ভাল রান্না করতে লাগে একটুখানি মশলা। বিজ্ঞাপনে এমনই দাবি করত মশলার একটি বিশেষ ব্র্যান্ড। কিন্তু কোনও নামীদামি ব্র্যান্ড নয়, স্রেফ মাটি দিয়েই যে মশলার কাজ সেরে ফেলা যেতে পারে, জানেন কি সে কথা? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
ভাল রান্না মানেই তরিজুতের বহর। রান্নার মূল উপকরণগুলির কথা ছেড়েই দিন, কেবল একটি সাজানো মশলার বাক্স দেখলেই প্রায় বিশ্বরূপ দর্শন ঘটে যেতে পারে। জিরে, কালোজিরে, মৌরি, পাঁচফোড়ন, রাঁধুনি, কালো কিংবা সাদা সর্ষে, কতরকম নাম আর কতরকম চেহারা তাদের! এক-এক রকম মশলার গুণে পালটে পালটে যায় একই ব্যঞ্জনের স্বাদ। আবার অঞ্চলভেদে, দেশভেদে পালটে যায় মশলার ধরনও। কিন্তু মশলা হিসেবে যাই ব্যবহার করা হোক না কেন, সেই তালিকায় কি মাটি থাকতে পারে কখনও? যে মাটিতে হেঁটেচলে বেড়াচ্ছি, সেই মাটিই পড়বে খাবারে? এমনটা কি আদৌ সম্ভব?
আরও শুনুন: পৃথিবীতে খাদ্যসংকটের সমাধান করতে পারে মানুষের মূত্র, দাবি বিজ্ঞানীদের
আজ্ঞে হ্যাঁ। বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি! বাস্তবিক এই পৃথিবীতে রয়েছে এমন একটি দ্বীপ, যার মাটিকে রান্নায় ব্যবহার করা হয়। অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যি। কিন্তু কেন এমন চল রয়েছে সেখানে? আর কোথায়ই বা দেখা মিলবে এই দ্বীপের? খুলেই বলা যাক।
পারস্য উপসাগরে ভাসমান মাত্র ৪২ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের একটি দ্বীপ। রাজনৈতিক ভাবে ইরানের অন্তর্গত। নাম হরমুজ। যদিও কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে ‘রেনবো আইল্যান্ড’ নামেই বিখ্যাত এই দ্বীপ। একসময়ে হরমুজ দ্বীপকে এশিয়া ও ইউরোপের সমুদ্র বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ বন্দর হিসেবে গণ্য করা হত। তবে এশিয়া-ইউরোপের বাণিজ্যে অন্য পথ খুলে গেলে এর গুরুত্ব কমে যায় অনেকটাই। আর এই দ্বীপেই রয়েছে রান্নায় মশলার বদলে দ্বীপের মাটি ব্যবহার করার প্রচলন। কিন্তু কেন? কী এমন রয়েছে এই দ্বীপের মাটিতে?
আরও শুনুন: শেষপাতে বাঙালির প্রিয় যে দই, তা কি জন্মসূত্রে ‘বাঙালি’?
জানা গিয়েছে, এই দ্বীপের মাটি খনিজ পদার্থে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এখানে ৭০ ধরনের খনিজ পদার্থ মেলে। সেই কারণেই এর মাটিতে মাটির স্বাভাবিক বর্ণ নেই, বরং সেখানে দেখা যায় বিভিন্ন রং। আর তাই সকলের মুখে মুখে এর নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘রেনবো আইল্যান্ড’। কোটি কোটি বছর আগেই এই দ্বীপের মাটিতে নুনের মোটা আস্তরণ ফেলেছে সমুদ্রের নোনা জল। সেই নুনের সঙ্গে আগ্নেয়গিরির লাভার খনিজের প্রতিক্রিয়ার দরুন দ্বীপের মাটিতে বিভিন্ন রং দেখা যায় বলেই মনে করেন ভূবিজ্ঞানীরা। আর এই মাটিই রুটির সঙ্গে মশলা হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন দ্বীপের অধিবাসীরা। স্থানীয় ভাষায় এই বিশেষ রুটির নাম ‘তোমশি’।
মানুষের খাদ্যাখাদ্যের ইতিহাসে আজব আজব খাবারের কোনও শেষ নেই। সেই তালিকাতেই জায়গা করে নিয়েছে ‘রেনবো আইল্যান্ড’-এর ‘রেনবো আইল্যান্ড’ মাটি মেশানো এই বিশেষ ধরনের রুটিও।