‘খেলব হোলি, রং দেব না তাই কখনও হয়!’ একেবারেই হয় না। কিন্তু রঙের বদলে কেউ যদি লাঠির বাড়ি মারতে চায়? তাহলে কি কেউ স্বচ্ছন্দে এগিয়ে যাবেন? অথচ বৃন্দাবন মথুরায় প্রচলিত রয়েছে এমনই অদ্ভুত রীতি। হোলির দিন রং মাখার পর সেখানকার মহিলারা লাঠি দিয়ে পুরুষদের মারেন। কেন পালন করা হয় এমন অদ্ভুত রীতি? আসুন শুনে নিই।
দোল মানেই আকাশে আবিরের রং। বাতাসে পলাশের গন্ধ। সেই বর্ণ-গন্ধের নেশা ভুলিয়ে দেয় বয়স-শ্রেণি-জাতের বেড়াজাল। মানুষের সঙ্গে জুড়ে দেয় অন্য মানুষকে। যুগে যুগে কালে কালে সেই গল্পেরই সাক্ষী থেকেছে ভারতবর্ষ। এখনও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পালন করা হয় বিভিন্ন ধরনের দোল।
আরও শুনুন: কেন দোল উৎসব বলে উদযাপিত হয় ফাল্গুন পূর্ণিমাই?
কী ভাবছেন, দোলের আবার রকমফের কীভাবে সম্ভব?
তাহলে পাড়ি জমাতে হবে সুদূর উত্তরপ্রদেশের এক গ্রামে। বলা বাহুল্য, এই গ্রামই শ্রীকৃষ্ণের বড় হওয়ার সাক্ষী। তাঁর লীলাক্ষেত্র বৃন্দাবন-মথুরা। তা শ্রীকৃষ্ণের গ্রামে দোল নিয়ে মাতামাতি হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে সেখানে রং খেলার থেকেও প্রাধান্য পায় অন্য এক খেলা। তার নেপথ্যেও অবশ্য রাধাকৃষ্ণের গল্পই রয়েছে। তবে সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। আগে বলি এখানে দোলের দিন ঠিক কী হয়?
অন্যান্য জায়গার মতো এখানকার মানুষজনও হোলির দিন প্রথমে বেশ ভালমতোই রং খেলেন। কিন্তু তারপর তাঁরা অদ্ভুত এক রীতি পালন করেন। গ্রামের অধিকাংশ পুরুষ গোপ যুবকের মতো সাজেন। অন্যদিকে মহিলারা সাজেন গোপিনীদের মতো। পেশাগত ভাবে তাঁদের যাই পরিচয় হোক না কেন, হোলি উপলক্ষ্যে তাঁরা এমনভাবেই নিজেদের সাজিয়ে তোলেন। তবে এর সঙ্গে মেয়েদের হাতে যোগ হয় একটা মোটা লাঠি, আর ছেলেদের হাতে একটা শক্তপোক্ত ঢাল। এরপরই শুরু হয় অদ্ভুত এক খেলা। গোপ যুবকের সাজে পাগড়ি পরিহিত সেই যুবকরা একে একে মাটিতে বসে পড়েন। আর মাথার উপর ধরে রাখেন সেই ঢাল। অন্যদিকে মহিলারা তাঁদের লাঠি দিয়ে ওই ঢালের উপর মারতে থাকেন। প্রথমবার দেখলে যে কারও মনে হবে, ওই মহিলারা পুরুষদের রীতিমতো জোরে জোরে মারছেন। তবে সেখানকার আবহ সেই মনে হওয়াকে বদলে দেবে কিছুক্ষণের মধ্যেই। কারণ এই কাজ নিছকই খেলার ছলে করা হয়। এবার শোনা যাক এই অদ্ভুত রীতির নেপথ্যে থাকা গল্পটা।
আরও শুনুন: প্রাক্তন প্রেমিকার নামেই সদ্যোজাত কন্যার নাম রাখতে চান ব্যক্তি, চটে লাল স্ত্রী
শোনা যায়, রাধার গায়ের রং নিয়ে বড় হিংসা করতেন শ্রীকৃষ্ণ। সবসময় চাইতেন রাধাকে তাঁর মতো কালো করে দিতে। কিন্তু তেমনটা তো অসম্ভব। মনের দুঃখে তিনি এই কথা মা যশোদাকে জানান। ছেলের কথা শুনে যশোদা মা এক উপায় বাতলে দেন তাঁকে। তিনি বলেন, রাধাকে কালো রঙে রাঙিয়ে দিতে। ব্যস, কৃষ্ণকে আর পায় কে! গোপ বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে রাধার মুখে কালো রং লাগিয়ে দেন তিনি। বাদ যায় না রাধার সঙ্গিনীরাও। কৃষ্ণের আমন আচরণে বেজায় চটে যান রাধা। সঙ্গে সঙ্গে মোটা লাঠি হাতে কৃষ্ণকে মারতে ছোটেন তিনি। এদিকে উপায় না দেখে কৃষ্ণ সামান্য এক ঢালের সাহায্যে রাধার হাত থেকে বাঁচেন। কিন্তু তাঁর সঙ্গীদের কার্যত তাড়া করে গ্রামছাড়া করেন রাধা। সেই থেকেই এই রীতির শুরু। এখনও মথুরা-বৃন্দাবনে এই নিয়ম পালন করা হয়। যেখানে গ্রামের মেয়েরা পুরুষদের লাঠি দিয়ে মারতে মারতে গ্রামের বাইরে পাঠিয়ে দেন। তবে সবটাই খেলার ছলে। স্থানীয় ভাষায় এর নামই ‘লাঠমার’। শুধুমাত্র মথুরা নয়, উত্তরপ্রদেশের আরও কিছু জায়গায় এই রীতির চল আছে। বানসারা নামে আরও এক গ্রামেও পালিত হয় এই প্রথা। অনেকের মতে এই গ্রামেই নাকি সর্বপ্রথম রাধাকৃষ্ণের রং মাখা ও মার খাওয়ার ঘটনাটি ঘটেছিল। তবে নেপথ্যে যে কাহিনিই থাকুক, দোলের আনন্দের সঙ্গে মিলে শেষমেশ আনন্দের উৎসবেই রূপান্তরিত হয়েছে এই রীতিও।