গরমে নাভিশ্বাস উঠেছে। এসি ছাড়া এক মুহূর্ত থাকার জো নেই। তাতে নাহয় ঘরের ভিতরে শান্তি। কিন্তু বাইরে? চাঁদিফাটা রোদ্দুর সহ্য করে এমন ক্ষমতা ক’জনের রয়েছে? তাই সহজেই অসুস্থ হচ্ছেন কেউ কেউ। মৃত্যুর ঘটনাও অস্বাভাবিক নয়। এসব থেকে বাঁচতেই অদ্ভুত উপায় বাতলেছে এই শহরের প্রশাসন। রাতারাতি গোটা এলাকার তাপমাত্রা কমেছে তাতে। ঠিক কী করা হয়েছে? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
চারদিক কংক্রিটের জঙ্গলে ভরা। কোথাও এতটুকু সবুজের চিহ্ন নেই। শহরের এই চেনা ছবি ধরা পড়বে না এখানে। অথচ এও পুরোদস্তুর শহর। বেশ পরিচিত বলা যায়। তফাৎ বলতে এখানে কংক্রিটের বদলে সবুজের মেলা। কারণ শহরের মাঝেই রয়েছে আস্ত একটা অভয়ারণ্য।
শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। কথা বলছি মারোল সম্পর্কে। মুম্বইয়ের এক শিল্প শহর। কারখানায় ঘেরা শহরে সবুজের ছোঁয়া এতদিন ছিল না বললেই চলে। তবে এবার সেই ছবিটা খানিক বদলেছে। এতটাই যে, শহরের চেনা ছবিও এখানে অচেনা ঠেকে। একথা আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না, গরমকালে শহুরে মানুষের বেশি কষ্ট। অতিরিক্ত দূষণের কারণে তাপমাত্রা কিছুটা হলেও বেশি থাকে। এবং প্রতিবছর তা উত্তরোত্তর বাড়তে থাকে। বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী নেওয়া হয় ঠিকই, তবে ধুলোয় ঢাকা শহরে গাছ বাঁচিয়ে রাখা কঠিন। তাই শহরের প্রাণবায়ু ফেরানোর আগে হারিয়ে যায় গাছ। কিন্তু ঠিকমতো পরিচর্যা করলে?
সম্প্রতি যা করে দেখিয়েছে মারোল শহরের মানুষরা। উদ্যোগ পুরসভার। সেইসঙ্গে হাত মেলান মারোল কো-অপারেটিভ এস্টেটের সদস্যরা। সবাই মিলে গড়ে তুলেছেন আস্ত একটা অভয়ারণ্য। আরও অনেকে এই মহৎ কাজে সাহায্য করেছেন। কারণ শহরের বুকে এই অভয়ারণ্য সকলের জন্য নতুন আশার আলো নিয়ে এসেছে। এক ধাক্কায় গোটা এলাকার তাপমাত্রা কমেছে। তাও ৪-৫ ডিগ্রী। অর্থাৎ মুম্বইয়ের বাকি অংশ যখন দূষণ আর ধুলোয় অন্ধকারে চোখ-মুখ ঢেকে গরমে হাঁসফাঁস করছে, মারোলের বাসিন্দারা নিশ্চিন্তে খোলা বাতাসে নিশ্বাস নিচ্ছেন। একসময় এই এলাকা মুম্বই শহরের বেশি হিট-স্ট্রেসড জোন হিসেবে পরিচিত ছিল। এখন সেই বদনাম ঘুচেছে। উলটে শহরের অন্যান্য জায়গার তুলনায় এখানে বসবাস অনেক বেশি আরামদায়ক হয়ে উঠেছে।
কাজটা যে সহজ ছিল এমন নয়। প্রায় ১ বছর লেগেছে এই অরণ্য গড়তে। একেবারে ছোট চারাগাছ যেমন লাগানো হয়েছে, তেমনই বসানো হয়েছে কিছু মাঝারি মাপের গাছ। সহজেই যাতে গাছগুলো বড় হতে পারে সেই জন্য বিশেষ পরিচর্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এমনভাবে গাছগুলো বসানো হয়েছে যেন সত্যিই কোনও অরণ্য। অথচ তার অবস্থান শহরের ঠিক মাঝখানে। কীভাবে এমন জায়গায় গাছগুলো বসানো যায় সেই নিয়ে বিস্তর আলোচনা সেরেছেন বিশেষজ্ঞরা। অবশেষে কাজ শেষ হলে দেখা যায়, পুরো এলাকার চেহারাই বদলে গিয়েছে। শুধু যে এলাকার তাপমাত্রা কমেছে এমন নয়। আরও অনেক কিছু বদল চোখে পড়েছে সকলের। তার মধ্যে অন্যতম পাখিদের আনাগোনা।
এমনিতে শহরের মাঝে পশু-পাখির দেখা মেলা ভার। তবে গাছে গাছে ঘেরা এই মারোল শহর পাখিদের কিচিরমিচিরে ভরে উঠছে আজকাল। নাম না জানা পাখি ভিড় করছে গাছের ডালে। আগামী পৃথিবীর জন্য এই ছবি যে কতটা আরামের তা আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে স্রেফ তৈরি করলেই তো হল না, সঠিক পরিচর্যা একান্ত প্রয়োজন। আপাতত যত্ন নিয়েই বিষয়টা দেখা হচ্ছে। আগামীতে একইভাবে তা করা হলে সমস্যা নেই। তবে আমাদের দেশে পরিবেশ নিয়ে মাথা ঘামানোর খুব একটা প্রয়োজন মনে করেন না অনেকেই। তাই এক্ষেত্রে কতদিন এই অভয়ারণ্য নিশ্চিন্তে শহরের বুকে টিকে থাকে সেটাই দেখার।