বাড়িতে কেউ নেই। একা রাজত্ব সামলাচ্ছে খুদে ‘বীরপুরুষ’। হঠাৎ দরজায় টোকা। বাবা-মায়ের পরিচিত, এই কথা বলেই দরজা খোলার অনুরোধ। মহা সমস্যায় খুদে। কী করে বুঝবে, অতিথি সত্যিই পরিচিত? এক্ষেত্রে নানা বিপদও যে হতেই পারে, তার উদাহরণ রয়েছে ভুরি ভুরি। আর বিপদ আটকাতে কাজে আসতে পারে ‘কোড ওয়ার্ড’! ব্যাপারটা ঠিক কী? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
অচেনা কারও সঙ্গে কথা নয়। কেউ কিছু খেতে দিলে নেবে না। বাড়িতে এমনটা পাখি পড়ার মতো করে শিখিয়ে দিয়েছে। কিন্তু পার্কে গিয়ে সেসব কি আর মনে থাকে! বেখেয়ালে অচেনা কারও সঙ্গে দেদার গল্প জুড়ে দিয়েছে খুদে। এরপরের ঘটনা সবসময় যে স্বাভাবিক হবে তার কোনও মানে নেই। বরং এই ধরনের পরিস্থিতে বিপদের আশঙ্কাই বেশি। কিন্তু খুদের যদি ‘কোড ওয়ার্ড’ চেনা থাকে, তাহলে এই বিপদ অনেকটাই কমতে পারে।
আরও শুনুন: হোক না ‘কৃত্রিম পুরুষ’, রোবটের হাত তবু নারীর শরীরই ছুঁতে চায়!
ব্যাপারটা ঠিক কী?
এমনিতে ছোট হওয়ার নানা সমস্যা! কোথাও একা একা যাওয়ার অনুমতি নেই। বন্ধুর বাড়িতে রাত কাটানো, একা একা টিউশন থেকে ফেরা, সেসবই ভাবনার অতীত। তবু মাঝে মাঝে সুযোগ মেলে। কখনও বাড়িতে একা থাকা, কখনও একা একা দোকান থেকে কিছু কেনার বরাত। অবশ্য ওটুকুই যথেষ্ট। মনের মধ্যে আনন্দ বাঁধ ভাঙবে। এখন মুশকিল হল আনন্দের চোটে খুদে যদি কোনও ভুল করে বসে! অচেনা কারও কথায় ভুলে দরজা খুলে দেয় কিংবা অন্য কিছু। বিপদ কীভাবে আসবে, তাতো বোঝা মুশকিল। তাহলে বিপদ এড়াতে উপায় কি সেই কড়া নজরদারিই? কিন্তু তাতেও কি সবসময় বিপদ এড়ানো সম্ভব?
আরও শুনুন: AI শিক্ষক ক্লাস তো নিলেন, তবে মাস্টারমশাই আপনি কি আর কিছুই দেখবেন না!
এখানেই নতুন এক উপায়ের কথা সামনে এনেছেন বিশেষজ্ঞরা। যার পোশাকি নাম, ‘কোড ওয়ার্ড’। অনেকটা মোবাইল, ল্যাপটপের পাসওয়ার্ডের মতো। নির্দিষ্ট কোনও শব্দ হতে পারে। তার সঙ্গে জুড়ে থাকতে পারে সংখ্যা। খুব বেশি বড় নয়। আর এমন কম্বিনেশন যা মনে থাকবে খুব সহজেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এরকম কোনও কোড ওয়ার্ড যদি বাড়ির খুদে সদস্যের মুখস্ত থাকে তাহলে যে কোনও বিপদ থেকেই অনেকটা সুরাহা মিলতে পারে। মানে ব্যাপারটা হল, খুদে শুধুমাত্র তাঁদের সঙ্গেই মিশবে বা থাকবে যারা ওই কোড-ওয়ার্ড তাকে বলতে পারবে। বাড়িতে একা থাকার ক্ষেত্রেও এই কোড কাজে আসবে। বাইরে থেকে, স্রেফ পরিচিত বললেই হবে না। ভিতরে একা খুদে তখনই দরজা খুলবে যখন নির্দিষ্ট কোড-ওয়ার্ড তাকে বলা হবে। অনেক সময় দেখা যায়, বাবা-মা পাঠিয়েছে এমন পরিচয় দিয়েও ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের অপহরণ করা হয়। সেই ঘটনাও কমাতে পারে এই কোড-ওয়ার্ড। আর সেই শব্দ যতই সহজ হোক, অচেনা কারও পক্ষে জানা সম্ভব নয়। তাই কোড না জানা কাউকে খুদেও বিশ্বাস করবে না। শুধু তাই নয়, কোড ওয়ার্ড আরও কাজে আসতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, যে কথা বাবা-মা’কে সহজে বলতে পারছে কোনও শিশু, সেই কথা পরিবারের অন্য কারও সামনে সহজে প্রকাশ করতে পারে না তারা। ধরে নেওয়া যাক, কোনও আত্মীয়ের বাড়িতে স পরিবারে রাত কাটানো হচ্ছে। কিন্তু কোনও কারণে সেই পরিবেশ খুদের পছন্দ হচ্ছে না। এদিকে নিজের অপছন্দের কথা সবার সামনে বলতেও পারছে না সে। বা বললেও, শিশুর প্রলাপ বলে কেউ আমল দিচ্ছে না। সমস্যা যদি গুরুতর হয় তাহলে ওই পরিস্থিতিতেও খুদে কোড-ওয়ার্ড ব্যবহার করতে পারে। অন্য কেউ কিছু না বুঝলেও তার বাবা-মা ঠিক বুঝে যাবে এর মানে কী। সেইমতো তাঁরাও ব্যবস্থা নিতে পারবেন। একইভাবে অন্য কোনও পরিবেশে অসুবিধার কথাও কোড-ওয়ার্ডের মাধ্যমেই বুঝিয়ে দিতে পারবে ওই খুদে। আগামীদিনে অভিভাবকদের এই কোড-ওয়ার্ডের বিষয়টা নিয়ে ভাবতে অনুরোধ করছেন সমাজ বিজ্ঞানীরা। উত্তরোত্তর বাড়তে থাকা শিশুদের উপর হওয়া অত্যাচার কমাতে যা অনেকটাই কাজে আসবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।