বলা নেভা অনিয়মিত হতে শুরু করে। এরকম ভাবে কিছুদিন চলার পর সব আলো একসঙ্গে জ্বলতেই থেকে যায়। হাজার চেষ্টা করেও সেগুলি নেভাতে ব্যর্থ হন সকলেই। অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাড়তে থাকে স্কুলের ইলেক্ট্রিসিটি বিল।
আরও শুনুন: সিনেমা দেখতে গিয়ে মিলল না স্যানিটারি প্যাড, ক্ষুব্ধ হয়ে প্রশ্ন তুললেন মহিলা
যারা স্কুলে এমন ব্যবস্থা তৈরি করেছিল, তড়িঘড়ি ডাক পড়ে সেই ‘স্মার্ট’ সংস্থার। অনেক পরীক্ষার পর তাঁরা জবাব দেন, শুধুমাত্র সফটওয়্যার নয় সমস্যা দেখা দিয়েছে হার্ড-ওয়্যারেও। তাই কিছু কিছু যন্ত্রাংশ না বদলানো অবধি এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। এখানেই সমস্যার শেষ নয়। সেই বিশেষ যন্ত্র নাকি শুধুমাত্র চিনেই তৈরি হয়। এবং করোনা অতিমারির জেরে চিন থেকে সেই যন্ত্রাংশ আমদানি করা সম্ভব নয়। তাই বিগত দেড় বছর ধরে একইভাবে জ্বলছে এই স্কুলের সমস্ত আলো। যদিও কিছুদিন আগে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানতে পেরেছে চিনের পরিস্থিতি আগের থেকে স্বাভাবিক। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেই যন্ত্রাংশ নিয়ে এসে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চাইছেন তাঁরা।