দূর থেকে দেখলে মনে হবে বাঁদর। টিয়া পাখি কিংবা হাঁসও মনে হতে পারে। কিন্তু এগুলো না উড়তে পারে না লাফাতে পারে। পারবেই বা কি করে! আসলে তো এগুলো ফুল। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। কোথায় পাওয়া যায় এমন অদ্ভুত ফুল? আসুন শুনে নিই।
ছদ্মবেশ ধরতে জানে ফুলও। হ্যাঁ, তা ছাড়া আর কী বলবেন একে! দেখে মনে হবে যেন ছোট্ট পাখি। কিংবা অন্য কোনও পশুর মুখও মনে হতে পারে। কিন্তু বংশপরিচয়ে তা আদৌ পাখি বা কোনও পশু নয়, বরং একরকমের ফুল। এ কথা জানার পরেই তাজ্জব হতে হয়।
আরও শুনুন: Bharat: ইন্ডিয়াই ভারত! সংবিধানের প্রসঙ্গ টেনে বিরোধীদের একহাত নিলেন জয়শঙ্কর
তালিকায় প্রথমেই রয়েছে, এক বিশেষ ধরনের অর্কিড ফুল। বিজ্ঞানসম্মত নাম ফেলেইনোপসিস। তবে এই নামে এই ফুলকে কেউ চেনে না বললেই চলে। সকলের কাছে এই ফুল মথ অর্কিড নামে পরিচিত। কেন জানেন? ফুলটিকে দেখতে হুবহু মথের মতো। মূলত অস্ট্রেলিয়া, চিন সহ ভারতের কিছু জায়গায় এই বিশেষ ফুলের দেখা মেলে। আকারেও বেশ বড়সর এই ফুল। ধবধবে সাদা বর্ণের এই অর্কিড দেখলে যে কেউ মথ ভেবে ভুল করতে পারেন। তালিকায় থাকা এর পরের ফুলটি আরও অদ্ভুত। টিয়াপাখির মতো সবুজ রং এই ফুলের পাপড়ির। সেই পাপড়িগুলির সজ্জা এমনই, দেখে মনে হয় যেন যেন পাখির পালক আর লেজ। আর গাছের সঙ্গে ফুলটিকে ধরে রেখেছে যে বৃন্ত, সেটি মনে পড়িয়ে দেয় পাখির ঠোঁট সহ মাথার কথা। ঠোঁট সদৃশ বৃন্ত আর ডানার মতো পালকে দেখা যায় অল্প অল্প লালচে বেগুনি আভাও। সব মিলিয়ে রূপের অন্ত নেই এই আশ্চর্য ফুলটির। আর যদি একসঙ্গে একগুচ্ছ ফুল ফোটে? তবে তো কথাই নেই। দূর থেকে গাছের দিকে তাকালে মনে হয় যেন একঝাঁক পাখিই উড়ে এসে বসেছে গাছের ডালে। না, ঠিক বসেনি। বরং শূন্যেই থমকে গিয়েছে তারা। কেবল ঠোঁট জুড়ে গিয়েছে গাছের ডালে, যেন মধু খাওয়ার জন্য। এই ফুলের নাম ‘প্যারোট ফ্লাওয়ার’। বালিয়াড়ি এলাকার উষ্ণ আবহাওয়ায়, যেখানে পর্যাপ্ত সূর্যালোক মেলে সারাদিন, সেখানেই এই গাছের ছড়াছড়ি। তালিকায় থাকা পরের ফুলটি অবশ্য কোনও পাখির মতো নয়। বরং তা দেখলে মনে হবে কোনও বাঁদর তাকিয়ে আছে। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। দেখার সুবাদে, এর নামও মাঙ্কি ফ্লাওয়ার। তবে এই ফুলের বিজ্ঞানসম্মত নাম ড্রাকুলা সিমিয়া। আকারে তেমন বড় না হলেও, ফুলটি বেশ আকর্ষনীয় তা বলাই বাহুল্য।
আরও শুনুন: Bharat: ‘ইন্ডিয়া’ নামের দাবিদার কি পাকিস্তান? ভারতের নামবদলের জল্পনার মাঝেই নয়া রটনা
এখানেই শেষ নয়। তালিকায় রয়েছে বকের মতো দেখতে এক ফুলও। এই ফুলের রঙও সাদা। তবে পাপড়ি আর বৃন্তের অবস্থান এমনভাবে রয়েছে, যা দেখলে বক মনে হতে বাধ্য। এই ফুল মূলত রাশিয়া, চিন কিংবা কোরিয়ার মতো দেশে চোখে পড়ে। এটিও এক বিশেষ ধরনের অর্কিড। তবে এই ফুল দেখতে এতটাই সুন্দর, যে কারও নজর কাড়তে বাধ্য। এরপর বলতে হয় ‘ফ্লাইং ডাক’-এর কথা। নাহ না, উড়ন্ত হাঁসের কথা বলছি না। এও এক বিশেষ ধরনের ফুল। তবে দেখে বোঝার উপায় নেই। বেগুনি আত সবুজ মেশোনা এই ফুলের রঙ। কিন্তু পাপড়িগুলো এমনভাবে সাজানো, দেখে মনে হবে কোনও হাঁস উড়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, হাঁসের যেমন একটু চওড়া ঠোঁট হয়, এই ফুলেরও আকারও তেমনই। বিজ্ঞানসম্মত নাম সেলিয়ানা মেজোর। এই ফুলও পাওয়া যায় অস্ট্রেলিয়াতেই। তবে বর্তমানে বিভিন্ন ফুল প্রদর্শনীতে এইসব বিশেষ ফুল রাখা হয়। তবে এইসব ফুলের এমন আকার হওয়ার নেপথ্যে বিশেষ কারনও রয়েছে। উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের মতে, মাটি থেকে জল, পলি আর পুষ্টিকর উপাদান সহজেই সংগ্রহ করতে পারে এইসব গাছ। আর তা সঞ্চয় করে রেখে নিজের কাজেও লাগাতে পারে প্রয়োজনমতো। অস্ট্রেলিয়ান নেটিভ প্ল্যান্টস সোসাইটির মতে, কেবল নিজের জন্য পুষ্টি সংগ্রহই নয়, মানুষেরও উপকারে লাগে এর মধ্যে কিছু গাছ। ওই অঞ্চলের আদিবাসীরা এইসব গাছের রস দিয়ে চোখের সংক্রমণের চিকিৎসা করে বলে জানিয়েছে ওই সংস্থা। তাই স্রেফ রূপের খাতিরে নয়, গুনের জোরেও এইসব ফুল বেশ ব্যতিক্রমী।