চোখের সামনে যদি দেখেন, একটা গাছ দিব্যি ‘লম্বা লম্বা পা’ ফেলে হেঁটে চলে বেড়াচ্ছে, কেমন লাগবে? নির্ঘাত ভৌতিক কাণ্ড ভেবে আঁতকে উঠবেন। কিন্তু জানেন কি, বাস্তবে সত্যিই ঘটে এহেন ঘটনা? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
গাছের যে প্রাণ আছে, সে কথা তো কবেই প্রমাণ করে দিয়েছে বিজ্ঞান। কিন্তু মানুষের মতো চলন তার নেই, অর্থাৎ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় গাছের স্থানান্তর ঘটে না, এমন কথাই জানা ছিল এতদিন। সে কথাকেই ভুল বলে প্রমাণ করে দিয়েছে এই বিশেষ গাছ। বলা নেই-কওয়া নেই, আচমকা একটা গাছকে ‘লম্বা লম্বা পা’ ফেলে হেঁটে চলে বেড়াতে দেখলে ঘাবড়ে যাওয়ারই কথা। কিন্তু এ কোনও অলৌকিক বা রোমাঞ্চকর গল্প নয়। ইকুয়েডরের গভীর ট্রপিক্যাল রেন ফরেস্টে সত্যিই স্থান পরিবর্তন করে এক বিশেষ প্রজাতির গাছ। কীভাবে? তাহলে খুলেই বলা যাক।
আরও শুনুন: ৯ বছরে বিয়ে, স্বামীর হাতে ধর্ষণের শিকার… তবুও বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মুখ নুজুদ আলি
পাম গোত্রের এই বিশেষ গাছটির নাম ক্যাশাপোনা। কেউ কেউ অবশ্য সহজ কথায় একে ‘চলমান পাম গাছ’-ও বলে থাকেন। এই গাছের উচ্চতা হয় প্রায় ১৬-২০ মিটার এবং ব্যাস ১২-১৬ সেমি। ঠিক ‘লম্বা লম্বা পা’ নয়, বলা ভাল, লম্বা লম্বা শিকড় দিয়েই এই গাছ চলাফেরা করে। উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এ গাছের শিকড় মাটির ওপরে অনেকটা পায়ের মতোই খাড়া দৃশ্যমান। আর তাই দিয়েই দিব্যি স্বচ্ছন্দভাবে স্থান পরিবর্তন করে এই গাছ। ক্যাশাপোনা গাছের এই তাক লাগানো আচরণ ১৯৮০ সালে প্রথমবার চিহ্নিত করেন গবেষক জন. এইচ. বডলি।
আরও শুনুন: ফুলে সাজানো গাড়িতে নয়, কফিনে চড়ে বিয়ের আসরে এলেন বর
কীভাবে স্থান পরিবর্তন করে এই গাছ? সে রহস্য ভেদ করেছেন স্লোভাকিয়ার রাষ্ট্রীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উদ্ভিদবিজ্ঞানী, পিটার ভ্র্যানস্কি। তাঁর মতে, টিকে থাকার তাগিদেই শিকড়ের সাহায্যে জায়গা পরিবর্তন করতে পারে তারা৷ কখনও কখনও দিনে দুই থেকে তিন সেন্টিমিটার পর্যন্ত৷ আসলে ওই অঞ্চলে ভূমিক্ষয়ের হার খুব বেশি৷ আর জঙ্গল গভীর হওয়ার সর্বত্র সূর্যের আলোও পৌঁছতে পারে না৷ তাই গোড়ার মাটি যখন আলগা হয়ে আসে, তখন এই পাম গাছগুলো অপেক্ষাকৃত শক্ত মাটি এবং বেশি আলোর সন্ধানে উঁচু উঁচু নতুন ঠেসমূলজাতীয় শিকড় তৈরি করে৷ এক দিকে যখন সেই নতুন শিকড় শক্ত মাটিতে ক্রমশ গেঁথে যেতে থাকে, পুরনো শিকড়গুলো ধীরে ধীরে মাটি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এভাবে গাছটি নিজের পুরনো অবস্থান থেকে খানিকটা সরে যায়। আর এইভাবেই গাছটি একটু একটু করে আগের জায়গা থেকে সরে যায়৷ ওই বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, এভাবে পুরোপুরি জায়গা বদল করতে একটি গাছের প্রায় দু’বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে৷ কখনও কখনও নিজের প্রথম অবস্থান থেকে প্রায় ২০ মিটার পর্যন্ত সরে যেতে দেখা যায় গাছগুলিকে, এমনটাই জানিয়েছেন গবেষকেরা।