জঙ্গলটাই ঘরবাড়ি। অবোলা পশুদের এতটুকু অসুবিধা সহ্য করতে পারেন না। তাই ঝড়-বাদল, ভূমিকম্পে একাই জঙ্গল আগলাতে ছোটেন। ১৯ বছর ধরে এভাবেই জঙ্গল ভালোবেসে কাটিয়ে দিলেন কাজিরাঙার যুবক। কার কথা বলছি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
শিবজ্ঞানে জীবসেবার কথা বলেছিলেন বিবেকানন্দ। স্বামীজির বাণী শুনে অনেকেই রাস্তায় থাকা বিড়াল কুকুরদের যত্ন করতে ছোটেন। কিন্তু জঙ্গলে ঢুকে অবোলা প্রাণীদের বাঁচানোর কথা সচরাচর কেউ ভাবেন না। প্রায় সকলেই মনে করেন, প্রকৃতির নিজস্ব নিয়মেই সেখানে নিশ্চিন্তে থাকে পশুরা। কিন্তু বাস্তবে তা হয় না। ঝড়-জল-ভূমিকম্পে মারাত্মক ক্ষতি হয় জঙ্গলের বিভিন্ন প্রাণীর। আর সেই প্রাণীদের রক্ষা করতেই নিজের জীবন বাজি রাখতে দুবার ভাবেন না কাজিরাঙার মনোজ গগৈ।
:আরও শুনুন:
শেষবেলায় স্বপ্নভঙ্গ! অলিম্পিকে তীরে এসে তরী ডুবেছিল যে ভারতীয়দের
অসমের এই অঞ্চলে প্রতিবছর পর্যটকরা ভিড় জমান। জঙ্গল সাফারি, রাত্রিবাস এইসবের জন্য বেশ জনপ্রিয় কাজিরাঙা। আর সেখানে গেলেই দেখা মিলবে মনোজের। বিগত ১৯ বছর ধরে এই জঙ্গলকেই নিজেই ঘরবাড়ি বানিয়ে ফেলেছেন তিনি। পশুপাখিরাও তাঁকে নিজের করে নিয়েছেন বহুদিন। কারণ আপদে বিপদে মনোজকেই সবসময় পাশে পায় এই জঙ্গলের অবোলা প্রাণীরা। এমনিতে যে কোনও জঙ্গলেই চোরাশিকারিদের ভয় থাকে। যতই সরকারি পাহারা থাক, অবোলা প্রাণীদের হত্যা করতে সবসময় এক পা বাড়িয়ে রাখে এই শিকারিরা। বাঘ, হাতি, গণ্ডার বাদ যায় না কেউ। রাতের অন্ধকারে চুপিসারে শিকার চলে। কখনও আহত পশু ওই অবস্থায় ফেলে রেখেই চম্পট দেয় দুষ্কৃতির দল। সেইসব পশুদের উদ্ধার করা মনোজের কাজ। পেশায় টুরিস্ট গাইড। তবে পশু-পাখি উদ্ধার করা তাঁর কাছে নেশার মতো।
:আরও শুনুন:
আমের জন্য বরাদ্দ দিনে দু-চার ফালি আম-কথা
পড়াশোনা করেছেন টেনেটুনে ক্লাস টেন অবধি। এরপর মুম্বই চলে যান। সেখানে পশু-পাখি উদ্ধারের জন্য বিশেষ ট্রেনিং নেন মনোজ। তারপর পাকাপাকি ভাবে ফিরে আসেন কাজিরাঙায়। ২০০৫ সাল থেকে এই উদ্ধার কাজ চালিয়ে আসছেন মনোজ। এতদিনে ৬ হাজারেরও বেশি পশু-পাখি-সাপ উদ্ধার করেছেন তিনি। কী নেই সে তালিকায়! গণ্ডার, চিতা, বনবিড়াল থেকে আরম্ভ করে শয়ে শয়ে বিষধর সাপের প্রাণ বাঁচিয়েছেন মনোজ। উদ্ধার করেছেন প্রচুর পাখি। এর মধ্যে বহু বিরল প্রজাতির পাখিও রয়েছে। স্রেফ চোরাশিকারিদের থেকে নয়, জঙ্গলে হঠাৎ কোনও বিপদ এলেও ত্রাতা মধুসূদন হিসেবে হাজির হন মনোজ। স্রেফ উদ্ধার করাই নয়, অবোলা পশু-পাখির পরিচর্যাও করেন নিজেই। দায়িত্ব নিয়ে সব কাজ সামলান। তাঁর কথায়, এই কাজে কোনও ক্লান্তি নেই। কোনও পশুকে বাঁচাতে পারার যে আনন্দ, তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয় বলেই মনে করেন মনোজ। আগামী দিনে এইভাবে নিজের ভালোবাসাকে বজায় রাখতে চান তিনি। তাতে আর কিছু হোক না হোক, হাজার হাজার অবোলা পশু সুস্থ জীবন পাবে।