কোথাও খাবার টেবিলের পাশেই খেলা করে বেড়ায় মাছের দল। কোথাও আবার খাবারের স্বাদের সঙ্গে সঙ্গে পালটে যায় ঘরের পরিবেশও। কিন্তু এমন সব রেস্তরাঁয় খেতে চাইলে কত টাকা খরচ করতে হবে, জানেন? আসুন, শুনে নেওয়া যাক বিশ্বের সবচেয়ে দামি রেস্তরাঁগুলির কথা।
কথায় বলে, ঘর কা মুরগি ডাল বরাবর। ঘরের রান্না একঘেয়ে লাগে বলেই না উৎসবে অনুষ্ঠানে রেস্তরাঁর খাবারের দিকে হাত বাড়াই আমরা। কিন্তু সেই রেস্তরাঁর বিল যদি মাথাপিছু হয়ে দাঁড়ায় ৫০-৬০ হাজার কিংবা লাখখানেক টাকা? না না, আজগুবি কথা নয়। বিশ্বে এমন কিছু রেস্তরাঁ আছে, যেখানে একজনের খাওয়ার খরচ প্রায় ওই পরিমাণ টাকাই। আসুন, শুনে নেওয়া যাক বিশ্বের সবচেয়ে দামি সেইসব রেস্তরাঁর কথা।
আরও শুনুন: এক দিনের সুলতান… দেশের এইসব হোটেলে এক রাত কাটানোর খরচ প্রায় ৪ লক্ষ টাকা
বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে দামি রেস্টুরেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে স্পেনের সাবলিমোশন রেস্তরাঁকে। স্পেনের ইবিজা দ্বীপে হার্ড রক হোটেলের ভেতরে থাকা এই বিলাসবহুল রেস্তরাঁয় একসঙ্গে খেতে বসতে পারেন মাত্র ১২ জন। বিশ্বের সেরা শেফদের মান নির্ধারণ করে যে মিশেলিন স্টার, তার তালিকা অনুযায়ী সর্বোচ্চ, অর্থাৎ তিনটি স্টার জয়ী শেফ প্যাকো রেনচেরো এই রেস্তরাঁর প্রধান শেফ। সুতরাং খাবারের স্বাদ যে কেমন হবে তা তো বলাই বাহুল্য। আবার অতিথিরা কী খাবার খাচ্ছেন, তার উপর নির্ভর করে পালটে যায় রেস্তরাঁর পরিবেশ। কখনও মনে হবে কোনও ডিস্কো থেকের অভ্যন্তর তো কখনও আবার মনে হতে পারে মহাসাগরের মধ্যে বসেই ডিনার সারছেন আপনি। এহেন রেস্তরাঁটিতে খেতে গেলে মাথপিছু খরচ হবে অন্তত দেড় থেকে দু’লক্ষ টাকা।
কৃত্রিম সাগরের মধ্যে নয়, সত্যি সত্যিই সমুদ্রের মধ্যে বসে ডিনার সারতে চান? তাহলে যেতে হবে মলদ্বীপের ইথা আন্ডার সি রেস্তরাঁয়। ভারত মহাসাগরের ৫ মিটার গভীরে থাকা এই রেস্তরাঁকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর রেস্তরাঁর তকমা দিয়েছে নিউইয়র্ক ডেলি নিউজ। মাত্র ১৪জন অতিথির বসার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। চারপাশে সামুদ্রিক মাছের বাহার দেখতে দেখতে বিভিন্ন মাছের পদ উপভোগ করতে পারেন তাঁরা। খরচ? প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা।
তিনটি মিশেলিন স্টার পাওয়া জাপানি শেফ মাসা তাকাইয়ামার হাত ধরে চলে নিউ ইয়র্কের টাইম ওয়ার্নার সেন্টারে অবস্থিত মাসা রেস্তরাঁ। এখানে কোনও মেনুকার্ড নেই। কী খেতে চান, খাওয়ার অন্তত তিন ঘণ্টা আগে তা জানিয়ে দিতে হবে আপনাকে। সেইমতোই আপনার জন্য রান্না করবেন শেফ। খরচ হবে প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা।
শুধু আমেরিকার জাপানি রেস্তরাঁ নয়, জাপানের টোকিওতে আরাগাওয়া রেস্তরাঁয় খেতে গেলেও খরচ পড়বে প্রায় একই। ২০০৬ সালে ফোর্বস লিস্টে সবচেয়ে দামি রেস্তরাঁ ছিল এটিই। গোমাংসের নানা পদ এবং স্যামন মাছের জন্য বিখ্যাত আরাগাওয়াতে একসঙ্গে খেতে পারেন মাত্র ২২ জন।
একইরকম দামি যুক্তরাজ্যের গর্ডন র্যামসে রেস্তরাঁ। হলিউড তারকাদের মতোই বিখ্যাত এই শেফের হাতের রান্না খেতে এখানে ভিড় জমে। উপরন্তু এই রেস্তরাঁয় সবচেয়ে দামি পদ হল এক ধরনের রেড ওয়াইন, যার এক বোতলের মূল্য সাড়ে আঠারো হাজার ডলার, অর্থাৎ প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা।
গর্ডন র্যামসের গুরু গাই স্যাভয়-এর চালু করা একাধিক রেস্তরাঁ রয়েছে ফ্রান্সে। সেখানে খেতে গেলে খরচ পড়বে প্রায় ৫০ হাজার টাকার মতো। ১৩ কোর্সের খাবারের মধ্যে লবস্টার, অয়েস্টার, ক্যাভিয়ার, হাঁস বা পায়রার মাংসের পদ, কী নেই!
আরও শুনুন: ঘরের ছাদ, দেওয়াল নেই… তবু হোটেল ভাড়া ২৬ হাজার টাকা, কেন জানেন?
ফ্রান্সের আরেকটি রেস্তরাঁর কথা না বললেই নয়। গোটা দুনিয়ায় এখনও পর্যন্ত তিনটি মিশেলিন স্টার পেয়েছেন মাত্র চারজন মহিলা। তাঁদের অন্যতম অ্যান সোফি পিক। পিক পরিবারের ১৩০ বছরের পুরনো রেস্তরাঁ ম্যাসন পিকের দায়িত্ব এখন তাঁরই হাতে। তাঁর রান্না করা পুরোনো দিনের খাবারের স্বাদ পেতে গেলে খরচ হবে চল্লিশ হাজার টাকার কাছাকাছি।
নিছক পেট ভরার জন্য নয়, খাওয়া বিষয়টিকেও যে শিল্পের মতোই উপভোগ করা যায়, সে কথাই মনে করেন দেশবিদেশের খাদ্যরসিকেরা। আর সেই কারণেই বিশ্বজুড়ে দামি রেস্তরাঁর এমন ছড়াছড়ি।