মন্দিরের মধ্যে থাকা এই গুহার ভেতর থেকে নাকি জীবিত বেরিয়ে আসতে পারেনি কোনও মানুষ। আমজনতার বিশ্বাস ছিল, ওই গুহা আসলে নরকের দ্বার। আর সেখানে অনধিকার প্রবেশ করার শাস্তি মৃত্যু। কী রহস্য রয়েছে এই গুহার অন্দরে? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
বাইরে থেকে মন্দির, কিন্তু এই মন্দির নাকি নরকের দ্বার। কারণ তার নিচেই আছে এক রহস্যময় সুড়ঙ্গ। মাত্র একজন মানুষ কোনোরকমে সেখান দিয়ে গলতে পারে। সেই পথ দিয়ে ভেতরের গুহায় পৌঁছলে দেখা যায় মেঝেজোড়া গভীর ফাটল, যেখান থেকে উঠে আসছে ধোঁয়া। নিচে যে বয়ে যাচ্ছে ফুটন্ত জলস্রোত। সেই জলস্রোতের নিচেই নাকি রয়েছে পাতালে প্রবেশের পথ। আর সেই পাতালেই বাস দেবতা প্লুটোর। কিন্তু সে পথে যে কোনও সাধারণ মানুষ গেলেই তাকে নিজের হাতে শাস্তি দেবেন ক্রুদ্ধ দেবতা। একমাত্র পুরোহিতদেরই অধিকার আছে সেখানে পৌঁছনোর। আশ্চর্য এই গুহা সম্পর্কে শোনা যেত এমনই কথা।
আরও শুনুন: এক দিনের সুলতান… দেশের এইসব হোটেলে এক রাত কাটানোর খরচ প্রায় ৪ লক্ষ টাকা
কিন্তু কোথায় আছে সেই পাতালগুহা? কী-ই বা রহস্য রয়েছে ওই গুহার নেপথ্যে?
আসলে এই অদ্ভুত গুহা যে নগরে ছিল, তা গড়ে উঠেছিল আজ থেকে অন্তত আড়াই হাজার বছর আগে। হিয়েরাপোলিস নামের উন্নত সেই নগরটিতে ছিল অনেক উষ্ণ প্রস্রবণ, দূরদূরান্ত থেকে যেখানে রোগ সারাতে আসতেন মানুষ। গ্রিক ভাষায় হিয়েরাপোলিস শব্দের অর্থ পবিত্র নগরী। একদিকে আরোগ্যের আয়োজন, অন্যদিকে সেই নগরেই নাকি খোলা ছিল এমন নরকের দ্বার, যেখানে প্রবেশ করলেই মৃত্যু হয় মানুষের। ভূমিকম্পের প্রকোপে হারিয়ে যাওয়া সেই নগরটির হদিশ মেলে ১৮৮৭ সালে। খননকার্য চালিয়ে সেখানেই খোঁজ মেলে এই মন্দিরের। রোমান দেবতা প্লুটোর আরাধনা করা হত এই মন্দিরে। পুথিপত্র থেকে হদিশ মেলে, একসময় রোমানদের অধিকারেই ছিল এই শহর। আর মন্দির সম্পর্কে এহেন কিংবদন্তির জন্ম হয়েছিল রোমান পুরোহিতদের হাত ধরেই। দেবতাকে উৎসর্গ করে তাঁরা পশুপাখিদের পায়ে দড়ি বেঁধে তাদের গুহার মধ্যে ছুড়ে দিতেন। তাদের মৃত্যু হলে পর ওই মাংস প্রসাদ হিসেবে বিতরণ করা হত। কিন্তু তাঁরা নিজেরা ওই গুহায় ঢুকে জীবিত অবস্থায় ফের বাইরে বেরিয়ে আসতেন। যে কারণে তাঁদের অলৌকিক শক্তি আছে বলেই বিশ্বাস করত আমজনতা।
অবশ্য মন্দিরটির সঙ্গে জুড়ে থাকা এই মিথকে নিছক মিথ্যে বললেও ভুল হবে। কারণ ঐতিহাসিক স্ট্রাবো-ও জানিয়েছেন, ওই গুহার ভেতর একাধিক পাখিকে ছুড়ে দিয়ে তিনি পরীক্ষা করে দেখেছিলেন, সত্যিই পাখিগুলি সঙ্গে সঙ্গে মারা গিয়েছিল। কিন্তু এই মৃত্যুর রহস্য ভেদ করেছেন আধুনিক গবেষকরা। তাঁদের মতে, ওই প্রাণীদের মৃত্যুর কারণ কোনও দেবতার অভিশাপ নয়, বরং গুহার বদ্ধ বাতাসে থাকা বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস। জানা গিয়েছে, গুহার ভেতরের বায়ুর প্রায় ৯১ শতাংশই এই গ্যাস, যে কোনও প্রাণীর পক্ষেই যা বিষবৎ। পুরোহিতরা কৌশলে গুহার ভেতরের কোনও লুকোনো সুড়ঙ্গে ঢুকে গিয়ে একইসঙ্গে প্রাণরক্ষা করতেন এবং সাধারণ মানুষকেও ফাঁকি দিতেন বলেই মনে করেন আধুনিক গবেষকেরা। অবশেষে ভূমিকম্পের গ্রাসে একদিন তলিয়ে যায় গোটা শহর, সঙ্গে এই মন্দিরও। যে পাতালের দ্বারের কথা বলে সাধারণ মানুষকে বোকা বানাতেন মন্দিরের পুরোহিতরা, সেই পাতালের গর্ভেই শেষ পর্যন্ত তলিয়ে যায় পাতালদেবতার মন্দির।