বৃষ্টি আর খিচুড়ি! যেন বাঙালির উত্তম সুচিত্রা। সঙ্গে ইলিশ মাছ ভাজা হলে কথাই নেই। আর কিচ্ছুটি লাগবে না পাত সাবাড় করতে। কিন্তু খিচুড়ি তো স্রেফ বাঙালি খাদ্য নয়! তাহলে বঙ্গবাসীর সঙ্গে এর অন্তরের টান জন্মাল কীভাবে? বৃষ্টির দিনে খিচুড়ি খাওয়ার লাভ টাই বা কী? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
খিচুড়ি। নামে সাধারণ, কিন্তু স্বাদে অসাধারণ। পুজোর ভোগ বা বৃষ্টির দুপুর, খিচুড়ির জুড়ি মেলা ভার। সঙ্গের উপকরণ অবশ্যই বদলাতে পারে। কিন্তু স্বাদের তেমন হেরফের নেই। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা, খিচুড়ি সবেতেই ভরসা। স্রেফ দরকার একটু বৃষ্টি।
আরও পড়ুন:
ধর্মের সঙ্গে যোগ নেই আমিষের! ইলিশ ভালবাসতেন ‘সিদ্ধপুরুষ’ বিবেকানন্দও
শুধুমাত্র বাংলা নয়, সারা ভারতেই খিচুড়ি নানা চেহারায়, নানা নামে আদর পেয়ে আসছে। কখনও সে গরিব মানুষের অনাড়ম্বর খাদ্য, কখনও রোগীর পথ্য, কখনও বিভিন্ন উপকরণে সাজানো দেবভোগ্য পদ। এখনও দেশের বহু মন্দিরে প্রধান ভোগ হিসেবে খিচুড়ি দেওয়া হয়। বাঙালি বাড়ির পুজোতেও সেই একই ছবি। তাই বলে স্রেফ পুজো হলেই খিচুড়ি খাওয়া? একেবারেই নয়। বৃষ্টির সঙ্গেও খিচুড়ির নিবিড় যোগ। বৃষ্টি উদযাপনে খিচুড়ি খাওয়ার চল বহু পুরনো। যা এখনও বহাল তবিয়তে টিকে রয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ঠিক কেন?
এমনিতে কোনও নিয়মের নেপথ্যে কিছু না কিছু কারণ থাকে। কখনও বৈজ্ঞানিক কখনও লৌকিক। খিচুড়ির ক্ষেত্রে দুই-ই রয়েছে বলা যায়। লৌকিক কারণটা অবশ্য খুবই সাধারণ। নেহাতই স্বাদের বিচারে খিচুড়ি পছন্দের হয়ে উঠেছে সকলের। সেইসঙ্গে তৈরি করায় ঝক্কি কম। বৃষ্টির দিনে বাজার বসে না। এদিকে শুধু ভাত আর ডাল খাওয়ার ইচ্ছা নেই। তাই খিচুড়ি চাপানো যাক! চাল-ডাল-আলু মিশিয়ে নেহাতই সাধারণ এক খাবার। সঙ্গে শুকনো লঙ্কা-জিরের ফোড়ন। কেউ কেউ আরও কিছু মশলা মেশাতেই পারেন। তাতে স্বাদ বাড়বে বই কমবে না। নামানোর আগে মিশিয়ে দিতে হবে ঘি। ব্যস! গোটা বাড়ি গন্ধে ম ম করবে। তাই বৃষ্টির দিনে সহজ উপয়ে খিচুড়ি তৈরি হয় অনেক বাড়িতেই। এবার আসা যাক বৈজ্ঞানিক কারণে। সবটাই খিচুড়ির খাদ্যগুণ প্রসঙ্গে। আসলে, চাল-ডাল একসঙ্গে থাকায় এর মধ্যে ফাইবারের পরিমাণ থাকে যথেষ্টই। এদিকে, খিচুড়ি খাওয়ার নিয়ম গরম গরম। ঠাণ্ডা খিচুড়ি কেমন যেন, স্বাদ নেই! তাই গরম খিচুড়ি বেশ কিছু রোগ সারিয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে গলা ধরার সমস্যা বা ওই জাতীয় কিছু। বৃষ্টির সময় জলবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ে। গরম খিচুড়ি সেইসব রোগের মোকাবিলা করতে পারে বলেও ধারণা বিশেষজ্ঞদের। এই কারণেই খিচুড়িকে পথ্য হিসেবেই দেখা হত এক সময়।
আরও পড়ুন:
আপনি আমি তো কোন ছাড়! খিচুড়ির প্রেমে মজেছিলেন রাজা-বাদশারাও
তাই স্বাদে-গুণে ভরপুর এই খাবার সহজেই হয়ে উঠেছে বৃষ্টি দিনের প্রথম পছন্দ। এবার আসা যাক বাঙালি প্রসঙ্গে। খিচুড়ি ভালোবাসেন না এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া কঠিন। অন্যান্য প্রদেশে যেভাবেই রান্না হোক, বাঙালি মায়ের খিচুড়ি রান্না বিশেষ ধরণ রয়েছে। মূলত নিরামিষ। শীতকাল হলে তাতে ফুলকপি যোগ হবে। সঙ্গে আমিষ মাছভাজা বা ডিম থাকতেই পারে। কিছু না হলে পাপড় ভাজা, বেগুন ভাজাতেও কাজ চলবে। স্রেফ খিচুড়ি হলেই হল।