ভোটের লড়াইয়ে এগোতে জোট বাঁধে অনেক দলই। দেশের রাজনীতি বারবারই দেখেছে এই প্রবণতাকে। তবে জোট বাঁধলে যে কার্যসিদ্ধি হতে পারে, এ কথা কিন্তু বুঝিয়ে দিয়েছিল রামায়ণ-মহাভারতের মতো প্রাচীন মহাকাব্যই। শুনে নিন।
বছরের পর বছর ভোট আসে। তার সঙ্গেই জোট আসে যায়। জোট বদলায়। যাঁরা জোট বাধেন, তাদেরও দিন বদলায় অনেক সময়েই। একা লড়ে যা সম্ভব ছিল না, জোটের লড়াইয়ে অনেকসময়ই হাসিল হয় সেই জয়। শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে বড় ধাক্কা দেওয়া যায়। চব্বিশের লোকসভা ভোটের মরশুমে সেই জোটের বাজারই চড়া। বিজেপিশাসিত এনডিএ সরকারের মোকাবিলা করার জন্যই ইন্ডিয়া জোটে নাম লিখিয়েছিল বিরোধীরা। তবে ভারতের রাজনীতিতে এই জোটকীর্তন কিন্তু নতুন নয়। জোট বাঁধলে যে কার্যসিদ্ধি হতে পারে, সে কথা এ দেশকে প্রথম শিখিয়েছিল দেশের দুই মহাকাব্যই। রামায়ণ ও মহাভারতেই ছিল জোটের প্রাথমিক পাঠ।
আরও শুনুন:
ধর্মের নামে কাটা পড়বে লক্ষ গাছ! তাপে পুড়লেও যোগীরাজ্য বোঝাল, পরিবেশ ফেলনাই
সীতাহরণের পরে রামের অবস্থাটা মনে করে দেখা যাক। জটায়ুর থেকে রাম লক্ষ্মণ জানতে পেরেছিলেন, সীতাকে অপহরণ করে লঙ্কায় নিয়ে গিয়েছে রাবণ। কিন্তু বনবাসে আসা দুই রাজপুত্র, একা একা একটা গোটা দেশের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামতে পারতেন কি? না, দুর্দান্ত বীর হলেও রামচন্দ্র জানতেন, যুদ্ধে সাহসের পাশাপাশি কৌশলেরও প্রয়োজন। সে কৌশল হিসেবেই জোট বেঁধেছিলেন তিনি। বানর, ভল্লুক, পাখি, সবরকম প্রাণীর সঙ্গেই জোট বেঁধে সীতা উদ্ধারের পরিকল্পনা করেছিলেন রাম। দেবতাদের থেকে সহায়তা তো ছিলই। একইসঙ্গে কাঠবিড়ালির মতো সামান্য শরিকও যে জোটে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে, তা বুঝিয়েছিল রামের এই পদক্ষেপই।
আবার মহাভারতে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধই তো আসলে দুই জোটের যুদ্ধ। পাণ্ডব আর কৌরব, দুই পক্ষেরই পাশে দাঁড়িয়েছিলেন একাধিক রাজা। তাঁরা যুদ্ধ করেছেন, রক্ত ঝরিয়েছেন। এখানে পাণ্ডবদের জোটে রাজাদের যোগ দেওয়ার মূল কারণ ছিল ধর্মের পক্ষে লড়াই। আবার আত্মীয়তার সূত্রে ভীষ্ম-কৃপ-শল্যরা যে কুরুপক্ষে যোগ দিলেন, সেখানেও একরকম ধর্মবোধই জারি ছিল। অন্নদাতার প্রতি কৃতজ্ঞতার ঋণ শোধ করলেন তাঁরা, ব্যক্তিগত পছন্দ মেনে দলবদল করলেন না, এও তো এ যুগের রাজনীতির কাছে শিক্ষণীয়।
আরও শুনুন:
জোট বিনে গীত নাই! স্বাধীনতার আগে থেকেই ভোটে শুরু জোট-যাত্রা
সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, রাজনৈতিক কারণে জোটের ভাবনাও এ দেশে নতুন নয়। আরও অনেক কিছুর মতোই, এ বিষয়ের সূত্রও রয়ে গিয়েছে দেশের প্রাচীন মহাকাব্যে। পাশাপাশি, জোট বাঁধলেও যে কেবল ব্যক্তিস্বার্থকে গুরুত্ব না দিয়ে নীতি ও ন্যায্যতার সূত্রগুলি মনে রাখা দরকার, সে কথাও মনে করিয়ে দেয় এই মহাকাব্যিক পাঠই। রামরাজ্যে দাঁড়িয়ে সেই পাঠ মনে রাখা বাস্তবিকই জরুরি।