একবেলা খাবারের জন্য সারাদিন খাটতে হত। ১৬ বছর বয়স অবধি কার্যত দাস হয়েই কাটিয়েছেন। দারিদ্রের পাশাপাশি সামাজিক সম্মানও ছিল না। তবু হাল ছাড়েননি। একার লড়াইয়ে স্বাভাবিক করেছেন আর্থিক অবস্থা, ফিরিয়েছেন সামাজিক সম্মান। চলতি বছরে পদ্ম পুরস্কার পেলেন সেই সোমান্নাও। কেমন তাঁর জীবনের গল্প? আসুন শুনে নিই।
লড়াইয়ে আরেক নাম জীবন। এমনটা স্রেফ কথার কথা নয়। বাস্তবে অনেকের জীবনই যুদ্ধের সমান। দুবেলা দুমুঠো খাবার জোটাতেও উদয়াস্ত পরিশ্রম করতে হয়। সামাজিক সম্মান তো দূর অস্ত। তবু মুখ বুজে সবটা মেনে নিয়েই জীবনের লড়াইয়ে টিকে থাকেন অনেকেই। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেন। যাঁদের একার লড়াইয়ে একটা গোটা জাতি নিজেদের হারানো সম্মান ফিরে পায়।
আরও শুনুন: চলতি বছরে পদ্ম প্রাপকের তালিকায় নাম একাধিক বিদেশির, কারা তাঁরা?
সদ্য ঘোষিত পদ্ম পুরস্কারের তালিকায় নাম থাকা, সোমান্নার জীবনও সেই ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প শোনায়। ৬৬ বছর বয়সী মাইসুরুর এই ব্যক্তির গোটা জীবনটাই যেন সিনেমার গল্প। বলা বাহুল্য, বাস্তবে তাঁর জীবনের গল্পে অনুপ্রাণিত হয়ে সিনেমাও হয়েছে। সোমান্নার পরিচয় জানতে সবার আগে চিনতে হবে তাঁর শিকড়কে। আমাদের দেশে আদিবাসী উপজাতির সংখ্যা নেহাতই কম নয়। তেমনই এক প্রায় পরিচিত সম্প্রদায়, জিনু কুরুবা-র অংশ সোমান্না। সরকারি হিসাবে যা বিপন্নপ্রায় সম্প্রদায়ের তালিকাভুক্ত। একসময় সমাজে এর স্বীকৃতি ছিল না বললেই চলে। সেই সম্প্রদায়ের অংশ হিসেবে সোমান্নাকে ছোট থেকেই লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয়েছে। পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়েছেন ক্লাস ৪ অবধি। কিন্তু সেইসঙ্গে কাজও করতে হত। বিনা পয়সায় বেগার খাটা যাকে বলে, পেটের দায়ে ঠিক সেই কাজই করতেন সোমান্না। কারও গোয়াল পরিষ্কার তো কারও বাড়ির অন্য কোনও কাজ। এইসব করতে হত প্রতিদিন। বদলে স্রেফ দু’বেলা খাবার পেতেন। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও প্রায় একই অবস্থা ছিল। তবে ইন্দিরা গান্ধীর আমলে এই ধরনের বিনা পয়সায় বেগার খাটানো আইন করে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপরই শুরু হয় সোমান্নার ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই। সমাজে তাঁদের অধিকার রয়েছে, এমনটা নিশ্চিত করতে দীর্ঘদিন লড়াই করেছেন একাই। আদালতের দ্বারস্থও হয়েছেন। এইসময় স্থানীয় এক জঙ্গল রক্ষার কাজেও ঝাঁপিয়ে পড়েন সোমান্না। কোনওভাবেই জঙ্গল ধ্বংস হতে দেবেন না, এই পণ নিয়েই লড়াই শুরু করেন। একসময় সবদিক দিয়ে জয় হয় তাঁর। সমাজে তাঁর সম্প্রদায় যেমন স্বীকৃতি পায়, তেমনই ওই জঙ্গল বাঁচাতেও সফল হন সোমান্না।
আরও শুনুন: আগুনে ঝলসে গিয়েও ফিরেছিলেন জীবনে, দগ্ধ মানুষদের দিশা দেখিয়েই পদ্মশ্রী প্রেমার
এরপরও বিভিন্ন পরিবেশ সংক্রান্ত আন্দোলনে শামিল হয়েছেন সোমান্না। দেশের অন্যান্য উপজাতি সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও তাঁর ভূমিকা রয়েছে। বিদেশের মাটিতে ভারতের উপজাতি গোষ্ঠীর প্রতিনিধি হিসেবে তাঁকে পাঠানো হয়েছে। যার দরুন পুরষ্কার না সম্মানের কমতি নেই সোমান্নার ঝুলিতে। সরকারের তরফে পেয়েছেন বাল্মীকি পুরষ্কারও। এবার দেশের অন্যতম নাগরিক সম্মানও পেলেন তিনি। ৭৫ তম প্রজাতন্ত্র দিবসেই পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত হলেন মাইসুরুর সোমান্না।