মহাভারতের যুদ্ধ কেন হয়েছিল? প্রায়শই এ প্রশ্ন ওঠে। উত্তর রয়েছে, তবে একাধিক। অবশ্যই বিতর্কিত। তবে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের নেপথ্যে দ্রোপদীর ন্যায়বিচারের জন্য সোচ্চার হওয়া অস্বীকার করা যায় না। স্বয়ং কৃষ্ণও যা উপেক্ষা করেননি। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ন্যায়বিচার। দাবি এটুকুই। তার জন্য পথে নামার প্রয়োজন আছে কি? উত্তর হয়তো নাই হবে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতে স্রেফ ন্যায়বিচারের দাবিতেই রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাতে হচ্ছে। জোর গলায় সোচ্চার না হলে বিচার মিলবে না, এমনটাই যেন স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। অবশ্য এমনটা আগে ছিল না বললে ভুল হয়। উদাহরণ রয়েছে মহাভারতেও। যার সঙ্গে বিশেষভাবে জড়িয়ে শ্রীকৃষ্ণ এবং দ্রৌপদী।
:আরও শুনুন:
গোবিন্দভোগ, রাধাবল্লভি, গোকুলপিঠে…বাঙালির স্বাদেও সাধের কৃষ্ণ
দ্রুপদ রাজার কন্যা। পঞ্চপাণ্ডব তাঁর স্বামী। সেই দ্রৌপদীকেও ভরা সভায় লাঞ্ছিত হতে হয়। মহাভারতের এই বস্ত্রহরণ পর্ব কমবেশি সকলেরই জানা। তাতে শ্রীকৃষ্ণের মাহাত্ম্য প্রচারই আলো পায়। কীভাবে মধুসূদন ত্রাতা হয়ে পাঞ্চালীর সম্ভ্রম রক্ষা করেছিলেন সেই কাহিনি সকলের মুখে মুখে ফেরে। বিপদে পরলে এভাবেই কৃষ্ণ বাঁচাবেন, এই আশ্বাসও দেন কেউ কেউ। তাতে মাধবের দৈব ক্ষমতায় বিশ্বাস বাড়ে। বিপদে পড়লেই কৃষ্ণনাম জপার কথা মনে পরে। আড়ালে থেকে যায় অন্য একটা দিক। দ্রৌপদীর দিক। অন্যায়ের প্রতিবাদ জানিয়ে ন্যায়বিচার চাওয়ার দিক। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুরুর আগে বারবার এই নিয়েই সোচ্চার হয়েছিলেন পাঞ্চালী। তাঁর যুক্তি উপেক্ষা করতে পারেননি মাধবও। কাহিনি অনুযায়ী যুদ্ধ শুরুর আগে স্বয়ং গোবিন্দ গিয়েছিলেন কৌরবদের কাছে সন্ধি প্রস্তাব নিয়ে। তাতে রাজি হননি দুর্যোধনরা। তাই বলে মাধব কি যুদ্ধ আটকাতে পারতেন না? বিশ্বরূপ চাইলেই হয়তো পারতেন। তবে এই প্রসঙ্গেই উঠে আসে দ্রৌপদীর প্রতিবাদ।
আরও শুনুন:
‘রাস্তার মোড়ে যমরাজ অপেক্ষা করছেন!’ ধর্ষকদের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন যোগী আদিত্যনাথ
বারবার ন্যায়বিচারের আবেদন জানিয়েছেন দ্রৌপদী। যে অন্যায় তাঁর সঙ্গে হয়েছিল, তা সমগ্র নারী জাতির অপমান। এই যুক্তিতেই সোচ্চার হতেন পাঞ্চালী। বন্ধু মাধবের কাছে বিচার চাইতেন। কৃষ্ণ স্বয়ং যুদ্ধের সঙ্গে যুক্ত হন, এমনটাই চাইতেন। দ্রৌপদীর কাছে এই যুদ্ধ ছিল ন্যায়বিচারের লড়াই। সে যুক্তি উপেক্ষা করেননি মাধবও। অংশ নেন যুদ্ধে। অস্ত্রধারণ করেননি। তবে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে কৃষ্ণের ভূমিকাই বোধহয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে গণ্য হবে। অথচ দ্রৌপদীর আরজি ছাড়া এমনটা হয়তো সম্ভবই হত না। তাই শুধু বস্ত্রহরণের প্রসঙ্গ ধরে দ্রৌপদী-কৃষ্ণের সম্পর্ক ব্যাখ্যা চলে না। কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধে কৃষ্ণের অংশগ্রহনও পাঞ্চালীর কারণে, এমনটা বলাই যায়।