আধুনিক সভ্যতা যত উন্নত হয়েছে, পৃথিবীর প্রতি কোণে পা ফেলেছে মানুষ। উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ থেকে সুগভীর মহাসাগরের তলদেশ, কোথায় না পৌঁছেছে সে! যা কিছু বিস্ময় জাগায়, ছুঁয়েছেনে দেখেছে সেসব কিছু। কিন্তু তারপরেও, কিছু বিস্ময় তো অধরাই থেকে যায়। থেকে যায় মানুষের চির আকাঙ্ক্ষার বিন্দু হয়ে। তেমনই এক বিস্ময়ের নাম কৈলাস পর্বত। আসুন, শুনে নেওয়া যাক দেবভূমি কৈলাসের কাহিনি।
কৈলাস পর্বতে নাকি বাস করেন স্বয়ং দেবাদিদেব মহাদেব। তাই কৈলাস পর্বতশৃঙ্গ, তথা তিব্বতের গং রিনপোচে ভক্তদের কাছে এক পবিত্র তীর্থ। দুর্গম হওয়া সত্ত্বেও প্রতি বছরই কৈলাসের উদ্দেশে পাড়ি জমায় তীর্থযাত্রীদের একাধিক দল। আর তাঁদের মুখে মুখেই ফেরে কৈলাসকে ঘিরে একাধিক জনশ্রুতি। তার কতটুকু সত্যি, আর কতখানি গড়ে উঠেছে ভক্তির আবেশে, সেই সীমারেখা অবশ্য টানা মুশকিল।
আরও শুনুন: ১৩০০ বছর ধরে ঝুলন্ত কৃষ্ণের ননীর তাল! কোথায় দেখা মিলবে তার?
বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট একাধিকবার জয় করা সম্ভব হলেও, কৈলাস কিন্তু আজও মানুষের কাছে অধরা। পিরামিডের মতো এর চার পাশই খাড়া এবং প্রতিসম। তার উপরে বরফে আবৃত। সব মিলিয়ে এই পর্বতশৃঙ্গ জয় করা যে প্রায় অসাধ্য, এ কথা মেনে নিয়েছেন অনেক দুঁদে পর্বতারোহীও। আর সেই কারণেই, কৈলাসের গায়ে পাকাপাকিভাবেই জুড়ে গিয়েছে দেবভূমির তকমা। স্থানীয়দের বিশ্বাস, যে মানুষের মনে কোনও পাপ নেই, একমাত্র সে-ই কৈলাসের চূড়ায় ওঠার অধিকারী। আর তার জন্য নাকি তার ওই বরফে ঢাকা পাহাড়ে চড়ারও দরকার নেই। কারণ নিষ্পাপ মানুষ আসলে পাখি হয়ে যায়, আর ডানা মেলেই সে উড়ে যাবে দেবতাদের বাসস্থানের উদ্দেশে, এমনই বিশ্বাসে আস্থা রাখেন তাঁরা।
কৈলাস যে দেবভূমি, সেই ধারণাকে আরও জোরালো মাত্রা দিয়েছে কৈলাসের পাদদেশে অবস্থিত দুটি স্বচ্ছ জলের সরোবর। প্রায় ১৫ হাজার ফুট উঁচুতে অবস্থিত মানস সরোবরের আকার সূর্যের মতো, আর রাক্ষস তালকে দেখে মনে হয় আধখানা চাঁদ। কৈলাস অভিযানের পথে বেরিয়ে যেসব যাত্রী মানস সরোবরের পাশে রাত কাটিয়েছেন, রাতের অন্ধকার আকাশে প্রদীপের মতো দুটি আলো দেখা যায় বলে দাবি করেছেন তাঁদের অনেকেই। একে অন্যকে অনুসরণ করে চলে সেই দুই প্রদীপ। আবার ব্রাহ্মমুহূর্তে মানস সরোবর থেকে জল ছেটানোর আওয়াজ, গয়নার ঝংকার শোনা গিয়েছে বলেও দাবি করেছেন কেউ কেউ। ভক্তরা মনে করেন, প্রতি সকালে এই মানস সরোবরে স্নান করতে আসেন পুরাণের সপ্তর্ষিরা।
আরও শুনুন: মাধ্যাকর্ষণ থেকে ছানি অপারেশন – ভারতীয় বিজ্ঞানীদের এইসব আবিষ্কার বিস্মিত করেছে দুনিয়াকে
বিশ্বাস আর যুক্তির টানাপোড়েন যেমন কৈলাস পর্বতের রহস্য ভেদ করতে পারেনি, তেমনই রহস্যের জাল ছুঁতে পারেনি কৈলাসের অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকেও। বর্তমানে সরকারিভাবেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে পর্বতারোহীদের কৈলাস অভিযান। অতএব ধরেই নেওয়া যায়, কৈলাসের অপার্থিব সৌন্দর্য আর রহস্যের ভাণ্ডার রয়ে যাবে মানুষের নাগালের বাইরেই।