লক্ষ্মীপুজোর মতো বাড়িতেই করা যায় সরস্বতী পুজো। সেক্ষেত্রে ছবি বা মূর্তি, যা কিছু রেখেই পুজো করা যেতে পারে। তবে বাজারে মূর্তি কেনার সময় কয়েকটা বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখা উচিৎ। ঠিক কোন কোন বিষয় খেয়াল রাখতে হবে? আসুন শুনে নিই।
সরস্বতী পুজো। শুধুমাত্র পড়ুয়াদের নয়, যে কোনও বয়সের বাঙালির কাছেই এই দিন উদযাপনের। বয়সের সঙ্গে সেই উদযাপনের রকমফের বদলালেও আনন্দের মাত্রাটা একইরকম থাকে। তবে এত আনন্দের মাঝেও কিছু নিয়ম মেনে চলতে ভুল করে না কেউই। যেমন সরস্বতী পুজোর দিন হলুদ জামাকাপড় পরা, পুজোর দিন একবারের জন্যেও বই খাতা না-ছোঁয়া, কিংবা পুজো শেষ হওয়ার আগে কুল না-খাওয়া। সেইসঙ্গে সরস্বতী মূর্তি বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও কয়েকটা বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখা উচিৎ।
আরও শুনুন: নেপথ্যের শিল্পী, উস্তাদ জাকির হুসেনের জন্য তবলা বানান যে রামচন্দ্র
তিনি বিদ্যার দেবী। পড়ুয়াদের কাছে তিনি পরম আরাধ্যা। একইসঙ্গে যাঁরা সাংস্কৃতিক কাজের সঙ্গে যুক্ত তাঁরা সকলেই দেবীর কৃপাপ্রার্থী। মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথি তাঁর পুজোর দিন। যদিও অনেকের কাছে এই দিনটি বসন্ত পঞ্চমী নামেও পরিচিত। স্বাভাবিক ভাবেই দেবীর পুজোয় ধরা পড়ে বসন্তের ছোঁয়া। এই প্রসঙ্গেই দেবীর মূর্তি নির্বাচনের প্রথম শর্তটা মনে করা যেতে পারে। তা হল, দেবী কী রঙের শাড়ি পড়েছেন। সাধারণত সরস্বতী মূর্তিতে বাসন্তী বা সাদা শাড়ি পরানো হয়। শাস্ত্রের নিয়মও তাই। এর বাইরে অন্য কোনও রং, যেমন কালো, লাল বা সবুজ রঙের শাড়ি পরানো হয়েছে এমন বিগ্রহ না আনাই ভালো। এরপর মূর্তির কিছু বৈশিষ্ট্যের দিকে লক্ষ রাখতে হবে। যদি বাড়ির পুজো হয়, তবে সরস্বতী বসে আছেন এমন বিগ্রহই নেওয়া উচিৎ। সেইসঙ্গে দেখে নিতে হবে, দেবীর চরণ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে কিনা। এখানেই শেষ নয়। ধ্যানমন্ত্রে দেবীর দুই হাতে বীণা এবং বেদ-পুস্তক ধারণের উল্লেখ রয়েছে। বিগ্রহে এই দুটি থাকা আবশ্যক। অনেক সময় বাড়ির ছোট মূর্তিতে স্পষ্টভাবে বীণা বা বেদ বোঝা যায় না। তেমন মূর্তি নির্বাচন না করাই ভালো। বিগ্রহের ভঙ্গী যেন আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিকৃত না হয়ে যায় সে দিকটা লক্ষ রাকা আবশ্যক। অনেকেই ক্লাবের পুজোয় থিমের ঠাকুর নিয়ে আসেন। বাড়িতে এই ধরনের মূর্তি না আনাই ভালো।
আরও শুনুন: অযোধ্যা লতা মঙ্গেশকরেরও, ৪০ ফুটের বীণায় তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাম-ই
এরপর যে বিষয়টা সবথেকে বেশি করে লক্ষ করতে হবে, তা হল দেবী মূর্তিতে হাঁস আছে কি না। দেবীর বাহন রাজহাঁস। সরস্বতীর সঙ্গে তারও পুজো করতে হয়। তাই মূর্তিতে হাঁস না থাকলে তা শাস্ত্রবিরুদ্ধ। এছড়া, মূর্তিটি যেন কোনওভাবে ভাঙ্গা না থাকে সেদিকটা ভালো করে দেখে নিতে হবে। অনেক সময় সামনে থেকে বোঝা না গেলেও মূর্তির পিছনের দিকে চটা বা ফাটা থাকতেই পারে। ছাঁচের ঠাকুরে হামেশাই এমনটা দেখা যায়। সেই মূর্তিও পুজো না করাই ভালো। প্রয়োজনে বাড়ি নিয়ে এসে মূর্তির ওই ভাঙা বা চটা অংশ রং করে নেওয়া যেতে পারে। সরস্বতী ফুলের সাজেই তুষ্ট। তাই আলাদা করে মূর্তিতে নকল গয়না না পরালেও চলে। হলুদ গাদার মালা পরালেই দেবী তুষ্ট। সেইসঙ্গে প্রিয় পলাশ ফুলের অর্ঘ্য আর প্রসাদ হিসেবে কুল। তাহলে সারা বছরের জন্য বিদ্যা বুদ্ধির বর দিয়ে যান জ্ঞানের দেবী সরস্বতী।