ছোট একটা গ্রাম। তেমন সাজানো গোছানো নয়। আলাদা কোনও ভৌগলিক গুরুত্ব নেই। বিশেষ কিছু পাওয়া যায়, এমনটাও নয়। তবু মাঝে মধ্যেই বাইরে থেকে অনেকে হাজির হন এখানে। ঘুরে দেখেন চারপাশ। প্রত্যেকেই বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন গ্রামের বাইরে একটা মূর্তির সামনে। কেন এই গ্রামের কথা বলছি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
আলাদা করে ঘোষণা হয়নি। তবে ভারত-পাক সংঘাত যে যুদ্ধের চাইতে কম নয়, তা স্বীকার করছেন অনেকেই। এই আবহে প্রশ্ন উঠছে তাদের নিয়ে, যারা সীমান্ত পাহারা দিচ্ছেন। কারও ছুটি বাতিল হয়েছে, কেউ আবার বাড়ি ফেরার একদিনের মধ্যে রওনা দিয়েছেন বর্ডারের উদ্দেশে। এই আবহে ছত্তিশগড়ের এক গ্রাম মোটের উপর পুরুষশূন্য বলা যায়। কারন এখানকার সব বাড়িতেই অন্তত একজন পুরুষ সেনায় কর্মরত।
কথা বলছি, পাহান্দা সম্পর্কে। রাজধানী রায়পুরের থেকে প্রায় ৫০ কিমি দূরের ছোট একটা গ্রাম। যা স্থানীয়দের কাছে ‘সৈনিক গাঁও’ হিসেবে পরিচিত। ভারত-পাক সংঘাতের আবহে নেটদুনিয়ায় কিছু ভিডিও বেশ ভাইরাল হচ্ছিল। তার মধ্যে অন্যতম, ঘরের ছেলের সেনায় যোগ দিতে যাওয়ার মুহূর্ত। কেউ কাঁদছেন, কেউ সেলাম ঠুকছেন, কেউ আবার মালা পরিয়ে দিচ্ছেন, এসবের মাঝে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে বীরদর্পে নিজের গন্তব্যে রওনা দিচ্ছেন জওয়ান। পাহান্দা গ্রাম প্রতিদিন সাক্ষী থাকছে এমন দৃশ্যের। তবে এমনটা নতুন কিছু নয়। দীর্ঘদিন ধরে এই গ্রাম থেকে শয়ে শয়ে যুবক ভারতীয় সেনায় যোগ দিয়ে আসছে। বলা ভালো, গ্রামের যুবকরা সেনায় যোগ দেওয়ার স্বপ্ন দেখেই বড় হয়। বর্তমান অস্থির পরিস্থিতিতে সেই স্বপ্ন যেন আরও বেশি তাড়া করছে তাদের। অন্য কোনও কাজে যুক্ত এমন কেউ, মনেপ্রাণে চাইছেন সেনায় যোগ দিতে। আসলে, বন্ধু-বান্ধব বেশিরভাগই সেনাবাহিনীতে। সংঘাতের পরিস্থিতে তারা কেউ বাড়ি নেই। আদৌ ফিরবে কিনা জানা নেই। তাই বাকিরাও চাইছে তাদের সঙ্গে যোগ দিতে। গ্রামের প্রায় সব পরিবারের দাবি, প্রয়োজনে আরও অনেকে সেনায় যোগ দেবে, স্রেফ দেশ যেন সুরক্ষিত থাকে।
এর আগে অগ্নিবীর প্রকল্প নিয়ে বেশ বিতর্ক হয়েছিল। তাতে নাম জড়িয়েছিল ছত্তিশগড়ের। তবে পাহান্দা গ্রাম এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হিসেবেই ধরা দিয়েছিল। সেনায় যোগ দেওয়ার সুযোগ যে কোনও অবস্থাতেই তাদের কাছে হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো। তাই সমস্যার কথা জেনেও বিষয়টাকে সাদরে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তাঁরা। এরপর অবশ্য নদী দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে অগ্নিবীর বিতর্ক নিয়ে মাথা ঘামাতে চাইছেন না অনেকেই। আর এই আবহে নতুন করে চর্চায় ফিরছে পাহান্দা। গ্রামে পা রাখলেই দেখা যাবে, বিভিন্ন প্রান্তে কয়েকজন যুবক কসরত করছে। তাদের গাইড করছেন প্রাক্তন সেনা জওয়ান ঈশ্বরী প্রসাদ ভার্মা। ইনিই পাহান্দা গ্রাম থেকে সেনায় যোগ দেওয়া প্রথম ব্যক্তি। দীর্ঘদিন দেশসেবার কাজে নিযুক্ত ছিলেন। সরকারি ভাবে অবসর নিলেও, দেশসেবার কাজ এখনও থামাননি। সেই প্রমাণ মেলে তাঁর কোচিং-এর ধরণ দেখে। রীতিমতো কড়া ট্রেনিং-এ সবসময় গ্রামের যুবকদের ব্যস্ত থাকেন ঈশ্বরী। তাতে অবশ্য এতটুকু অভিযোগ নেই যুবকদের। আসলে, এরা সকলেই সেনায় যোগ দিতে চায়, তার জন্য যা করতে হয় সেটাই করতে প্রস্তুত। সে কথা নিজেও বোঝেন ঈশ্বরী। আর তাই গ্রামের হাজার সময়স থাকলেও মন দিয়ে সেনা গড়ার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
গ্রামবাসীরা দাবি করেন, পাহান্দার মতো এমন গ্রাম আর নেই, যেখানে এত সংখ্যাক সেনা জওয়ান রয়েছেন। হিসেব করলে দেখা যাবে, প্রায় সব বাড়িতেই অন্তত একজন সেনার সঙ্গে যুক্ত। তাই লোকমুখে গ্রামের নাম বদলে গিয়েছে। গ্রামবাসীদের মনের জোর দেখার মতো। মৃত্যুভয় থাকলেও সেটা প্রকাশ করেন না কেউ। সকলেই বীরদর্পে দেশের সেবায় নিযুক্ত থাকতে চান। ভারত-পাক সংঘাতের আবহে এই গ্রামের প্রত্যেকের উত্তেজনা তুঙ্গে। অপারেশন সিঁদুর নিয়েও সকলেই বেশ উচ্ছ্বসিত। যুদ্ধ হলে সকলেই মিলে ঝাঁপিয়ে পড়তেও পিছপা হবেন না বলেই দাবি গ্রামবাসীর। এমনিতে আলাদা কিছু দেখার মতো নেই। তবু অনেকেই গ্রামে ঘুরতে আসেন। বাইরে একটি মূর্তি রয়েছে। সেও গ্রামের কোনও এক প্রাক্তন জওয়ানের। সবমিলিয়ে গ্রামের পরিবেশটাই অন্যরকম। যুদ্ধের আবহে সেনা যোগ দিতে যাওয়া জওয়ানদের নিয়ে চর্চা চলছেই। আর তাতেই সামনে উঠে এসেছে এই সৈনিক গ্রামের কথা।