রথ বললেই পুরীর নাম মনে আসে। জগন্নাথের রথ দেখতে বিদেশ থেকেও হাজির হন ভক্তরা। কিন্তু এই রথ বিশ্বের সবথেকে বড় রথ নয়। এর থেকেও বড় রথ তৈরি হয় এই দেশে। কোথায় জানেন? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
রথস্থ বামনং দৃষ্টা পুনর্জন্ম ন বিদ্যতে’ – অর্থাৎ, রথে উপবিষ্ট জগন্নাথদেবকে যিনি দর্শন করেন, তাঁর পুনর্জন্মের ভাবনা থাকে না। ঠিক সেই টানেই যে এত মানুষ রথের উন্মাদনায় নিজেকে ভাসিয়ে দেন একথা বলা ভুল। বরং বলা যেতে পারে ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে মানুষের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার যোগসূত্র এই রথযাত্রা উৎসব। যার নিমিত্ত স্বয়ং জগন্নাথ।
আরও শুনুন: মাত্র ৮০০০ টাকায় মিলবে স্বর্গের জমি! বেচাকেনার ভার নিল চার্চ
বাংলা সহ দেশবিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে মহাসমারোহে পালিত হয় রথযাত্রা উৎসব। এর মধ্যেই এমন এক রথ রয়েছে যা স্রেফ ভারত নয়, গোটা বিশ্বের মধ্যে সবথেকে বড়। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। অনেকেই মনে করেন, ওড়িশায় পুরীধামের রথই সবথেকে বড়। হ্যাঁ, উৎসবের বহরে তা অবশ্যই বড়। তবে রথের আকারের কথা বললে ওড়িশার বলদেবজিউ মন্দিরের কথা বলতে হয়। কেওনঝড়ের ওই মন্দিরেই রয়েছে বিশ্বের সবথেকে উচ্চতম রথ। এই রথটিও কাঠের তৈরি। উচ্চতা ৭২ ফুট এবং চওড়ায় প্রায় ৪৭ ফুট। শোনা যায়, ১৬৭১ সালে এই মন্দির নির্মাণ করান রাজা লক্ষ্মীনারায়ণ ভঞ্জ। সেই মন্দির এখনও রথযাত্রা উপলক্ষে বিশষভাবে সেজে ওঠে। এখানকার বাসিন্দারা এত কাছে থেকেও পুরীর মন্দিরে রথ দেখতে যান না। বলদেবজিউ-এর রথই তাঁদের কাছে প্রধান আকর্ষণ। বাইরে থেকেও অনেকেই এই মন্দিরের রথ দেখতে ভিড় জমান। উচ্চতায় এতটাই বড় যে মাইলখানেক দূর থেকেও এই রথের চূড়া দেখা যায়। এর সঙ্গে স্থানীয় আদিবাসীদের বিশেষ যোগ রয়েছে। শোনা যায়, একসময় তাঁরাই রথ টেনে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্বে থাকতেন। সেই প্রথা আজও বন্ধ হয়নি। আদিবাসীদের দেওয়া দড়ি, রথের সঙ্গে লাগিয়েই নিয়ে যাওয়া হয় কাঙ্খিত গন্তব্যে। তবে উচ্চতম রথের কথা বললে আরও একটি রথের উল্লেখ করতে হয়।
আরও শুনুন: বিনামূল্যে তীর্থদর্শনের দায়িত্ব নিল সরকার, কোন রাজ্যে চালু নয়া প্রকল্প?
এট অবশ্য ওড়িশার নয়। এই রথ সুদূর দক্ষিণের। তামিলনাড়ুর তিরুভারুর অঞ্চলের মন্দিরে এক বিশালকায় রথ রয়েছে। উচতায় এই রথ ৯৬ ফুট, ওজন ৩০০ টনেরও বেশি। কিন্তু একে বিশ্বের বৃহত্তম রথ বলা যায় না। কারন স্রেফ রথটির উচ্চতা এত নয়। এক বিশেষ গাড়িতে রথটিকে বসানো থাকে, সবমিলিয়ে ওমন বিরাট উচ্চতা তৈরি হয়। একে টেম্পল কারও বলা হয়। রথে অধিষ্টিত দেবতাও আলাদা। চারটি আলাদা রথে, পার্বতী, মুরুগান, গণেশ সহ বেশ কিছু দক্ষিণের দেবদেবীকে নিয়ে যাওয়া হয় এই রথে। সেই অর্থে জগন্নাথের রথের সঙ্গে এর যোগ নেই। তবে এও এক রথ তো বটেই। আর সেই হিসাবেই এই রথের উচ্চতা নিয়ে চর্চা হয়। এতবড় রথে রস্তা দিয়ে নিয়ে যাওয়াও সহজ কথা নয়। বিশেষ সাবধানতা নিয়েই রথটি রাস্তায় বার করা হয়। আর প্রতি বছর পুরীর রথের মতোই লাখো ভক্তের ভিড় জমে এই রথ উৎসবে।