চাঁদকে পুজো করার রেওয়াজ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যেই রয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ও তার ব্যতিক্রম নয়। শাস্ত্রে তিনি নবগ্রহের অন্যতম। দেশের মধ্যে যে কটি নবগ্রহ মন্দির রয়েছে তার সবগুলিতেই রয়েছে চন্দ্রদেবের বিগ্রহ। তবে দক্ষিণের এক মন্দিরে বিশেষভাবে চন্দ্রদেবের পুজো করা হয়। কোথায় রয়েছে সেই মন্দির? আসুন শুনে নিই।
দেশের একমাত্র মন্দির। যেখানে আলাদা ভাবে পুজো করা হয় চাঁদকে। তবে বিজ্ঞান বইয়ে পড়া পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদ নয়। এই মন্দিরের আরাধ্য নবগ্রহের অন্যতম চন্দ্রদেব। জ্যোতিষশাস্ত্রে এই গ্রহের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। রাশিচক্রে তাঁর অবস্থান ঠিক কোথায়, সেই ভিত্তিতে নির্ধারিত হয় জাতক জাতিকার ভাগ্য। সেই প্রসঙ্গে এই চন্দ্রমন্দিরের কথা উঠে আসে। মনে করা হয়, চন্দ্রমন্দিরে পুজো দিলে যাবতীয় রাশিগত দুর্ভোগ কাটে।
আরও শুনুন: বছরে একদিনই খোলা থাকে মন্দির, নাগচন্দ্রেশ্বরের দর্শনে কাটে কালসর্পদোষ
নবগ্রহের অন্যতম চন্দ্রদেবের, রাশিচক্রে ভূমিকা যথেষ্টই। কথিত আছে, দক্ষরাজের ২৮ জন কণ্যা তথা দেবী পার্বতীর বোনেদের বিয়ে হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। তবে চন্দ্রদেব স্রেফ একজনকেই বিশেষ নজরে দেখতেন। এতেই বেজায় চটে যান তাঁর অন্যান্য স্ত্রীরা। অভিশপ্ত হন চন্দ্রদেব। এখানেই শেষ নয়। পুরাণের গল্পে তিনিই বোধহয় সবথেকে বেশিবার অভিশপ্ত হয়েছেন। চাঁদের কলঙ্ক প্রবাদটিও সেই প্রসঙ্গেই এসেছে বলে মনে করেন অনেকে। অন্যদিকে, চন্দ্রদেবের সঙ্গে বিশেষ যোগ রয়েছে খোদ মহাদেবের। চন্দ্রকে বলা হয় সোম। আবার মহাদেবের অপর নাম সোমেশ্বর। এমনকি শিবের জটাতেও অবস্থান করেন চন্দ্রদেব। দক্ষিণের এই মন্দিরটিও মূলত মহাদেবের। তবে শিবলিঙ্গের অন্তরায় সেখানে পুজো করা হয় চন্দ্রদেবকেই।
আরও শুনুন: নাড়ির স্পন্দন পেলে তবেই চলে, বিগ্রহের হাতেও দিব্যি সক্রিয় ‘অলৌকিক’ ঘড়ি
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নবগ্রহের মন্দির চোখে পড়ে। তবে নির্দিষ্ট কোনও গ্রহকে উদ্দেশ্য করে মন্দির সচরাচর চোখে পড়ে না। ব্যতিক্রম দক্ষিণ ভারতের চান্দিরানার মন্দির। স্থানীয়দের কাছে এই মন্দির কৈলাশানাথার মন্দির হিসেবেও পরিচিত। তামিলনাড়ুর এই মন্দিরে নবগ্রহের অন্যতম চন্দ্রদেবের পুজো করা হয়। প্রতিদিন ভোর ৬টায় মন্দিরের দরজা খুলে যায়। সন্ধ্যা অবধি যে কেউ এখানে দর্শনের জন্য আসতে পারেন। তবে শিবরাত্রি সহ বছরের কিছু বিশেষ দিনে ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো। এইসময় মন্দিরে বিশেষ পুজোর ব্যবস্থা করা হয়। শোনা যায়, এই মন্দিরে পুজো দিয়েছিলেন ইসরোর বিজ্ঞানীরাও। দেশের অন্যান্য প্রান্ত থেকেও এই মন্দিরে পুজো দিতে আসেন ভক্তরা। মনে করা হয়, এই মন্দির তৈরি হয়েছিল চোল বংশের শাসনকালে। বিখ্যাত কিছু তামিল পণ্ডিতের নাম এই মন্দিরের সঙ্গে যুক্ত। সেইসঙ্গে স্থাপত্যের দিক দিয়েও এই মন্দিরটিকে অনন্য বলা চলে। এই মন্দিরে পাথরের কাজও চোখে পড়ার মত। দক্ষিণের অন্যান্য মন্দিরগুলির মতো এখানেও একাধিক দেবদেবীর বিগ্রহ দেখা যায়। তবে মন্দির ঘিরে একাধিক জনশ্রুতিও রয়েছে। শোনা যায়, পূর্ণিমার সময় এই মন্দিরে অদ্ভুতভাবে চাঁদের আলো পড়ে। যা দেখে যে কারও মনে হতে পারে, স্বয়ং চন্দ্রদেব মন্দিরে নেমে এসেছেন। তাই স্থানীয়দের কাছে এই চন্দ্রমন্দির বিশেষভাবে জনপ্রিয়। বর্তমানে এই মন্দির পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে সে রাজ্যের সরকার। উৎসবের সময় তো বটেই বছরের অন্যান্য সময়ও মন্দিরে ভক্তদের ভিড় সামলাতে সবরকম ব্যবস্থা করেন রাজ্য প্রশাসন।