নারীকে দখলের জন্য, ভূমি দখলের জন্য, দেশে দেশে কালে কালে যুদ্ধ বেধেছে। যুদ্ধ বেধেছে আত্মরক্ষা কিংবা আত্মসম্মান রক্ষার তাগিদেও। কিন্তু পেস্ট্রির মতো একটি তুচ্ছ খাবার জিনিসের কারণে যুদ্ধ? হ্যাঁ, ঘটেছিল এমন ঘটনাই। আসুন, শুনে নেওয়া যাক সে গল্প।
নামীদামি দোকানে সাজানো সারি সারি পেস্ট্রি দেখে কার না জিভে জল আসে! কোনোটা চকোলেট ফ্লেভার, কোনোটা ভ্যানিলা, কোনোটা আবার বাটারস্কচ… দর্শনে আর ঘ্রাণেই বুঝি অর্ধভোজন হয়ে যায়। কিন্তু এহেন চোখজুড়ানো আর মনভোলানো রূপের আড়ালে কী আছে তা কি জানেন? জানেন কি, যে, এই লোভনীয় পেস্ট্রিই আদতে দায়ী ছিল একটা গোটা যুদ্ধ বাধিয়ে ফেলার জন্য? সে গল্পটা তাহলে খুলেই বলা যাক।
আরও শুনুন: শাহজাহান একা নন, ‘তাজমহল’ বানিয়েছিলেন আরও অনেকেই! কোথায় কোথায় রয়েছে সেগুলি?
সময়টা ১৮৩০ সাল নাগাদ। স্বাধীনতা পেয়েছে মেক্সিকো। সে দেশের নয়া প্রজাতন্ত্র সবে শাসনভার হাতে নিয়েছে। দেশ জুড়ে বেশ ছন্নছাড়া অবস্থা। ছোট বড় ঝুটঝামেলা, হাতাহাতি, লুটপাট লেগেই আছে। সব মিলিয়ে অরাজক অবস্থা। এদিকে শাসনকার্যে সাধারণ মানুষের কোনও প্রতিনিধি নেই। ফলে তাদের সম্পত্তি লুটপাট হলে অভিযোগ জানাবার কিংবা ক্ষতিপূরণ দাবি করার সুযোগও সেভাবে নেই। ভিনদেশি মানুষদের অবস্থা আরও খারাপ। তারা ক্ষয়ক্ষতির কোনও সুরাহা এ দেশে করতে না পেরে তাদের নিজেদের দেশের সরকারের দ্বারস্থ হয়। আর ঠিক সেই কাজটাই করেছিলেন ফ্রান্সের এক ব্যবসায়ী, মসিয়েঁ রেমন্টেল।
ঠিক কী করেছিলেন তিনি?
আরও শুনুন: হার মানেননি রক্ষণশীলতার কাছে, সৌদি আরবের প্রথম মেয়ে হিসেবে এভারেস্ট জয় তরুণীর
আসলে মেক্সিকোতে একটি পেস্ট্রির দোকান ছিল ওই ব্যক্তির। ১৮৩২ সালে ওইরকম এক বিক্ষোভের সময় তাঁর দোকানটি লুঠ করে ভাঙচুর করে জনতা। যথারীতি, ওই ব্যক্তি মেক্সিকোর প্রশাসনের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করলেন। শোনা যায়, স্থানীয় মুদ্রায় যে দোকানের অর্থমূল্য ছিল ১০০০ পেসো, তার দাম হিসেবে তিনি চেয়েছিলেন ৬০ হাজার পেসো। যাকে বলে ঝোপ বুঝে কোপ মারা। কিন্তু মেক্সিকো সরকার তাঁকে পাত্তাই দেয়নি। তবে ওই ব্যবসায়ী কিন্তু হাল ছাড়ার পাত্র ছিলেন না। তিনি এবার পৌঁছে যান নিজের দেশ ফ্রান্সে। আর সেখানে গিয়েই নিজের সম্পত্তি নষ্টের অভিযোগ জানান তিনি, জানান মেক্সিকোর প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তার কথাও।
আরও শুনুন: ‘জঙ্গল ছোড়ব নাহি’… হাতে তির-ধনুক, অরণ্য রক্ষায় একজোট প্রমীলাবাহিনী
ফ্রান্সের রাজা লুই ফিলিপ এমনিই মেক্সিকোর উপর চটে ছিলেন। মেক্সিকোর সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক বজায় রাখতে গিয়ে চড়া হারে কর দিতে হত ফ্রান্সকে। এই সুযোগে রেমন্টেল-এর মতো সব ব্যবসায়ীদের অভিযোগ জড়ো করে মেক্সিকোর কাছে ৬ লক্ষ পেসো ক্ষতিপূরণ দাবি করলেন তিনি। মেক্সিকো সেই দাবি নাকচ করতেই সোজা সে দেশের উপর আক্রমণ হানে ফ্রান্স। মেক্সিকোর বন্দর দখলের লক্ষ্যে এগোয় ফরাসি নৌবহর। ১৮৩৮ সালেই শুরু হয় যায় ফ্রান্স ও মেক্সিকোর যুদ্ধ।
শেষমেশ উভয়ের মধ্যে মধ্যস্থতা করে আমেরিকা। পরের বছর, ১৮৩৯ সালে দুই দেশের মধ্যে শান্তি চুক্তি হলে সেনা প্রত্যাহার করে ফ্রান্স। তবে হ্যাঁ, সেই পেস্ট্রির দোকানের মালিক সহ অন্যান্য ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে চাওয়া ৬ লক্ষ পেসো কিন্তু কড়ায় গন্ডায় মিতিয়ে দিতে হয় মেক্সিকোকে। আর ইতিহাসে ‘পেস্ট্রি যুদ্ধ’ নামেই পরিচিত হয়ে যায় এক বছর ব্যাপী এই যুদ্ধ।