কুম্ভমেলায় আইআইটি পাস সাধু! রীতিমতো ট্রেন্ডিং। সোশাল মিডিয়ায় চর্চা চলছেই। তবে ওই সাধু একা নন। আইআইটি থেকে পড়াশোনার পর, কোটি টাকা বেতনের চাকরি পেয়েও, সাধনার জীবন বেছে নিয়েছেন অনেকেই। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
আইআইটি পাসআউট! ব্যাপারটা অনেকের কাছেই স্বপ্নের মতো। দেশের অন্যতম নামী এই প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পেতে মরীয়া হয়ে চেষ্টা করেন তাঁরা। ধারণা, এখান থেকে পড়াশোনা করলেই মিলবে চাকরি, মোটা টাকার। সেই লোভে সবাই যেন ছুটছে। কিন্তু আইআইটি থেকে পড়েছেন, মোটা টাকার চাকরি পেয়েছেন, তবু সব ছেড়ে সাধনার পথ বেছে নিয়েছেন, এমন কারও কথা শুনেছেন?
আরো শুনুন:
সুন্দরী সাধ্বী থেকে ‘ইঞ্জিনিয়ার বাবা’, কুম্ভে শামিল আধুনিকরা, চরিত্র বদলাচ্ছে মহামিলনের?
কুম্ভের আবহে উত্তর হবে, হ্যাঁ। কারণ, এমনই এক সাধু এই মুহূর্তে ট্রেন্ডিং। আইআইটি থেকে পড়াশোনা করেও তিনি ভোগবিলাসের চাকরি জীবন বেছে নেননি। ঘর সংসার ছেড়ে বেরিয়েছেন অজানার উদ্দেশে। সন্ন্যাস নিয়েছেন। বর্তমান ঠিকানা কুম্ভমেলা। তাঁর কথা, তাঁর জীবন দর্শন, অবাক করেছে সকলকে। সবমিলিয়ে আইআইটি বোম্বে থেকে এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করা অভয় সিং-কে দেখার জন্য ভিড় জমছে কুম্ভে। পালটা বিতর্কও জমছে। কেউ কেউ কটাক্ষ করেছেন, বলেছেন নামী প্রতিষ্ঠানের একটা মূল্যবান সিট নষ্ট হল। তবে সেসব নিয়ে মাথাব্যথা নেই অভয় সিং তথা মাসানি গোরখের। তাঁর কথায়, এটাই আসল জীবন। তবে তিনি একাই যে এমন ব্যতিক্রম তা নয়। কুম্ভমেলাতেই দেখা মিলবে আইআইটি দিল্লির আচার্য প্রশান্তর। ইনিও নামী প্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশোনা করার সৌজন্যে দামী চাকরির সুখ ভোগ করতেই পারতেন। করেননি, বরং অন্য সুখের খোঁজে পাড়ি দিয়েছেন। এঁদের ছাড়াও আইআইটি থেকে পাস করা সাধু রয়েছেন।
আরও শুনুন:
মহাকুম্ভের শ্রবণ কুমার! মৃতা মাকে মহাস্নান উপহার সন্তানের, কুম্ভে কেবলই দৃশ্যের জন্ম
প্রথমেই যার নাম আসবে তিনি জৈন সন্ত, নাম অভিরাল জৈন। এই সম্প্রদায়ের সাধন পথ অত্যন্ত কঠিন। খাদ্যাভ্যাস থেকে পোশাক, সবেতেই মানতে হয় কঠোর নিয়ম। তবে সেই জীবনেই নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন অভিরাল। অথচ ইনি পড়াশোনা করেছেন আইআইটি বেনারস (বিএইচইউ) থেকে। পড়শোনা শেষ করে পেয়েছিলেন কোটি টাকা বেতনের চাকরি, তাও আবার আমেরিকায়। বেশ কিছুদিন সেই চাকরি করেওছেন। কিন্তু ২০১৯ সালে সব ছেড়ে সাধনার পথে নিজেকে নিয়োজিত করেন। একইভাবে আইআইটি বোম্বে থেকে পড়াশোনা করেছিলেন সংকেত পারেখ। চাকরিও পেয়েছিলেন আমেরিকায়। কিন্তু সব ছেড়ে বেরিয়ে আসেন স্বেচ্ছায়। আচার্য যুগ ভূষণ সুরির তত্ত্বাবধানে নিজের জীবনের আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে ফেলেন। জৈন সাধু হিসেবেই নিজেকে খুঁজে পান পারেখ। আচার্য প্রশান্তের কথাও বলা যেতেই পারে। স্রেফ আইআইটি থেকে পড়াশোনা নয়, পরবর্তীতে আইআইএম থেকে এমবিএ করেছিলেন এই মহন্ত। এমনকি আইএএস পরীক্ষাতেও উত্তীর্ণ হন। এমন মানুষের জীবন একেবারেই অন্যরকম হতে পারত। কিন্তু না, ইনিও সাধনার পথ বেছে নেন। বর্তমানে অনুগামীর সংখ্যা অজস্র, লিখেছেন একাধিক বই। চেনা মুখই বটে। তবে পেশাদার ইঞ্জিনিয়র বা সরকারি আমলা হিসেবে নয়, সাধু হিসেবে। এখানেই শেষ নয়। আইআইটি কানপুর থেকে পড়াশোনা করেছেন স্বামী বিদ্যানাথ নন্দ। তারপর উচ্চশিক্ষার জন্য চলে যান ক্যালিফোরনিয়ায়, অঙ্কে পিএইচডি করেন। দীর্ঘদিন অধ্যাপনাও করেছেন। তবে একটা সময়ের পর সব ছেড়ে চলে আসেন রামকৃষ্ণ মিশনে। পরের জীবনটা সাধু হিসেবে কাটাচ্ছেন। তালিকায় রয়েছে গৌরাঙ্গ দাস। ইনি ইসকনের সঙ্গে যুক্ত। শুধু দেশ নয়, গোটা বিশ্বে মোটিভেসনাল স্পিকার হিসেবে পরিচিত। তবে এই গৌরাঙ্গ দাসও আইআইটি বোম্বে থেকে ক্যেমিক্যাল ইঞ্জিনয়র হিসেবে স্নাতক। নেটদুনিয়ার অন্যতম পরিচিত মুখ স্বামী মুকুন্দানন্দও আইআইটি মাদ্রাজ থেকে পড়াশোনা করেছেন। বর্তমানে যোগশিক্ষায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। সাধুর জীবন কাটানোর পাশাপাশি অন্যকে সঠিক উপদেশও দেন ইনি। তালিকায় আরও অনেক নামী, অনামী সাধু বা মহন্ত রয়েছেন যারা উচ্চশিক্ষিত। স্রেফ আইআইটি নয়, দেশ বিদেশে আরও অনেক নামী দামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশোনা করেছেন। তবে বর্তমানে এঁরা সকলেই সাধনার পথে নিজেদের উতসর্গ করেছেন।