লোকসভার ‘সেমিফাইনালে’ অব্যাহত মোদি ম্যাজিক। গোবলয়ের তিন রাজ্যে বিরাট জয়ে চওড়া করেছে বিজেপি সমর্থকদের হাসি। সকলের মুখে ফিরে এসেছে ‘মোদির গ্যারান্টি’ স্লোগান। স্রোতে গা ভাসিয়ে মোদি বন্দনায় ভরিয়েছে দেশের নামীদামি সব মিডিয়া। কিন্তু দেশের বাইরের মিডিয়া কীভাবে দেখছে মোদির এই সাফল্য? আসুন শুনে নিই।
মোদিময় গোবলয়। রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়ে বিজেপির জয়ে, এমনই শিরোনাম দেখা গিয়েছে দেশের অধিকাংশ খবরের কাগজে। বাদ যায়নি অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমও। সর্বত্রই ফুটে উঠেছে মোদি ম্যাজিকের খতিয়ান। তবে স্রেফ দেশের মাটি নয়, মোদি ঝড়ের প্রভাব পড়েছে বিদেশেও। তিন রাজ্যে বিজেপির জয়ের খবর ছেপেছে বেশ কিছু পরিচিত বিদেশি কাগজও।
আরও শুনুন: ‘মোদির গ্যারান্টি’-ই ম্যাজিক, প্রধানমন্ত্রীর কথাতেই বিশ্বাস মানুষের, স্বীকৃতি বিজেপি নেতাদের
মধ্যপ্রদেশে ক্ষমতা ধরে রাখা, বাকি দুই রাজ্যে হাত শিবিরকে উপড়ে ক্ষমতায় আসা। গোবলয়ে জয়ের হ্যাটট্রিক করে চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের শঙ্খ বাজিয়েছে বিজেপি। মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে একাধিক বুথ ফেরত সমীক্ষা। যেখানে ভোটের আগে, দুর্নীতি সহ কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে নিজেদের মতো ব্যবহার করার অভিযোগে বারবার সরব হয়েছিল বিরোধীরা, সেখানে সদর্পে পদ্ম ফুটিয়েছে গেরুয়াবাহিনী। নেপথ্যে কারণ খুঁজতে গিয়ে, মূলত মোদি ম্যাজিক-কেই দায়ী করেছে একাধিক দেশি মিডিয়া। বলা বাহুল্য, বিদেশি সংবাদ মাধ্যমগুলিরও প্রায় একই বক্তব্য। প্রথমেই বলতে হয় নিউ ইয়র্ক টাইমসের কথা। জনপ্রিয় এই বিদেশি সংবাদ মাধ্যমের দাবি, গোবলয়ে বিজেপি জয়ের একমাত্র কারণ মোদি। সেখানে সাফ উল্লেখ করা হয়েছে, কীভাবে নির্বাচনী প্রচারে মোদির মুখ ব্যবহার করা হয়েছে সেই কথা। ভোটের ময়দানে যেই থাকুন না কেন, প্রচারের মুখ হিসেবে দেখানো হয়েছে স্রেফ মোদিকেই। আর এতেই ম্যাজিকের মতো কাজ হয়েছে বলে দাবি নিউ ইয়র্ক টাইমসের। শুধু তাই নয়, প্রতিবেদনে রামমন্দিরের প্রসঙ্গও রয়েছে। যা ২৪ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে আরও বেশি মাইলেজ দেবে। সাম্প্রতিক এই জয়ও লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার হবে বলে মনে করছে নিউ ইয়র্ক টাইমস। অন্যদিকে ব্লামবার্গ-এর প্রতিবেদনে মোদির জনপ্রিয়তার কথা উঠে এসেছে। কিছুদিন আগেই প্রকাশ্যে এসেছিল বিশ্বব্যাপি মোদির জনপ্রিয়তার একটি সমীক্ষা। সেখানে মোদিকেই গোটা বিশ্বের সবথেকে জনপ্রিয় নেতা হিসেবে দেখা গিয়েছিল। ব্লামবার্গের প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে সেই প্রসঙ্গ। তবে এক্ষেত্রে গোটা বিশ্বের নয়, দেশের সব প্রায় রাজ্যেই মোদি ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় সে কথাই উল্লেখ করেছে ওই সংবাদ মাধ্যম। একইসঙ্গে এই সংবাদ মাধ্যমও সাফ দাবি করেছে, আগামীদিনেও মোদির ক্ষমতায় থাকা অনিবার্য।
আরও শুনুন: সেলফি তুলতে হবে প্রধানমন্ত্রীর ছবির সামনেই, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেলফি জোন গড়ার নির্দেশ UGC-র
সংবাদ মাধ্যমের পাশাপাশি এই প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছে বিদেশি সংবাদ সংস্থাও। রয়টার্সের দাবি অনুযায়ী, আগামী বছরও নির্বাচনে একছত্র আধিপত্য থাকবে মোদিরই। যদিও ইন্ডিয়া জোটের প্রসঙ্গও টেনেছে এই সংবাদ সংস্থা। লোকসভা নির্বাচনে সমস্ত বিরোধীদের একত্র লড়াই বিজেপির জন্য চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে উঠতে পারে। সংবাদ সংস্থা এএফপি আবার মোদির জয়ের প্রসঙ্গে রাহুল গান্ধীকে কটাক্ষ করেছে। তাঁদের দাবি, নির্বাচনী প্রচারে দলের উর্ধে ব্যক্তি মোদিকে আক্রমণ করতেই ব্যস্ত ছিলেন রাহুল। যার ফল এই হার। যদিও কিছু কিছু জনপ্রিয় বিদেশি মিডিয়া রাজ্যের এই ফলাফলের সঙ্গে লোকসভা নির্বাচনকে এক করতে নারাজ। তাঁরা মনে করছেন, যেমনটা ভাবা হচ্ছে ঠিক সেরকম নাও হতে পারে। তাঁদের দাবি, এই ফলাফল বিজেপির শক্তি বাড়ালেও লোকসভা নির্বাচনে বিশেষ কাজে দেবে না। বরং বিরোধী জোট ঠিকমতো লড়াই করলে ফলাফল অন্যরকম হতেই পারে। তবু সামগ্রিক ভাবে দেশ বিদেশের মিডিয়ায় বারবার উঠে এসেছে ২৪ লোকসভায় ফের মোদির জয়ের কথাই। আর সেই জয়ের নেপথ্যে প্রধান কারণ হিসেবে জ্বলজ্বল করছে গোবলয়ের তিন রাজ্যে বিজেপির এই বিরাট জয়।