রেলের ধাক্কায় হাতির মৃত্যু। এ কোনও নতুন ঘটনা নয়। হাজার চেষ্টা করেও সম্পূর্ণভাবে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে এই কাজে এবার AI ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বনদপ্তর। ঠিক কীভাবে হাতির সুরক্ষায় কাজ করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
বিগত কয়েক বছরে সর্বত্রই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ছড়াছড়ি। এর চাকরি হারাচ্ছেন অনেকেই। তাঁদের কাছে AI অবশ্যই ভিলেন। কিন্তু সামগ্রিকভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে এমনটা বলা যায় না। চাইলেই এই প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ভালো কাজ করা সম্ভব। ঠিক যেমনটা ভেবেছেন বনদপ্তরের আধিকারিকরা।
আরও শুনুন: সম্বিৎ হারালে সম্বিতের চলে! উপবাস না খাওয়াদাওয়া? পরামর্শেই কটাক্ষ-বাণ বিজেডি নেতার
আমাদের দেশে বন্যপ্রাণ সুরক্ষায় একাধিক পদক্ষেপ নিতে হয় প্রশাসনকে। একদিকে চোরাশিকারিদের অত্যাচার, অন্যদিকে পরিবেশ ধ্বংসের হিড়িক, দুয়ের প্রভাবেই বিপর্যস্ত বন্যপ্রাণ। ইতিমধ্যেই লুপ্তপ্রায় প্রাণীর তালিকায় নাম উঠেছে বেশ কিছু ভারতীয় জন্তুর। আগামীদিনে পরিবেশ থেকে যারা চিরতরে হারিয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে আরও একটা বড় সমস্যা দুর্ঘটনা। হামেশাই শোনা যায়, সড়ক বা রেল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে বন্যজন্তু। কখনও বাঘ, কখনও বাইসন এমনকি হাতির মৃত্যুর ঘটনাও অবাক করে না। দোষটা অবশ্যই ওদের নয়। নিজেদের প্রয়োজনে জঙ্গল কেটে রেললাইন বা সড়ক তৈরি হয়েছে। সেখানে দিনরাত ঝড়ের গতিতে ছুটছে গাড়ি কিংবা ট্রেন। বুঝতে না পেরে রেললাইন পেরোতে গেলেই বিপদ। চোখের নিমেষে কাটা পড়ছে অবলা প্রাণী। সমীক্ষা বলছে, রেলে কাঁটা পড়ে হাতির মৃত্যর সংখ্যা যথেষ্টই বেশি। এইভাবে চলতে থাকলে নিজেদের দোষেই পরিবেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের হারাতে থাকব আমরা। যদিও দুর্ঘটনা রুখতে সরকার ব্যবস্থা নেয়নি বললে ভুল হয়। একাধিক পদক্ষেপ করা হয়েছে হাতি মৃত্যু বন্ধের জন্য। কিছুতেই তেমন লাভ হয়নি। পাহারা বসিয়েও বিগত কয়েক বছরে রেলে কাটা পড়ে হাতি মৃত্যুর সংখ্যা লাফিয়ে বেড়েছে। তাই মানুষের ভরসা ছেড়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার হাত ধরতে চাইছেন বনদপ্তরের আধিকারিকরা।
আরও শুনুন: মোদি সরকারকে দেখে স্বর্গে নাকি উদ্বিগ্ন হতেন বাজপেয়ী! বলছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী
ইতিমধ্যেই সেই পদক্ষেপ করেছেন কেরলের বনদপ্তর। সে রাজ্যে এমন জঙ্গলের সংখ্যা প্রচুর, যার মধ্যে দিয়ে রেললাইন গিয়েছে। দিনের বেলায় তাও নজর রাখা সম্ভব। কিন্তু রাতের অন্ধকারে ট্রেনের গতিবিধি নজরে রাখা প্রায় অসম্ভব। কাজেই রাতের বেলায় ট্রেনের সামনে হাতি চলে এলেই দুর্ঘটনা ঘটছে। তাই রেললাইন বরাবর বিশেষ AI টাওয়ার বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেরলের বনদপ্তর। এর বিশেষত্ব বলতে দূর থেকে লাইনের কাছে থাকা কোনও জন্তুকে ট্র্যাক করা। এই টাওয়ারে যে বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরা থাকছে, তাতে লাইনের ১০০ ফিট দূরত্বের মধ্যে থাকা বন্যজন্তুকে ধরে ফেলা সম্ভব। শুধু ছবি নয়, জন্তুটির অবস্থানও স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিতে পারবে ওই ক্যামেরা। আর এখানেই AI কারসাজি! জানা গিয়েছে, এই ক্যামেরার সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জোরে এমন এক অ্যালার্ম সেট করা হয়েছে, যাতে কোনও জন্তু লাইনের কাছে এলেই বনদপ্তরে খবর যাবে। একই সঙ্গে সেই জন্তুর অবস্থান জানতে পারবেন রেলকর্মীরাও। আর সেইসময় যদি ওই অঞ্চলে কোনও ট্রেন থাকে, তাহলে অবিলম্বে সেই ট্রেনের গতি কমানো হবে। ক্যামেরার মারফত জন্তুটি লাইন পেরিয়েছে কি না সেটাও বোঝা যাবে। তারপর নির্দিষ্ট গতিতে রেলগাড়ি ওই স্থান অতিক্রম করবে। ইতিমধ্যেই এই ব্যবস্থার দরুণ ৪০০ দুর্ঘটনা বাঁচানো গিয়েছে বলে দাবি বনদপ্তরের। স্রেফ হাতি নয়, যে কোনও জন্তুই যেন রেলে কাটা না পড়ে তা নিশ্চিত করছে এই ব্যবস্থা। যা কাজে লাগিয়ে আগামীদিনে হাতির রেল দুর্ঘটনা সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করার কথা ভেবেছে বনদপ্তর।